ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন তদন্ত কর্মকর্তা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৭, ২৮ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন তদন্ত কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ১১ মাসের শিশু এবং মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করার ঘটনায় আদালতে ভুল স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার এসআই মারুফুল ইসলাম।

রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম খুরশীদ আলমের আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে শিশু ও মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যাখ্যা লিখিত আকারে দাখিল করে ক্ষমা চান তদন্ত কর্মকর্তা। আদালতের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা এ ব্যাখ্যা দিলেন।

লিখিত বক্তব্যে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি দায়েরের পর তদন্তভার গ্রহণ করে দেখা যায়, মামলার বাদী ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর জাকির হোসেন এবং সোহেল রানা নামে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকে। আরিফুর রহমান, রুবেল ও মামুনুর রশীদ ব্যতীত সকল আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে।

তিনি বলেন, এজাহারনামীয় যে সকল আসামির বাড়ি অন্য থানায় তাদের ঠিকানা যাচাইয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় অনুসন্ধান স্লিপ পাঠিয়ে নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই করা হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

মারুফুল ইসলাম বলেন, বাদীর ঠিকানা- ১৬৩ মধ্য পাইকপাড়া, আরিফুলের ঠিকানা - ১৭৮/বি মধ্য পাইকপাড়ায়। রুবেলের ঠিকানা- ১৭৩ মধ্য পাইকপাড়া বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। বাদী একজন বয়স্ক লোক। মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এটা বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। তদন্তকালে আরিফ ও রুবেলের খোঁজ করা সত্বেও তারা পলাতক থাকায় তাদের ব্যাপারে এরুপ কোনো তথ্য বাদী বা সাক্ষীরা প্রদান করেন নাই। যে কারণে বিভ্রান্তিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত বলে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, প্রশিক্ষণ শেষ করে চাকরিতে মাত্র কর্মজীবন শুরু করেছি। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা করে চাকরিতে বহাল থাকার সুযোগ দিতে আদালতের প্রতি অনুরোধ জানাই। সুযোগ দিলে মেধা, দক্ষতা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের সেবা করতে গতিশীল ও সোচ্চার হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, চাকরিজীবনের শুরুতে সামান্য অনিচ্ছাকৃত ভুলের ক্ষমা পেলে একটি জীবন ও একটি পরিবার ধ্বংসের হাত হতে রক্ষা পাবে। দেশ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করার জন্য প্রথমবারের মতো অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চান তদন্ত কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে তদন্ত কর্মকর্তা আজ লিখিত আকারে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আগামী ৩০ মে বাদীর ব্যাখ্যার জন্য দিন ধার্য রয়েছে। দুজনের ব্যাখ্যা পাওয়ার পর আদালত একটি আদেশ দেবেন বলে জানান তিনি।

অভিযোগপত্রে উল্লিখিত শিশু রুবেল (১১ মাস) রাজধানীর মিরপুর থানাধীন ৩৩৮ উত্তর পীরেরবাগের আবুল কাশেমের ছেলে। আবুল কাশেম নিজেও ওই মামলার আসামি।

অন্যদিকে অভিযোগপত্রে নাম থাকা মৃত আরিফুর রহমান (৪৫) রাজধানীর মিরপুর থানাধীন ১৭৮/বি মধ্য পাইকড়ার মৃত মাহবুব উল্লাহর ছেলে।

মামলার নথিতে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ২৬ জুন বাদী মিরপুর থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৪৬(৬)১৬। ধারা- দণ্ডবিধির ১৪৩/৪৪৭/৪২৭/৩২৩/৩৭৯ ও ৫০৬। মামলায় জ্ঞাত ২৩ জনসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়। এজাহারের ২৩ জন জ্ঞাত আসামির মধ্যে শিশু রুবেলের বাবার নাম ২ নম্বরে, মৃত ব্যক্তির নাম ১২ নম্বরে এবং শিশু রুবেলের নাম ২০ নম্বরে দেওয়া আছে। এজাহারে শিশু রুবেলের নামের সঙ্গে পিতার নাম আব্দুল কাশেম এবং বয়স ৩০ উল্লেখ আছে। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মারুফুল ইসলাম

তদন্ত শেষে চার্জশিটেও একই ক্রমিক নম্বরের তাদের আসামি হিসেবে রাখেন। এজাহারের জ্ঞাত ২৩ জনের বিরুদ্ধেই তিনি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

গত ২০ মার্চ আদালত ওই অভিযোগপত্র আমলে গ্রহণ করেন এবং অভিযোগপত্রে পলাতক দেখানো শিশু রুবেল এবং মৃত আরিফুর রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর গত ৩০ এপ্রিল শিশুকে আদালতে হাজির করেন তার পিতা।

বাদীর মামলায় অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালের ২৬ জুন ১৬৩, মধ্য পাইকপাড়ার বাদীর বাড়িতে আসামিরা অবৈধভাবে প্রবেশ করে বাড়ি দখলে নেওয়া চেষ্টা করে। আসামিরা বাদী ও তার পরিবারকে মারধর করে এবং মোবাইল ও স্বর্ণের চেন চুরি করে নিয়ে যায়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ মে ২০১৭/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়