ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সিপিবির সমাবেশে বোমার মামলা শেষ হয়নি ১৭ বছরেও

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ২১ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সিপিবির সমাবেশে বোমার মামলা শেষ হয়নি ১৭ বছরেও

মামুন খান : রাজধানীর পল্টন ময়দানে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনার পর ১৭ বছর পার হলেও মামলার বিচার শেষ হয়নি।

২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে দুর্বৃত্তরা বোমা হামলা চালায়। এতে ৫ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়। ওই ঘটনার পর ১৭ বছর পার হলেও মামলার বিচারকাজে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। মামলা বর্তমানে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য রয়েছে।

মামলা সম্পর্কে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘দীর্ঘদিনেও বিচার শেষ না হওয়া খুবই দুঃখজনক। মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোনো দলই চায় না যে বামপন্থীদের ওপর ওই হামলার সুবিচার হোক। সরকার এ মামলাকে গুরুত্ব না দেওয়ায় বিচারে এই দীর্ঘসূত্রিতা। এক সময় আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে এ মামলার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে আন্দোলনের মুখে মামলা চালাতে বাধ্য করানো হয়। তবে নিন্দনীয় গাফিলতি এখনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বামপন্থীদের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে এ দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান। সমাবেশে বোমা হামলার সময় বলেছিলাম, এ হামলার বিচার করতে না পারলে জঙ্গিরা এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটাতে থাকবে। আর আমাদের আশংকাই সত্য হয়েছে। প্রথমে যশোরে উদীচীর জাতীয় সম্মেলনে, এরপর রাজধানীর পল্টনে আমাদের (সিপিবি) সমাবেশে, এরপর রমনা বটমূলে বর্ষবরণে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে, পরবর্তী সময়ে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে এবং তারপর থেকে জঙ্গি হামলার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। ওই সময় কঠোর হাতে জঙ্গি দমন করলে আজ এ পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।’

ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় মামলার বিচারকাজ শেষ হচ্ছে না। আর আদালতে সাক্ষী হাজির করার দায়িত্ব পুলিশের। ঘটনার দীর্ঘ সময় পার হওয়ায় সাক্ষীদের খুঁজে পাওয়া দূরুহ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো গাফিলতি নেই। সাক্ষীদের প্রতি সমন ও অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম দ্রুত করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় সময়মতো আদালতে সাক্ষী হাজির করতে পারছে না। আর তাদের ব্যর্থতার কারণেই মামলার বিচার কাজে বিলম্ব হচ্ছে। গত এক বছরে একজনেরও সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। এর আগে কিছু সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তবে অধিকাংশই এখনও বাকী রয়েছে।’

এ মামলায় অনেক সাক্ষীই সাজানো-বানোয়াট দাবি করে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় যেসব সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা কেউই এর স্বপক্ষে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট আদালতে দেখাতে পারেননি। এগুলো সব দলীয় সাক্ষী।’

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি সিপিবির সমাবেশে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় ৫ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়। নিহতরা হলেন, খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা হিমাংশু ম-ল, খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার সিপিবি নেতা ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরা থানার লতিফ বাওয়ানি জুটমিলের শ্রমিক নেতা আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের মুক্তার হোসেন, খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস।

ওই ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আসামিদের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি মর্মে তদন্ত শেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। এরপর ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও ২০০৫ সালের আগস্টে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা হয়। এসব ঘটনায় জঙ্গিরা জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়ার পর ২০০৫ সালে মামলাটি আবার পুনঃতদন্তের আদেশ দেওয়া হয়। মামলাটি পুনঃতদন্তের পর ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর মৃনাল কান্তি সাহা। এর পরের বছর ২১ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত।

মামলা দুটিতে মোট ১০৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এদের মধ্যে হত্যা মামলায় ২৮ জনের ও বিস্ফোরক মামলায় ৩০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ২৪ কার্যদিবসের মধ্যে ১২ জন আর বিস্ফোরণ মামলায় ৩১ কার্যদিবসের মধ্যে ১৬ জন সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন, মুফতি আব্দুল হান্নান, মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মো. মশিউর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিরাজ ও নুর ইসলাম।

আসামিদের মধ্যে জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর শেষের ৭ জন পলাতক রয়েছেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জানুয়ারি ২০১৭/মামুন খান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়