ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

কাজী ফারুকের জেলের খরচ বহন করতে হবে বিরোধী পক্ষকে

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাজী ফারুকের জেলের খরচ বহন করতে হবে বিরোধী পক্ষকে

নিজস্ব প্রতিবেদক : আদালতের আদেশ অমান্য করায় প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের  প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. কাজী ফারুক আহমদকে এক মাসের দেওয়ানি কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। দেওয়ানি কারাদণ্ড দেওয়ার ফলে মামলার বিজয়ী পক্ষকে ড. কাজী ফারুক আহমদের জেলে থাকাকালীন সব খরচ  বহন করতে হবে।

মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

একই সঙ্গে আদালত সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম এ ওয়াদুদের কাছে চেয়ারম্যানের কার্যালয় বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ  দিয়েছেন। আদালতের এ আদেশ প্রতিপালন করে ১৫ দিনের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট বারেক চৌধুরী, নুরুল আমীন, নুরুল ইসলাম মাতুব্বর ও মো. সোলায়মান। কাজী ফারুকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম (অ্যাটর্নি জেনারেল), জেড আই খান পান্না, মাহবুব আলী এমপি, এ এম আমিনউদ্দিন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি  আমাতুল করিমের কাছে দেওয়ানি কারাদণ্ডের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তারা বলেন, দেওয়ানি কারাদণ্ড মূলত সম্মানহানিমূলক দণ্ড। কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হলে কারাগারে তার খরচ সরকার বহন করে থাকে। কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে দেওয়ানি কারাদণ্ড দেওয়া হলে কারাগারে থাকাকালীন সব খরচ মামলায় বিজয়ী পক্ষকে বহন করতে হয়।’

বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম এ ওয়াদুদ ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সিরাজুল ইসলামের করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন আদালত।

হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অ্যাডভোকেট এ এম আমিনউদ্দিন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২৪ মে সংস্থাটির গভর্নিং বডির এক সভায় চেয়ারম্যান পদ থেকে কাজী ফারুককে অপসারণ করে এম এ ওয়াদুদকে চেয়ারম্যান করা হয়। এ সিদ্ধান্তের পরের দিনই অপসারণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন কাজী ফারুক। একই সঙ্গে এম এ ওয়াদুদের কমিটির ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। এ আবেদন ওই বছরের ৩১ মে খারিজ করে দেন আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে জজ আদালতে আবেদন করেন তিনি। এ আদালত আবেদনটি খারিজ করে দিলে তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট ওই বছরের ১১ আগস্ট রায় দেন। রায়ে নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উভয়পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেওয়া হয়।

রায়ে প্রশিকা ভবনে কোনো সমাবেশ বা র‌্যালি না করতে কাজী ফারুকের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে কাজী ফারুক আপিল বিভাগে আবেদন করলেও আপিল বিভাগ এ আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর ২০১২ সালে আবার প্রশিকা ভবনে অবস্থান নেন কাজী ফারুক। পরে কাজী ফারুকের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি আদালত অবমাননার মামলা করেন এম এ ওয়াদুদ। কাজী ফারুকের বিরুদ্ধে প্রশিকা ভবনে প্রবেশ করে চেয়ারম্যানের কার্যালয় দখল করে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়। এ অবস্থায় আদালত কাজী ফারুকের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। রুলে কাজী ফারুককে কেন দেওয়ানি কারাগারে আটক রাখা হবে না এবং কেন তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর রায় দেন। রায়ে সাত দিনের মধ্যে এম এ ওয়াদুদকে কার্যালয় বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কাজী ফারুককে সাত দিনের দেওয়ানি কারাদণ্ড ও ৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি এ আদেশ কার্যকর করে ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যান কাজী ফারুক। আপিল বিভাগ মামলাটি পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন।

মঙ্গলবার পুনরায় শুনানি শেষে  হাইকোর্ট কাজী ফারুককে এক মাসের দেওয়ানি কারাদণ্ড দেন। 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জানুয়ারি ২০১৮/মেহেদী/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়