ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘বলা হয়েছিল, শেখ হাসিনাকে নাস্তা করানো হবে’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ২১ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বলা হয়েছিল, শেখ হাসিনাকে নাস্তা করানো হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হালকা নাস্তা করানো হবে- এমন কথাই বলা হয়েছিলো বলে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন এই মামলার আসামি শরীফ সাইদুল আলম বিপুল।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ১৩তম দিনে মামলার আসামি আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাকের ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তুলে ধরেন। এছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার সাক্ষী মাওলানা আবদুর রশিদের  ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি আদালতে উপস্থাপন করেন। আটক ১২ আসামি যারা নিজেকে জড়িয়ে এবং নিজেকে সম্পৃক্ত না করে ২১ আগস্ট ঘটনায় সম্পৃক্ত যাদের নাম জবানবন্দিতে প্রকাশ করেছেন তাও রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্কে পেশ করেন।

পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। এদিন রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় বিচারক আগামী ২৭ ও ২৮ নভেম্বর শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।

যুক্তিতর্কে আসামি শরীফ সাইদুল আলম বিপুলের জবানবন্দির আলোকে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এ আসামি মুফতি হান্নানের কাছ থেকে গ্রেনেড নিয়ে সিলেটে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়। ২০০৪ সালের ১৯ আগস্ট এ আসামি ঢাকায় মুফতি হান্নানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সিলেটের উদ্দেশ্যে চলে যায়। ২০০৪ সালের ২০ আগস্ট তাকে মুফতি হান্নানের ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি ফোনে জানায়, ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে শেখ হাসিনাকে হালকা নাস্তা করানো হবে। ২১ আগস্ট রাতে সে জানতে পারে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় বহু হতাহত হয়েছে। পরে মুফতি হান্নান তাকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান।

আসামী আরিফ হাসান সুমন তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের ঢাকার প্রধান ছিলেন। তাজউদ্দিন এ আসামির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সে সুবাধে তাজউদ্দিনের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিলো। তাজউদ্দিনের কাছে অনেক পাকিস্তানি নাগরিক আসত। এছাড়া মাওলানা হাফেজ আবু তাহের, মাওলানা মুনির ও অন্যরা তার কাছে আসত। ২১ আগস্ট ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত মাওলানা তাজউদ্দিন জানেন বলে আসামি সুমন তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মাওলানা আবদুর রশিদ তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমার এক আত্মীয় মুফতি শহিদুল্লাহ তাকে আল মারকাজুল ইসলাম বাংলাদেশ মাদ্রাসায় চাকরি দেন। সেখানে মাওলানা তাজউদ্দিন, মুফতি হান্নান, শেখ সালাম, শেখ ফরিদ, মুফতি সফিকুর রহমান, এমপি শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ অনেকে আসতেন। একদিন মাওলানা তাজউদ্দিন, মুফতি হান্নানরা সে মাদ্রাসায় যান। সেখানে গিয়ে তারা হাওয়া ভবনে যাওয়ার কথা বলে গাড়ি দিয়ে সহযোগিতার কথা বলেন।

রশিদ বলেন, ‘তাদের অনুরোধে মাদ্রাসার একটি গাড়ি করে আমরা হাওয়া ভবনে যাই। আমাকে ভবনের নিচে রেখে তাজউদ্দিন ও হান্নান ভিতরে প্রবেশ করেন। আমি দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ভবনে তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, কায়কোবাদ, লৎফুজ্জামান বাবর, মেজর জেনারেল (অব:) রেজ্জাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আবদুর রহিমকে প্রবেশ করতে দেখি।’

উল্লেখ্য, মুফতি হান্নানসহ ১২ আসামি এ মামলায় ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি পেশ করেছেন। আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি উপস্থাপন আজ শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনের নির্মম মৃত্যু হয়। গ্রেনেডের স্লিন্টারের আঘাতে আহত হন কয়েক শতাধিক। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও শ্রবণশক্তি হারান।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ নভেম্বর ২০১৭/মামুন খান/শাহনেওয়াজ।

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়