ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পটুয়াখালীর সেই ভুয়া ডাক্তার শ্যোন অ্যারেস্ট

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পটুয়াখালীর সেই ভুয়া ডাক্তার শ্যোন অ্যারেস্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক : সন্তান প্রসবের সময় এক নারীর পেটে গজ রেখে অপারেশন শেষ করা ভুয়া ডাক্তার রাজন দাসকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

পটুয়াখালীর বাউফল থানায় পুলিশের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দেন আদালত। ভুয়া ডাক্তার রাজন দাসের আসল নাম অর্জুন চক্রবর্তী।

সোমবার আত্মসমর্পণের পর বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত এই ঘটনায় ক্ষতিপূরণের মামলা ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের বিষয়ে আদেশের জন্য ১৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শশাঙ্ক শেখর সরকার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জেসমিন সামসাদ।

পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শামসুদ্দিন বাবু। ভুল চিকিৎসার শিকার বরিশালে মাকসুদা বেগমের পক্ষে শুনানি করেন ইমরান এ সিদ্দিক। ক্লিনিকের পরিচালক ও নার্সের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম। ভুয়া চিকিৎসক রাজন দাসের পক্ষে ছিলেন নুরুল ইসলাম সুজন ও গোলাম নবী।

পরে শামসুদ্দিন বাবু সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজন দাসের বিরুদ্ধে বাউফল থানায় একটি মামলা আছে। তাকে সে মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে শাহবাগ থানায় পাঠিয়ে দিতে বলেছেন আদালত। এ ছাড়া এ ঘটনার সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে বাউফল থানার ওসিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’

এর আগে ওই ডাক্তারের লাইসেন্স ভুয়া প্রমাণিত হওয়ার গত ৬ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন হাইকোর্ট। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করে হাইকোর্টে হাজির করতে বাউফল থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাকে গ্রেপ্তারে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিলেও পুলিশ এতে ব্যর্থ হয়। সোমবার সেই ভুয়া ডাক্তার নিজেই এসে আইনজীবীর মাধ্যম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

আদালতে নিরাময় ক্লিনিকের পরিচালক আব্দুর রহমান, ভুয়া চিকিৎসকের সহকারী তোফায়েল সিকদার ওরফে মিশু সিকদারও উপস্থিত ছিলেন।

একটি জাতীয় দৈনিকে গত ২২ জুলাই ‘সাড়ে তিন মাস পর পেট থেকে বের হল গজ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদ উল্লা আদালতের নজরে আনার পর রুলসহ হাইকোর্ট আদেশ দেন।

ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অস্ত্রোপচারের সাড়ে তিন মাস পর বরিশালে মাকসুদা বেগম (২৫) নামের এক নারীর পেট থেকে গজ বের করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় ওই নারীকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, দীর্ঘ দিন পেটের ভেতর গজ থাকায় খাদ্যনালীতে অনেকগুলো ছিদ্র হয়ে গেছে। মাকসুদা বেগমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। মাকসুদা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বিলবিলাস গ্রামের মো. রাসেল সরদারের স্ত্রী। গত মার্চে অস্ত্রোপচার করে মাকসুদা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তখন তার পেটে গজ রেখে সেলাই করে দেন চিকিৎসক।’

মাকসুদার মা রোকেয়া বেগম বলেন, ‘গত মার্চে সন্তান প্রসবের জন্য মাকসুদাকে বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকে নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচার করে মাকসুদার একটি মেয়ে হয়। কয়েক দিন ক্লিনিকে থাকার পর তারা বাড়ি ফেরেন। এক মাস পর মাকসুদা পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করায় আবারো ওই ক্লিনিকে যান। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ দিয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করেন। দুই মাস পর খিঁচুনি দিয়ে জ্বর ওঠে। তখন খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। গত জুনে বরিশাল মেডিক্যালের বহির্বিভাগে দেখানো হয়। তখন আলট্রা-সনোগ্রাফিতেও কিছু ধরা পড়ে না। এরপর পটুয়াখালীতে এক চিকিৎসককে দেখানোর পর তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। ১২ জুলাই হাসপাতালে মাকসুদার অস্ত্রোপচার হয়। তখন তার পেটের ভেতর থেকে গজ বের করা হয়।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ডিসেম্বর ২০১৭/মেহেদী/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়