ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ঝিটকার গ্রামে অপহরণকারীদের আস্তানা, টর্চার সেল!

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৬, ১২ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঝিটকার গ্রামে অপহরণকারীদের আস্তানা, টর্চার সেল!

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের ঝিটকা এলাকার কালাই গ্রামে তিন তলা একটি বাড়িতে অপহরণকারীদের আস্তানা গড়ে উঠেছিল। ওই বাড়িতে অপহৃত ব্যক্তিদের জিম্মি করত অপহরণকারীরা। অপহৃতের পরিবারের কাছে মুক্তিপণের টাকা দাবি করত। টাকা না পেলে ওই বাড়িতেই গড়ে তোলা ‘টর্চার সেলে’ অপহৃতকে নির্মন নির্যাতন করত তারা।

মানিকগঞ্জের কালাই গ্রামের ওই বাড়িতে রোববার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ফ্ল্যাট থেকে অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা সেলিম মোল্লাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব। এ সময় ওই বাড়ি থেকে অপহৃত দুই ব্যক্তি জাফর ইকবাল ও মিরাজ গাজীকে উদ্ধার করে র‌্যাব।  এদের মধ্যে একজন পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ও অপরজন  ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা করেন।

র‌্যাব সদস্যরা জানিয়েছেন, গত ৯ মার্চ ঢাকার ফার্মগেট থেকে জাফর ও মিরাজকে অপহরণ করে চক্রটি।  পরে তাদের মানিকগঞ্জর আস্তানায় নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে।  ভিকটিমদের পরিবার র‌্যার-২ এর কাছে সহায়তা চাইলে তারা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সূত্রে ওই বাড়িতে অভিযান চালায়।পরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. রাজিবুল হাসান রাজিব (২৭), মো. তারেক হোসেন (৩১), রুহুল আমীন (৩৫), তুহিন বিশ্বাস (৩০), তারেক হোসেন (২৬), মোশারফ হোসেন (৪৭), আব্দুল রাজ্জাক (৩৫), নিরব আহমেদ (২৯) ও আবুল বাশার বিশ্বাস (৩৩)। এ সময় তাদের নিকট থেকে বেশ কিছু চাপাতি, ছয়টি চাইনিজ কুড়াল, ছয়টি পিস্তল, ছয়টি ম্যাগজিন, ৩৬টি বুলেট ও নগদ দুই লাখ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার কর হয়।

এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে ঢাকার কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে ফোর্সের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, কৌশলে তারা অপহরণ করে মানিকগঞ্জের ওই বাড়িতে নিয়ে যেত।  এর পর সেখানকার তাদের টর্চার সেলে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করত।  অনেক সময় মুক্তিপণ না পেলে অপহৃতকে হত্যা করত।

তিনি বলেন, অভিযানে দেখা গেছে- তিন তলা ভবনে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট রয়েছে।  সবকটি ফ্লাট থেকেই আসামী গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  তারা সংঘবদ্ধ হয়ে একই কাজ করত এবং ওই বাড়িতে থাকত।  বাড়ির চিলেকোঠায় একটি টর্চার সেল আছে।  সেখানে কাউকে নিয়ে টর্চার করলে বাহির থেকে কেউ টের পাবে না। 

অভিযানে থাকা এক র‌্যাব সদস্য জানান, ওই বাড়িতে যে পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে তা আমাদের অনুমানের বাইরে ছিল।  বাড়িটি এমনভাবে বানানো যে- চাইলেই তারা বাড়ির ভেতরে আত্মগোপন করে থাকতে পারবে, কিন্তু কেউ জানতেও পারবে না। এমনকি ভবনের বেশ কয়েকটি চোরাই পথ রয়েছে।  যেখান দিয়ে সহজেই পালিয়ে যাওয়া যায়।  এটা যেন নব্য এরশাদ শিকদারের বাড়ি।



তিনি বলেন, বাড়ির চিলে কোঠায় যে টর্চার সেল বানানো হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ সাউন্ড প্রুফ।  ভেতরে কী হচ্ছে বাইরে থেকে কেউ জানতেও পারবে না।  টর্চারের জন্য চক্রটি যেসব অস্ত্র ব্যবহার করে তা সাধরণ চিন্তার বাইরে।

অপহরকারীদের খোঁজ যেভাবে
গত ৯ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় একটি মাইক্রোবাস থেকে জাফর ও মিরাজের কাছে ধানমন্ডির রাস্তা জানতে চায়।  সরল মনে তারা এগিয়ে গেলে মাইক্রোবাসে তুলে নেয় অপহরণকারীরা। তারপর তাদের মানিকগঞ্জ নিয়ে যায়।

অপহরণকারীরা প্রথমে জাফরের মোবাইল ফোন থেকেই তার স্ত্রীর মোবাইল নাম্বারে ফোন দিয়ে অপহরণের বিষয়ে জানায় ও ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এক পর্যায়ে জাফরের স্ত্রী অপহরণকারীদের কথামতো দুই লাখ ৮৫ হাজার নগদ টাকা ও চেক বই মানিকগঞ্জে দিয়ে আসে। পরে মিরাজের স্ত্রীর কাছে অপহরণকারীরা ফোন দিয়ে রাজিব নামের একজনের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে বলে।

পরে ব্যাংক হিসাবের সূত্র ধরেই অপহরণের বিষয়ে তদন্ত করে র‌্যাব-২।

মাহমুদ খান বলেন চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এভাবে মানুষ অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে।  তাদের বিষয় আরো তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে দুই ভিকটিম বা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।  তবে র‌্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, জাফর ও মিরাজকে এমনভাবে নির্যতন করা হয়েছে যে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।  তারা মূলত নিরাপত্তার ভয়ে গণমাধ্যমের সামনে আসতে চাননি।

তিনি বলেন, টর্চার সেলে তাদের পাটের বস্তার ঢুকিয়ে মারধর করা হয়েছে। এছাড়া হাত-পা বেঁধে তাদের আঘাত করায় সম্পূর্ণ শরীর ফুলে ওঠেছে।  তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

অপহরণকারী চক্র প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, চক্রটি ওই এলাকায় খুব প্রভবশালী।  তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পেত না।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ মার্চ ২০১৭/নূর/এনএ 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়