ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আত্মসমর্পণের পর খালেদা জিয়ার জামিন

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৯ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আত্মসমর্পণের পর খালেদা জিয়ার জামিন

নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশিবাজারস্থ অস্থায়ী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন খালেদা জিয়া।

ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান শুনানি শেষে প্রত্যেক মামলায় ১ লাখ টাকা করে মুচলেকায় এবং আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশ না যাওয়ার শর্তে তাকে জামিন দেন।

এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় এ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্য দেন। বক্তব্যে মামলাটিতে তিনিসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে অভিহিত করেন এবং বিচার বিভাগ ও দেশের চলমান অবস্থাসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

এর আগে খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত হওয়ার আগেই সকাল ১১টায় বিচারক এজলাসে ওঠেন। ওই সময় চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আসামি জিয়াউল হক মুন্না এবং মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে রি-কলের সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক মো. নুর আহমেদকে জেরা শুরু করতে বলেন বিচারক। ওই সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) হাইকোর্ট পর্যন্ত চলে এসেছেন, যদি একটু সময় দেন। তখন বিচারক বলেন, তিনি আসলেই আমরা এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেব। ততক্ষণ পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ চলবে। এরপর আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে আইনজীবী আমিনুল ইসলাম জেরা শুরু করেন। বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত জেরার পর খালেদা জিয়া আদালতে প্রবেশ করায় জেরা স্থগিত হয়। ওই সময় আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া খালেদা জিয়ার বসার অনুমতি চাইলে বিচারক অনুমতি দেন। এরপর আইনজীবী প্রাক্তন স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার খালেদা জিয়ার দুটি মামলায় জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, গত ধার্য তারিখে বিজ্ঞ আদালত জামিন বাতিল করেছিলেন। তিনি (খালেদা জিয়া) তখন বিদেশে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসার জন্যই তিনি বিদেশে গিয়েছিলেন। আমরা চিকিৎসার কাগজপত্র দিয়েছি। তিনি আইনের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। গতকালই বিদেশ থেকে এসে আজই আদালতে হাজির হয়েছেন। আমরা তার জামিন চাইছি।

ওই সময় বিচারক দুদকের প্রসিকিউটরের বক্তব্য জানতে চাইলে প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আজকে মামলাটি যুক্তিতর্কের শুনানি জন্য আছে। আগে যুক্তিতর্কের শুনানি হোক, পরে জামিন আবেদনের শুনানি হোক।

তখন বিচারক বলেন, আগে জামিন আবেদনের নিষ্পত্তি হোক। আপনার জামিনের ব্যাপারে আপত্তি আছে কি? ওই সময় মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আবশ্যই আপত্তি আছে। বিজ্ঞ আদালত যে শর্তে এর আগে তাকে জামিন দিয়েছিলেন তিনি সে শর্ত পালন করেননি। ৮ মাস ১০ দিন সময় নষ্ট করেছেন। ৩৩ বার সময় নিয়েছেন। এই মামলায় উচ্চ আদালত আপনাকে ক্ষমতা দিয়েছেন যে, তিনি জামিনের শর্ত ভঙ্গ করলে আপনি জামিন বাতিল করতে পারবেন। তিনি জামিনের শর্ত ভঙ্গ করেছেন। তাই তার জামিন বাতিল হয়েছে। এই অবস্থায় তিনি আর জামিন পেতে পারেন না। এরপর আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল এবং সরফুদ্দিনের পক্ষে জামিনের আবেদন করে শুনানি করা হয়। ওই দুই জনের জামিন আবেদনের ব্যাপারেও মোশাররফ হোসেন কাজল বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন।

জামিন আবেদনের শুনানি শেষে বিচারক ১ লাখ টাকা মুচলেকায় দুই জন জামিনদারের জিম্মায় খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তিনি আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশে যেতে পারবেন না বলেও উল্লেখ করেন। অপর দুই আসামির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।

এরপর খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার মামলাটি যুক্তিতর্ক থেকে উত্তোলন করে পুনরায় আত্মপক্ষ শুনানিতে আনার আবেদন করেন। ওই সময় দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল ওই আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, এই আবেদন কেন আগে দেওয়া হয়নি? কেন লুকোচুরি করে এখন দেওয়া হলো? এরপর এ নিয়ে বিচারকও প্রশ্ন উত্থাপন করলে জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ম্যাডামের জামিন বাতিল হয়েছিল। তার জামিন না হওয়া পর্যন্ত তার পক্ষে আমরা অন্য কোনো আবেদন আইনসঙ্গতভাবে আদালতে জমা দিতে পারি না। এরপর এ নিয়ে দুদকের প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল এবং খালেদা জিয়ার আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার এবং জয়নুল আবেদীনের মধ্যে বাকবিতণ্ডার পর বিচারক খালেদা জিয়ার আবেদন মঞ্জুর করে বলেন, আপনি (খালেদা জিয়া) এখন আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেবেন। আমি এখন এজলাস থেকে নেমে ১৫ মিনিট পর এজলাসে উঠব। তখন আপনার বক্তব্য রেকর্ড করব। এই বলে বিচারক ১১টা ৫৫ মিনিটে এজলাস থেকে নেমে যান। এরপর বেলা ১২টা ১২ মিনিটে বিচারক এজলাসে ওঠেন। এরপর বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য রাখেন। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্য রাখেন। এক ঘণ্টা বক্তব্য দেওয়ার পর তিনি এদিন আর বলতে পারবেন না জানিয়ে সময় চান। বিচারক সময় মঞ্জুর করেন। এরপর বেলা ১টা ২৫ মিনিটে তিনি আদালত ছেড়ে যান।

খালেদা জিয়া এজলাস ছেড়ে আসার পর আবার চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় পুনরায় সাক্ষ্য শুরু হয়। আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে আইনজীবী আমিনুল ইসলাম পুনরায় সাক্ষী নুর আহমেদকে জেরা শুরু করেন। বেলা ২টা পর্যন্ত জেরা করার পর তা শেষ হয়। এরপর বিচারক আগামী ২৬ অক্টোবর অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার অসমাপ্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্যের জন্য এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আসামি মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে সাক্ষী নুর আহমদকে জেরার দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ১২ অক্টোবর ওই দুই মামলায় খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির জামিন বাতিল করেন আদালত। মামলাটিতে দীর্ঘদিন প্রাক্তন এ প্রধানমন্ত্রী আদালতে উপস্থিত হয়ে আত্মপক্ষ শুনানির বক্তব্য না দিয়ে মামলার কার্যক্রমকে বিলম্বিত করার অভিযোগে পরোয়ানা জারি করেন বিচারক।

এদিকে খালেদা জিয়া আদালতে আসার আগে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, এ জে মোহাম্মাদ আলী, আব্দুর রেজ্জাক খান, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ আলম, বোরহান উদ্দিনসহ শতাধিক আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হন।

অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভী, জয়নাল আবেদীন ফারুক, নজরুল ইসলাম খান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আফরোজা আব্বাস, আব্দুস সালাম, ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শায়রুল কবীর খানসহ অনেক নেতা-কর্মী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ অক্টোবর ২০১৭/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়