ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘প্রলয়’ এখন শিকলবন্দি

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘প্রলয়’ এখন শিকলবন্দি

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ : বয়স মাত্র নয় বছর। নাদুস নুদুস স্বাস্থ্য’র ছেলেটিকে দেখলে যে কারোর মায়া হবে। যে বয়সে স্কুল আর খেলার মাঠে সময় কাটানোর কথা সেই বয়সে এখন শিকল বন্দি জীবন কাটছে তার।

প্রলয় বৈরাগী নামের শিশুটি ৬ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছে। বাবা-মা’ই শিশুটিকে শিকলবন্দি করে রেখেছেন।

বাবা-মা বলছেন প্রলয় মানসিক ভারসাম্যহীন। ছাড়া পেলে ওর প্রলয় কান্ডে প্রতিবেশিদের অস্থির হয়ে পড়তে হয়, তাই বাধ্য হয়ে শিকল বেঁধে রাখা।

প্রলয়দের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে। আনন্দ বৈরাগী দিনমজুর কৃষক। চার সন্তানের মধ্যে সবার বড় প্রলয়। ছোট বেলা থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীনতা প্রকাশ পাওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে সাধ্যানুযায়ী চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসা দীর্ঘ করা সম্ভব হয়নি আর। ফলে তিন বছর বয়স থেকে শুরু হয় শিকলবন্দি জীবন।

পরিবার জানায়, বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেশিদের ক্ষতি ও ছোট বাচ্চাদের মারধর করার কারণে তাকে শিকলবন্দি করতে হয়েছে। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে প্রলয়কে দিনে গাছের নীচে আর রাতের বেলা ঘরের খুঁটির সাথে পায়ে শিকল দিয়ে বারান্দায় বেঁধে রাখা হয়।

বাবা আনন্দ বৈরাগী জানান, দেড় বছর বয়সের সময় হঠাৎ একদিন ঝাঁকুনি দিয়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর একটু বড় হলে তার চলাফেরায় নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। তার কাছে ছোট-বড় যেই ‍আসুক তাকে মারধর করে। অন্যের জমিতে গিয়ে ফসল নষ্ট করে।দৌড়ে গিয়ে বাড়ির পাশের নদীতে নেমে পড়ে। এ কারণে প্রথমে তাকে কবিরাজ দেখানো হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। পরে বিভিন্ন ডাক্তার দেখানো হয়। কিন্তু অর্থের কারণে এখন সেটাও বন্ধ।  

মা সাথী বৈরাগী জানান, গোপালগঞ্জ জেলা সদরে ডাক্তারের শরনাপন্ন হন। চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় একটু সুস্থ মনে হয়েছিল। এভাবে প্রলয়ের বাবা জমিজমা বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করান। এখন টাকার অভাবে তার চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

প্রতিবেশী মনিন্দ্র মৃধা বলেন, ‘শিশুটিকে দেখলে কার না মায়া হয়! মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় নিতান্ত বাধ্য হয়েই বাবা-মা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। কেউ শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিলে শিশুটির হয়তো বন্দি জীবন ঘুচে যেতো।’

স্থানীয় চিকিৎসক ডাঃ প্রহ্লাদ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীরা অহরহই ভাল হয়ে যাচ্ছে। এ শিশুটিরও সঠিক চিকিৎসা করালে সে স্বাভাবিক সুস্থ্য জীবনে ফিরে আসতে পারে।’

প্রলয়ের বন্দি জীবনের কথা শুনে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, ‘আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে শিশুটিকে উদ্ধার করার জন্য বলব। শিশুটিকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ, ঢাকা বা পাবনায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হবে।’

 

 

 

রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/২৫ এপ্রিল ২০১৮/বাদল সাহা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়