ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

লঞ্চেও যাত্রীদের ভিড়, বিশেষ সার্ভিস শুরু

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৩ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লঞ্চেও যাত্রীদের ভিড়, বিশেষ সার্ভিস শুরু

এম এ রহমান মাসুম : দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর সবচেয়ে প্রিয় লঞ্চযাত্রা।

আর এই যাত্রাকে নিরাপদ ও আরামদায়ক করতে প্রতি বছরের মতো এবারও অতিরিক্ত যাত্রী সামাল দিতে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিসসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিআইডব্লিউটিএ এবং লঞ্চ মালিক সমিতি।

বিআইডব্লিউটিএর সূচি অনুসারে আজ থেকে চলবে লঞ্চের স্পেশাল সার্ভিস। অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটএ) চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অন্যান্য সময়ে চেয়ে যাত্রীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেলেও এখনো ভিড় মাত্রাতিরিক্ত হয়নি। দুপুরের পর থকে ভিড় শুরু হবে। ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যাবে আগামীকাল। তবে নিয়মিত লঞ্চের পাশাপাশি বিশেষ স্পেশাল সার্ভিস প্রস্তুত থাকবে। প্রয়োজনে স্পেশাল সার্ভিসের লঞ্চগুলো ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছেড়ে যাবে।

গত ৮ জুন থেকে চলছে লঞ্চের ডেকের যাত্রীদের জন্য টিকিট বিক্রি। যদিও ওই টিকিট সংগ্রহে নেই অতিরিক্ত চাপ। তবে ডেকের টিকিট সহজে পাওয়া গেলেও যত ঝক্কি কেবিন বা প্রথম শ্রেণির টিকিট প্রাপ্তিতে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল ও যাত্রী পরিবহণ সংস্থা (যাপ) এর সদস্য সচিব সিদ্দিকুল ইসলাম পাটোয়ারী এ বিষয়ে বলেন, ঈদের সাত দিন আগে থেকে লঞ্চের ডেকের যাত্রীদের জন্য সদরঘাটে স্থাপিত টিকিট কাউন্টারে টিকিট বিক্রি চলছে। অতিরিক্ত যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে ১৩ জুন থেকে স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস চালু করা হবে।

ঈদের আগে এবং পরে বন্দরের সার্বিক দিক ও যাত্রী নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম-পরিচালক (ট্রাফিক) আলমগীর কবীর বলেন, ঈদে আমাদের অবশ্যই অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতে হয়। কারণ ঈদে ২০-৩০ লাখ মানুষ হয় কিন্তু আমাদের লঞ্চের সংখ্যা মালিকানাধীন ২০৯ এবং বিআইডব্লিওটিএর ছয়টি। এই দিয়ে কোনোভাবেই এতো বিশাল যাত্রী স্বাভাবিকভাবে পরিবহন সম্ভব নয়। তাই আমরা বেশ কয়েকটি করণীয় ঠিক করেছি। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী হলেও তা যেন স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে সেদিকে আমরা খেয়াল রাখব। প্রতিটি লঞ্চকে ওয়ান ওয়েতে কনভার্ট করে ঢাকা থেকে যাত্রী পরিবহনে যুক্ত করা হবে। এতে আমাদের লঞ্চ সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে এবং অধিক যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে।

টার্মিনাল সূত্রে জানা যায়, অতিরিক্ত যাত্রীর কথা বিবেচনা করে এবারে ৫টি বিশালকার লঞ্চ  নামানো হয়েছে। সেগুলো প্রত্যেকটি প্রায় দেড় হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম। নতুন লঞ্চগুলো হলো অ্যাডভাঞ্চার-৫, অ্যাডভাঞ্চার-৯, মিতালী-৭, রফরফ-৭, পারাবাত-১১। যাত্রীদের নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় টার্মিনালে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য ২৫০ জন নৌ-পুলিশ, ১৫০ জন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), র‌্যাবের আটজন করে ১৬ জনের দুটি টিম, বিএনসিসি ক্যাডেটদের ৬০ জন সদস্য, ডিপিডিসি ৩৬ জন সদস্য কাজ করবে। এছাড়া ৬০ জন বিএনসিসি ক্যাডেট থাকবেন যাত্রীদের তথ্য সহায়তার জন্য।

