ইলেক্ট্রিশিয়ানের ছদ্মবেশে শিশু অপহরণকারী!
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাসায় টিভি-ফ্রিজের কোনো কাজ আছে কি না তা জানতে বাসায় ঢোকেন ইলেক্ট্রিশিয়ান সুমন (৩১)। কাজ না থাকলেও পূর্বপরিচিত হওয়ায় তাকে ঘরে বসতে দেন গৃহকর্ত্রী রিতু ইসলাম। সেখানেই ঘুমাচ্ছিল তার তিন মাসের কন্যাশিশু শিন। শিনের কাপড় আনতে অন্য কক্ষে যান রিতু। এ সময়েই শিনকে অপহরণ করে সুমন।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে কেরানীগঞ্জের গোলাম বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে শিশু শিনকে উদ্ধারসহ অপহরণকারী সুমনকে আটক করে র্যাব-১০।
জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর জানান, মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে শিনকে অপহরণ করে সুমন। যখন শিনের মা তার কাপড় আনতে অন্য কক্ষে যান তখন অপহরণের সুযোগ পায় সুমন। রিতু অন্য কক্ষে ঢুকলেই বাহির থেকে দরজা আটকে দেয় সে। পরে শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ভেতরে থাকা রিতুর কান্না ও চিৎকার শুনে পরে প্রতিবেশীরা এসে দরজা খুলে দিলে বুঝতে পারেন, সুমন তার মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে।
শিনের বাবা সাখাওয়াত হোসেন র্যাব মিডিয়া সেন্টারে রাইজিংবিডিকে বলেন, সুমনের সঙ্গে তার সাত থেকে আট মাস আগে আলাপ হয়। মূলত বাসার ইলেক্ট্রনিক পণ্যে ত্রুটি সারানোর জন্য তাকে ডাকা হতো। এজন্য তার পরিবারের সঙ্গে একটি সখ্যও তৈরি হয়।
শিনের মা রিতু ইসলাম বলেন, ওই দিন সুমন বাসায় এসে জানতে চায়, বাসার টিভি বা ফ্রিজের কোনো কাজ আছে কি না। কোনো কাজ না থাকায় বলি, নেই। যেহেতু সে পূর্বপরিচিত সেহেতু ভদ্রতার খাতিরে তাকে ঘরে বসতে বলি। সুমন ড্রইং রুমে বসলে আমি শিনের কাপড় আনতে অন্য রুমে যাই। সেখানে ঢুকে যখন কপড় নিয়ে বের হব তখন বুঝতে পারি, দরজা বাহির থেকে কেউ আটকে দিয়েছে। অনেক ডাকাডাকি করার পর যখন ড্রইং রুম থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি, তখন বুঝতে পারি, সুমন হয়তো শিনকে নিয়ে গেছে। প্রতিবেশীরা আমার কান্না আর চিৎকার শুনে দরজা খুলে দেন। বসার ঘরে এসে দেখি শিন নেই।
শিনের বাবা সাখাওয়াত হোসেন ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শিন অপহৃত হওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা পর সুমন রিতুর ফোনে ফোন দেয়। বলে ‘আমি তোর মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছি, তাকে ফেরৎ পেতে চাইলে ২ লাখ টাকা দিতে হবে। প্রশাসনকে জানালে মেয়েকে পাবি না। তাকে মেরে ফেলব।’ রাতে ও পরদিন সকালেও ফোন দিয়ে সুমন টাকা দাবি করে।
জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, সাখাওয়াত-রিতু দম্পতি আমাদের কাছে এসে অভিযোগ করলে গতকাল দুপুর ২টা থেকে অভিযান শুরু করি। মুক্তিপণের টাকা পরিশোধের ফাঁদ পেতে রাত ৯টার দিকে সুমনকে আটক করা হয়। পরে সুমনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি দোতলা বাসায় অভিযান চালিয়ে শিনকে উদ্ধার করা হয়।
শিশু অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে সুমনের সংশ্লিষ্টতা কতটুকু তা জানতে আরো জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন বলে জানান র্যাব-১০ এর সিও।
র্যাবের দৃষ্টিতে এটি একটি সুপরিকল্পিত ও কৌশলী শিশু অপহরণ। এ কারণে অভিভাবকদের আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে র্যাব।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ মে ২০১৭/নূর/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন