ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নাগরীর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ২৮ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নাগরীর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক : বহুল আলোচিত উত্তরা ষড়যন্ত্রের অন্যতম সংগঠক ছিলেন গ্রেপ্তারকৃত কবি, সুরকার, গায়ক ও নাট্যকার শাহাবুদ্দিন নাগরী।

এছাড়া সরকারি চাকরিতে থাকাকালে শোবিজের নামে নারীদের সঙ্গে একান্তে সময় দেওয়া, ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে টাকা আদায়, কাস্টমস কর্তৃক মামলা এবং গোপনে নানা পন্থায় বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক বনে যান তিনি। বেপরোয়া জীবনযাপনের কারণেই তাকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে তদন্ত হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে নিউ মার্কেট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিকুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা শুধু ব্যবসায়ী হত্যা মামলার তদন্ত করেছি। নাগরীর বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ থাকলে তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) করবে। এজন্য মামলাটি ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তথ্য আছে, কবি শাহাবুদ্দিন নাগরী ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ২০০৬ সালের ২৪ নভেম্বর বিএনপি নেতা মাহমুদুর রহমানসহ অন্যদের সঙ্গে তিনিও উত্তরায় বৈঠকের ব্যাপারে উদ্যোগ নেন। সে সময় তার নাম চাওড় করে প্রচার হয়। কেননা তিনি বিএনপি-ঘনিষ্ঠ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে প্রচার আছে। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কাস্টম কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এ সুযোগে অবৈধ উপায়ে অঢেল সম্পত্তি, টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেন। চাকরি জীবনে বেপরোয়াও ছিলেন। কাউকেই তিনি তোয়াক্কা করতেন না। বিএনপির রাজনীতি ও আদর্শ ধারণ করায় চারদলীয় জোট সরকারের আমলে হাওয়া ভবনে ছিল তার অবাধ যাতায়াত। এমনকি বর্তমান সরকারের সময় চাকরিতে থাকাকালীন বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন। বড় বড় ব্যবসায়ীদের জিম্মি করতেন। তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনে অর্থায়ন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশপাশি ওই সময় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের জন্যও চেষ্টা করছিলেন এ গায়ক। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখা থেকে সর্বোচ্চ দরদাতাকে গাড়ি সরবরাহ না করে অন্যজনকে সরবরাহ করেন তিনি। এ অভিযোগে নাগরীর বিরুদ্ধে সে সময় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছিল। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) বহু অভিযোগ রয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে এ ব্যাপারে কথা হয় ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার প্রধান মো. মাসুদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমিও শুনেছি মামলাটি ডিবিতে এসেছে। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগের পর কোনো অভিযোগের ভিত্তি থাকলে সেক্ষেত্রে তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। এ মুহূর্তে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম হত্যা মামলার রিমান্ডে নাগরী পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, ‘গোপনে তিনি নাটক-টেলিফিল্মে বিনিয়োগ করেন। উঠতি মডেল, অভিনেত্রীদের নিয়ে নাটক বানানো, মোটা অঙ্কের টাকাও দেন তিনি। তরুণীদেরই তিনি কাজে সুযোগ দেন বেশি। বিশেষ করে যে তরুণী তার সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে রাজি হয়। সর্বশেষ নুরানী আক্তার সুমীর সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেন নাগরী। সুমীকে বিয়ে করে সংসার বাঁধারও স্বপ্ন দেখেন বলেও প্রচার আছে। কিন্তু তাদের সামনে বাধা ছিল সুমীর পাঁচ নম্বর স্বামী নূরুল ইসলাম। এ কারণেই নূরুলকে সুমী ও নাগরী মিলে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

উল্লেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল এলিফ্যান্ট রোডের ১৭০/১৭১ নম্বর ডম-ইনো অ্যাপার্টমেন্টের পাঁচতলা থেকে ব্যবসায়ী নূরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৪ এপ্রিল নূরুল ইসলামের বোন শাহানা রহমান কাজল বাদী হয়ে সুমী, শাহাবুদ্দিন নাগরী, গাড়িচালক সেলিমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ নাগরী ও সুমীকে গ্রেপ্তার করে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ এপ্রিল ২০১৭/মাকসুদ/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়