এছাড়া বিএনসিসি ও ডিপিডিসি সদস্যরা অসুস্থ যাত্রীদের হুইল চেয়ার বা যেভাবে প্রয়োজন সেভাবে সহায়তায় নিজেদের নিয়োজিত করবেন। অত্যাধিক যাত্রী চাপ বেড়ে গেলে বিভিন্ন গেট বন্ধ ও খোলার কাজও করবেন সকল নিরাপত্তা কর্মী ও ক্যাডেটরা।

আর আইন অমান্যকারীদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সার্বক্ষণিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। যারা আইন বা নির্দেশ মানবে না তাদের জেল ও জরিমানা করবে এসব কোর্ট।

ঈদযাত্রায় এলাকা ভিত্তিক লঞ্চ ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে- বরিশালের লঞ্চ থাকবে ও ছেড়ে যাবে ১, ২ ও ৩ নম্বর গ্যাংওয়ে থেকে, হুলারহাট-ভাণ্ডারিয়াগামী লঞ্চ ৫ ও ৬ নম্বর গ্যাংওয়ে, ঝালকাঠি মাদারিপুর- ৪ নম্বর গ্যাংওয়ে, রায়েন্দা, গোমা, মুলাদি, ভাষাণচর ৭ নম্বর গ্যাংওয়ে,  সবুজবাগ, আমতলী, পয়সার হাট, বরগুনা ৮ নম্বর গ্যাংওয়ে,  লালমোহন, বেতুয়া, কালাইয়া ৯ নম্বর গ্যাংওয়ে,  হাতিয়া, মাস্টার হাট, দৌলত খাঁ ১০ নম্বর গ্যাংওয়ে,  বোরহানউদ্দিন, পাতার হাট, ভোলা, ১১ নম্বর গ্যাংওয়ে,  ভোলা লেতরা, ঘোষের হাট ১২ নম্বর গ্যাংওয়ে, রাঙ্গাবালী, টরকী ১৩ নং গ্যাংওয়ে,  সুরেশ্বর, ওয়াপদা, বলার চর বালাবাজারগামী লঞ্চ ১৩ নম্বর গ্যাংওয়ে, গ্রীন লাইন (ডে সার্ভিস) চাঁপুরগামী লঞ্চ, এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) রকেট স্টিমার  লালকুঠি ঘাটে বার্দিং করবে এবং ছেড়ে যাবে। এছাড়া পটুয়াখালী ও গলাচিটার লঞ্চ থাকতে ওয়াইজ ঘাটের গ্যাংওয়েতে।

সাধারণত নিয়মিত ও স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিসের ভাড়ার মধ্যে তেমন পার্থক্য থাকে না। তবে ঈদকে ঘিরে ব্যাপকভাবে কালোবাজারে টিকিট ক্রয়-বিক্রয় হয়। সেক্ষেত্রে ভাড়া অনেক সময়ে দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণও হয়ে থাকে।

লঞ্চে ভাড়ার বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, আসন ব্যবস্থাপনা অনুসারে ছোট-বড় লঞ্চসমূহে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। বড় আকারের লঞ্চগুলোতে ডুপ্লেক্স ও ভিআইপি কেবিনের ভাড়া ৩৫০০ টাকা থেকে ৭০০০ টাকা হয়ে থাকে। যেখানে দুটো বেড, এসি, রেফ্রিজারেটর, টিভি, ডাইনিং সুবিধা রয়েছে।

দুই বেড সুবিধায় ডাবল কেবিনের ভাড়া ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা, এক বেডের সুবিধায় সিঙ্গেল কেবিন ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, সোফা-কাম-বেডের ক্ষেত্রে ৫০০ থেকে থেকে ৭০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়ে থাকে। এখানেও এসি কিংবা ফ্যান ও টিভির সুবিধা রয়েছে।

এ ছাড়া লঞ্চের ডেকেও (লঞ্চের খোলা স্থান) যাত্রা করা যায়। অনেক বড় লঞ্চে কার্পেট দেওয়া রয়েছে। তবে চাদর বালিশ যাত্রীকে সঙ্গে বহন করতে হয়। এখানে ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ জুন ২০১৮/এম এ রহমান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়