ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

বাচ্চু হাসপাতালে, এক মাসের সময় চেয়েছেন

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাচ্চু হাসপাতালে, এক মাসের সময় চেয়েছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদে থাকা ব্যাংকটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এ কারণ দেখিয়ে তৃতীয়বারের তলবে উপস্থিত না হয়ে এক মাসের সময় চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে চিঠি দিয়েছেন তিনি।

রোববার তাকে তৃতীয় দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিন পূর্বনির্ধারিত থাকলেও ‘অসুস্থজনিত’ কারণ দেখিয়ে সময় চেয়ে দুদকে লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন বলে সংস্থাটির উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আবদুল হাই বাচ্চু আবেদনে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়েছেন। রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। তবে তার ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে কমিশন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।’

এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর বেসিক ব‌্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম‌্যানকে দুদক প্রথম জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওই দিন এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে তিনি দোষী মনে করেন না বলে দাবি করেন।

এরপর গত ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো প্রায় সাত ঘণ্টা আব্দুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা। তবে দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নেরই জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান জাতীয় পার্টির এই প্রাক্তন সংসদ সদস‌্য। তবে সাংবাদিকদের জেরার মুখে এক পর্যায়ে তিনি বিড়বিড় করে বলেন, ‘কী বিপদেই না পড়লাম।’

বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কয়েক দফা পর্যবেক্ষণ আসার পর সম্প্রতি ব্যাংকটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয় দুদক। বাচ্চুর আগে ব্যাংকের প্রাক্তন ১০ পরিচালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের দায়ের করা ৫৬টি মামলার বিষয়ে আব্দুল হাই বাচ্চুকে কমিশনের পরিচালক এ কে এম জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবালের নেতৃত্বে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত দুই দিনে ৫৬টি মামলার মধ্যে ১৫টি মামলার বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বাকি মামলাগুলোর বিষয়ে বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে।

প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা করেন দুদকের অনুসন্ধান দলের সদস্যরা। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় মোট আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে।

মামলায় ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান শাখার মাধ্যমে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখায় ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখায় প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখার মাধ্যমে অনিয়ম করে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া কেলেঙ্কারির অভিযোগের বাকি অংশের অনুসন্ধান দুদকে চলমান।

মামলায় আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা রযেছেন ২৬ জন। বাকি ১৩০ জন আসামি ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, মো. সেলিম ৮টি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি। তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি।

২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়াত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দানসহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।

জাতীয় পার্টির প্রাক্তন সংসদ সদস্য বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ ডিসেম্বর ২০১৭/এম এ রহমান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়