ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার খসড়া আইনের সমালোচনা

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ৬ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার খসড়া আইনের সমালোচনা

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেকট্রিক এবং ইলেকট্রনিক্স সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক পণ্য হতে সৃষ্ট বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৭’ খসড়া আইনের তীব্র সমালোচনা করেছে। এই বিধিমালা বাস্তবায়ন হলে কম্পিউটার তথা তথ্যপ্রযুক্তিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতের ব্যবসায়ীদের প্রতি অবিচার করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন এসব খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।

প্রস্তাবিত ‘ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক পণ্য হতে সৃষ্ট বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৭’ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) উদ্যোগে বিসিএস ইনোভেশন সেন্টারে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা এই বিধিমালার সমালোচনা করেন। বিসিএস সভাপতি আলী আশফাকের সভাপতিত্বে সভায় মূল বিষয় উপস্থাপন করেন বিসিএসের মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার।

বিসিএস সভাপতি আলী আশফাক বলেন, কোনো বিধিমালা প্রণয়ন করতে হলে এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে অগ্রসর হতে হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর যে বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছে তাতে এককভাবে কম্পিউটার, তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স এবং ইলেকট্রিক্যাল ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। বিশেষ করে কম্পিউটার ব্যবসায়ীদের জন্য এই বিধিমালা এক ধরনের প্রহসন ব্যতীত আর কিছু নয়। একজনের দায়িত্ব কিছুতেই অন্যের ওপর চাপানো যাবেনা। বাংলাদেশে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি নতুন প্রসঙ্গ বিধায় এই বিষয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে সকলের মতামত প্রদানের জন্য যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন রয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা চাই ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা প্রণয়ন হোক। এই বিধিমালা এমনভাবে হওয়া উচিত যেন তা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্তরায় না হয়। এ ব্যাপারে আমরা বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে আমাদের দাবিগুলো স্পষ্ট করবো। এরপরে সংশ্লিষ্ট খাতসমূহের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে কোনো বিধিমালা হলে আমাদের তাতে আপত্তি নেই।

এশিয়ান-ওশেনিয়ান কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অরগানাইজেশনের (অ্যাসোসিও) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ্ এইচ কাফি বলেন, এমন কোনো বিধিমালা প্রণীত হওয়া উচিত নয়, যেখানে এক পক্ষ এককভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই বিধিমালাতে অনেক বিষয় সুস্পষ্ট নয়। এই খসড়া থেকে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতি চুড়ান্ত করা সম্ভব নয়। ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্সের অনেকগুলো সংগঠন এই বিধিমালার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত। সুতরাং এই খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের উচিত সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রতিনিয়ত মতবিনিময় করা।

বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গৌরাঙ্গ দে বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করাই আমাদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে যদি আবার ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আরো ৫ শতাংশ আদায় করতে হয়, এতে ইলেকট্রনিক্স ব্যবসা চুড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে এ ব্যাপারগুলোতে ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ীদের ছাড় দিয়ে বিধিমালা প্রণয়ন করা উচিত।

স্মার্ট টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরাও চাই পরিবেশ ঠিক থাকুক। পরিবেশ সংরক্ষণ করতে আমরাও কার্যকর ভূমিকা রাখতে চাই। তবে এককভাবে কম্পিউটার ব্যবসায়ীদের ওপর এই নীতি চাপিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রযুক্তি পণ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর ওপর ই-বর্জ্যের দায়িত্ব বর্তায়। ই-বর্জ্যের বিধিমালায় অনেকগুলো বিষয় পরিষ্কার নয়। এই খাতে সকল সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে বিধিমালা প্রণয়ন করা উচিত।

ইলেকট্রনিক্স ব্যবসার সঙ্গে এই নীতি চূড়ান্তভাবে সাংঘর্ষিক বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা। সভায় নেতৃবৃন্দরা নতুন বিধিমালা খসড়া পর্যালোচনার জন্য ৩ মাসের সময় দরকার বলে উল্লেখ করেন। ৭ দিনের মধ্যে আইসিটি মন্ত্রণালয়কে অতিরিক্ত আরো ৩ মাস সময় বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব পেশ করা হয়। সবার সম্মতিক্রমে এই বিধিমালার খসড়া নিয়ে পর্যালোচনা করতে ন্যুনতম ৯০ দিন সময় বাড়িয়ে নেয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ ব্যাপারে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ হতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি বিভাগকে চিঠি দেয়া হবে বলে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক শাফকাত হায়দার উল্লেখ করেন।

মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ এয়ার কন্ডিশন ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম. লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ ল্যাপটপ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আব্দুল কুদ্দুস, ইকমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মাদ আব্দুল হক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্ণেল(অব.) মাহতাবুল হক, প্রধান কারিগরি কর্মকর্তাদের সংগঠন সিটিও ফোরামের সভাপতি তপন কান্তি সরকার, ওয়ালটন গ্রুপের এজিএম এস.এম. মিজানুর রহমান, এডিসন গ্রুপের মার্কেটিং ম্যানেজার এস.এম. শাহরিয়ার হুদাসহ ইলেকট্রনিক্স এবং ইলেকট্রিক্যাল ব্যবসায়ীদের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ আগস্ট ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়