ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘কী বিপদেই না পড়লাম’

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘কী বিপদেই না পড়লাম’

নিজস্ব প্রতিবেদক : বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুকে দ্বিতীয় দিনে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবার বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে দুদক কার্যালয় থেকে বের হন বাচ্চু। এই সময় অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। তাকে বিব্রত দেখাচ্ছিল।

দুদকের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কক্ষ থেকে নামলে বাচ্চুর মন্তব্য জানতে সাংবাদিকরা ঘিরে ধরেন। এই সময় তিনি সাংবাদিকদের ভিড় ভেদ করে দুদক ভবনের রিসিপশন হয়ে মূল গেইট দিয়ে বেরিয়ে যান।

এরপরও কিছু সাংবাদিক তার পিছু ছাড়েনি। এক সময় তাকে মোবাইল ফোন থেকে তার গাড়িচালককে ফোন দিতে দেখা যায়। এই সময় কয়েকজন সাংবাদিক তাকে বেসিক ব্যাংকের ঋণসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন আবারো করেন।

এক পর্যায়ে তিনি আবারো মোবাইল চাপতে চাপতে বিড়বিড় করে বলেন, ‘কী বিপদেই না পড়লাম।’

এর আগে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত কমিশনের পরিচালক এ কে এম জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবালের নেতৃত্বে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে দুপুরে খাবারের প্রস্তাব দিলে তিনি শুধু চা-বিস্কুট খান বলে দুদকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এ ছাড়া দুপুরে বাচ্চু কিছুটা অসুস্থ বোধ করলে দুদকের মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসক জ্যোতির্ময় চৌধুরী তার প্রাথমিক চেক-আপ করেন। তার উচ্চ রক্তচাপ ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

কমিশনের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, দ্বিতীয় দিন আব্দুল হাই বাচ্চুকে ৫৬টি মামলার মধ্যে ১৫টি মামলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই তদন্ত কর্মকর্তা সামছুল আলম ও জয়নাল আবেদীন জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অন্যান্য মামলায় আবারো তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর আগে গত সোমবার দুদকের সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বাচ্চুকে। সেদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনো অভিযোগের তদন্ত চলছে। এখনো কিছু প্রমাণ হয়নি।… দেখা যাক কী হয়।’

বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কয়েক দফা পর্যবেক্ষণ আসার পর সম্প্রতি ব্যাংকটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয় দুদক। বাচ্চুর আগে ব্যাংকের প্রাক্তন ১০ পরিচালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা করেন দুদকের অনুসন্ধান দলের সদস্যরা। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় মোট আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে।

মামলায় ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আনা হয়।এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখার মাধ্যমে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখায় ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখায় প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখার মাধ্যমে অনিয়ম করে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া কেলেঙ্কারির অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান দুদকে চলমান।

মামলায় আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা রযেছেন ২৬ জন। বাকি ১৩০ জন আসামি ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন।

এর মধ্যে ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, মো. সেলিম ৮টি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি। তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ ডিসেম্বর ২০১৭/এম এ রহমান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়