ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

খালেদার মামলায় ভিডিও কনফারেন্স চায় দুদক, আপত্তি আসামিপক্ষের

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১০, ২২ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খালেদার মামলায় ভিডিও কনফারেন্স চায় দুদক, আপত্তি আসামিপক্ষের

নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তিনটি ধার্য তারিখে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানিতে হাজির করেনি কারা কর্তৃপক্ষ।

এতে মামলা কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। এজন্য ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রোববার আদালতে মৌখিকভাবে আবেদন করেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। তাতে আপত্তি করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া।

রোববার পুরান ঢাকার বকশিবাজারস্থ অস্থায়ী আদালতে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করার নির্দেশও ছিল। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাকে আদালতে হাজির করেনি। কারণ হিসেবে উল্লেখ করে, খালেদা জিয়া অসুস্থ। ‘ফিজিক্যালি আনফিট ফর টুডে।’

বেলা ১১টা ৩২মিনিটে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, আজকে মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ধার্য আছে। কিন্তু খালেদা জিয়াকে আজকে হাজির করা হয়নি বা তিনি আসেননি। একটা কাস্টডি এসেছে সেখানে লেখা আছে, তিনি অসুস্থ। ফিজিক্যালি আনফিট ফর টুডে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে মামলার কার্যক্রম চলছে না। ৮ ফেব্রুয়ারি অন্য মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর এ মামলাটিতে ৩টি ধার্য তারিখ চলে গেল। মামলা পরিচালনা করার জন্য তাকে হাজির করতে পারেনি বা কর্তৃপক্ষ হাজির করেনি। এতে করে মামলার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে আমরা হতাশ হয়ে যাচ্ছি।

মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ব্যাহত কার্যক্রমকে উত্তোলনের একটি পথই আছে, উভয়পক্ষ থেকে আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি। তিনি (খালেদা জিয়া) যদি আসতে না পারেন, আর আসামিপক্ষ যদি একটু সাহায্য করেন তাহলে  ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম চালাতে পারি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম চলছে। কয়েকদিন আগেও ভারতের লালু প্রসাদ যাদবের মামলা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হয়েছে বলে জানান মোশাররফ হোসেন কাজল। এ ছাড়া অন্যান্য দেশের দৃষ্টান্ত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখনো হয়নি। তবে হতে দোষ নেই। আসামিপক্ষও চাচ্ছে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। সেক্ষেত্রে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম চালানোর মৌখিক আবেদন করেন তিনি।

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া খালেদা জিয়ার জামিন বর্ধিত করার আবেদন করেন। এরপর তিনি বলেন, দুদক বলছে খালেদা জিয়া আনফিট। কী কারণে আনফিট তা তিনি ব্যাখা করেননি।

জবাবে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদা জিয়া জেলে আসেন। আমরা কীভাবে জানব, তিনি কী জন্য আনফিট।

সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আমরা তার অসুস্থাতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। অসুস্থতার কারণও জানতে পারছি না। তাকে আদালতেও হাজির করা হচ্ছে না। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম চালানোর বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ভিডিও কানফারেন্সের মাধ্যমে রাস্তা, সেতুর কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী উদ্ধোধন করতে পারেন, কিন্তু বিচারকাজ করতে পারেন না। আইনে যে বিধান নেই তাতে আমাদের আপত্তি আছে।

দুদকের আইনজীবী খালেদা জিয়ার জামিন বর্ধিতকরণের বিরোধিতা করে বলেন, তিনি জেলে আছেন। আসামিপক্ষ তার জামিন বর্ধিত করার জন্য বারবার আবেদন করছেন। আমরা এর আপত্তি দিয়েছি। জামিন এভাবে বর্ধিত হয় না। আসামি জেলহাজতে থাকলে জামিন বর্ধিত হয় কীভাবে প্রশ্ন রেখে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, তারা আদালতকে জানাতে পারেন, আসামি কাস্টডিতে আছেন।

তখন সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, এ মামলায় খালেদা জিয়া জামিনে ছিলেন, আছেন। আর এ মামলায় তার সাজা হয়নি। নিয়মই আছে জামিন বর্ধিত করার আবেদন করতে হবে। আর খালেদা জিয়ার কারাগার থাকার বিষয়টি আমরা আদালতকে অবহিত করেছি। আদালত সেভাবেই ব্যবস্থা নিয়েছেন।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ আগামী ১০ মে ধার্য করেন। আর ওই তারিখ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন।

এদিন খালেদা জিয়া পক্ষে আব্দুর রেজ্জাক খান, আমিনুল ইসলাম, জিয়া উদ্দিন জিয়া, হান্নান ভূঁইয়া, নুরুজ্জামান তপন, হেলাল উদ্দিন প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি অব্যাহত রয়েছে এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন বাকী আছে।

এদিকে একই বিচারক গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেন এবং ওই দিনই তাকে কারাগারে পাঠান। তিনি নাজিমুদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।

মামলাটিতে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী এবং তার তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আসামি।

মামলাটিতে খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ এপ্রিল ২০১৮/মামুন খান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়