ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ

১৪ মার্চও ঐতিহাসিক মাইলফলক

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৪ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৪ মার্চও ঐতিহাসিক মাইলফলক

১৩ মার্চ ১৯৭১, ঢাকায় বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল

শাহ মতিন টিপু : একাত্তরের ৭ মার্চের পর ১৪ মার্চও আরেকটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। ১৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু জাতিকে ৩৫টি নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনার পর বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তান সব নিয়ন্ত্রণই হারিয়ে ফেলে।

একাত্তরের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতাই ঘোষণা করেছিলেন। সেসময় বাঙালীর স্বাধীকার আন্দোলনকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জাতিকে ৩৫টি নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের পক্ষে তাজউদ্দিন আহমেদ সরকারি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৪ তারিখ এই ৩৫টি নির্দেশনা প্রকাশ করেন। পরদিন ১৫ মার্চ অধিকাংশ খবরের কাগজে এ নির্দেশাবলী ছাপা হয়।

এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত বাংলাপিডিয়ায় এ বিষয়ে উল্লেখ করে যে, শেখ মুজিবুর রহমানের এই নির্দেশনার পর পূর্ব পাকিস্তানের ওপর থেকে কার্যত পশ্চিম পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে যায়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ‘বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ’ বইতে লিখেছেন, ‘১৪ মার্চ , ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩৫টি নির্দেশ জারির মাধ্যমে কার্যত: বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) শাসনভার গ্রহণ করেন।’

বাংলাদেশের জনগণের নামে প্রদত্ত নির্দেশে বলা হয়, বাংলাদেশের সর্বত্র কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের সেক্রেটারিয়েট ও দফতরসমূহ, আধা-সরকারী প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, হাইকোর্ট এবং অন্যান্য আদালতে হরতাল বর্ণিত নির্দেশানুসারে পালিত হবে।

বাংলাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ডিসি এবং মহকুমা প্রশাসকগণ অফিস বন্ধ রেখে স্ব-স্ব এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাকল্পে কাজ করবে। প্রয়োজন হলে উন্নয়নমূলক কাজসহ অন্যান্য কাজও করবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে সহযোগিতা করবে। পুলিশ বিভাগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে, প্রয়োজনানুযায়ী আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সাহায্য গ্রহণ করবে।  এই ৩৫ নির্দেশনার কারণে ১৪ মার্চও ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসাবে বিবেচ্য।

১৯৭১এর ১৪ মার্চ ছিল রোববার। অন্যদিকে আজ ছিল অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সপ্তম দিবস। সামরিক সরকার কর্তৃক গতকাল জারি করা ১১৫ নং সামরিক ফরমানের বিরুদ্ধে সরকারী কর্মচারীসহ সারা দেশের মানুষ ফুঁসে ওঠে।

অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিক এমপ্লয়িজ অব পাকিস্তানের সমন্বয় কাউন্সিলের সভায় বক্তারা অবিলম্বে এ আইন বাতিলের দাবি জানান। এরপর তাঁরা এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল সহকারে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে চলমান অসহযোগের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন এবং অফিস বর্জনের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।

এদিকে গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় এবং জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু কর্তৃক আহূত অহিংস-অসহযোগের আজকের দিনটিও সাফল্যজনকভাবে শেষ হয়। এদিনও রাজধানী ঢাকা নগরীসহ সারাদেশ ছিল উত্তাল।

আজ সকাল সাড়ে ৯টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন ন্যাপ নেতা ওয়ালী খান।

আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমাদের সংগ্রাম স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার সংগ্রাম। জনগণের সার্বিক স্বাধীনতা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এ সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। বাংলার জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। এই ঐক্যবদ্ধ মুক্তিপিপাসু গণমানুষকে পৃথিবীর কোন শক্তিই দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’

এদিন অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহবান জানিয়ে সর্বসাধারণের উদ্দেশে এক দীর্ঘ বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আজ ঐক্যবদ্ধ আপামর জনগণ সামরিক আইনের নিকট নতি স্বীকার না করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কাজেই যাদের প্রতি সামরিক আইনের সর্বশেষ আদেশ দেয়া হয়েছে তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, তারা যেন কোনপ্রকার হুমকির মুখে মাথা নত না করেন। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ তাদের ও তাদের পরিবারের পেছনে রয়েছে।’

এদিকে এ দিনে করাচীর নিসতার পার্কে এক জনসভায় ভুট্টো ‘এক পাকিস্তান এবং দুই অঞ্চলে দুই দলের হাতে ক্ষমতা’ এরূপ একটি ফর্মুলা উপস্থাপন করে বলেন, ‘যে কোন ধরনের সাংবিধানিক নিষ্পত্তির পূর্বে শেখ মুজিবুর রহমানের দাবি মতে, যদি জনগণের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় তবে এটি অবশ্যই হতে হবে পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নিকট এবং পশ্চিম পাকিস্তানেও অনুরূপভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে।’

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ মার্চ ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়