ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কেয়া ইয়ার্নের এমডি খালেক কারাগারে

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৮, ২১ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কেয়া ইয়ার্নের এমডি খালেক কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ১১১ কোটি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাতের মামলায় কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল খালেক পাঠানকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

সোমবার শুনানি শেষে আব্দুল খালেক পাঠানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম এ এইচ এম তোয়াহা।

এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলম আসামি আব্দুল খালেককে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। জামিন দিলে আব্দুল খালেক পাঠানের আত্মগোপনে যাওয়ার আশঙ্কা আছে, এজন্য তার জামিন নামঞ্জুরের আবেদন করেন তিনি।

অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী তার জামিন প্রার্থনা করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, আব্দুল খালেক পাঠান কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি। তিনি যদি টাকা আত্মসাৎ করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ থাকবে। কিন্তু জালিয়াতির কোনো অভিযোগ নেই।

তিনি আরো বলেন, আব্দুল খালেক পাঠান একজন ব্যবসায়ী। তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সামনে ঈদ, এ সময় তিনি কারাগারে আটক থাকলে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস আটকে থাকতে পারে। শ্রমিকরা বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন। তা ছাড়া আব্দুল খালেক পাঠান অসুস্থ। জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না। সবদিক বিবেচনা করে যেকোনো শর্তে তার জামিন প্রার্থনা করেন তিনি।

দুদকের পক্ষের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জামিনের বিরোধিতা করেন।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কৃষি ব্যাংক থেকে ১১১ কোটি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেডের এমডি আব্দুল খালেক পাঠান ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানসহ আটজনের বিরুদ্ধে রোববার তেজগাঁও থানায় এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দায়ের করার পরই রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে দুদকের উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলম তাকে গ্রেপ্তার করেন।

মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান খালেদা পারভীন, পরিচালক মাছুম পাঠান, অপর মেয়ে তানসিন কেয়া, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রাক্তন এজিএম মো. সারোয়ার হোসেন, প্রাক্তন ডিজিএম মো. জুবায়ের মনজুর, কারওয়ান বাজার করপোরেট শাখার প্রাক্তন এসপিও মো. আবুল হোসেন এবং প্রাক্তন এসপিও গোলাম রসুল।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণের নামে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখার মোট ১১১ কোটি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন।

অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য এবং রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা দেখা যায় যে, মেসার্স কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড কাঁচা তুলা আমদানি করে তা দিয়ে সুতা উৎপাদন করে শতভাগ রপ্তানি কারে থাকে। ২০০৯ সালের ১ এপ্রিল মেসার্স কেয়া ইয়ার্নের এমডি আব্দুল খালেক পাঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শর্তসাপেক্ষে প্রথমে ২০ কোটি টাকা প্রকল্প ঋণ মঞ্জুর করা হয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে ২০১১ সালে জুলাই পর্যন্ত ১ বছরে মেয়াদি মোট ৬০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়। এর বিপরীতে জামানত রাখা হয়েছে ৫০ লাখ ৫৫ হাজার টাকার এফডিআর এবং পুবালী ব্যাংক লিমিটেডের লিড তত্ত্বাবধানে ক্লাভ ফাইন্যান্সিংয়ের আওতায় ২০৫ কোটি টাকা। কিন্তু কেয়া ইয়ার্ন শতভাগ সুতা রপ্তানি না করে নানা অজুহাতে ১১১ কোটি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে।

সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, গ্রাহক মেসার্স কেয়া ইয়ার্ন মিলস্ লিমিটেড এবং কৃষি ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আটটি এলসির বিপরীতে ফান্ডেড ওই টাকা আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে সাতটি এলসির বিপরীতে ১০৫ কোটি ৬৪ লাখ ৪০ হাজার ৯১৭ টাকা এবং দুটি এলসির বিপরীতে ৫ কোটি ৫০ লাখ ২৪ হাজার ১১১ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।

এ কারণে দণ্ডবিধি ৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪২০/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলম বাদী হয়ে মামলা করেন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ আগস্ট ২০১৭/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়