চ্যারিটেবল মামলায় বিচারকের প্রতি ২ আসামির অনাস্থা
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলার আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যেতে চেয়ে করা সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার বিচারকের প্রতি দুই আসামি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। আসামি ড. জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে সোমবার এ অনাস্থা প্রকাশ করা হয়।
ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আক্তারুজ্জামান শুনানি শেষে মঙ্গলবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
এদিকে অনাস্থা জ্ঞাপনকারী আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার অন্তবর্তীকালীন জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারেও পাঠিয়েছেন আদালত।
এর আগে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত নবগঠিত অস্থায়ী আদালতে সোমবার ১১টা ১০ মিনিটে বিচারক বিচারকাজ শুরুর জন্য এজলাসে ওঠেন।
শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘আমরা জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর এবং সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার আদেশ দেওয়ার আবেদন করে চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তিতর্ক ও শুনানি মুলতবি রাখার আবেদন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু সরকারই মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে কিন্তু সে বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী সরকার এখনো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়নি। তাই আমরা এ আবেদন দিয়েছি।’
এরপর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বিচারকের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) এতোই অসুস্থ যে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি বাথরুমে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়েছিলেন। এমন একজন অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসা না করিয়ে তার বিচার করার এতো তাগাদা আপনাদের কিসের? আপনি কারো চাপে মাথা নত করেন না, এমন আস্থাই তো আপনার প্রতি সবার ছিল। তাহলে কেন এতো তাড়াহুড়ো। আপনি চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তিনি আদালতে আসবেন। আমরা কথা দিচ্ছি।’
এরপর দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘ওনাদের (খালেদা জিয়ার আইনজীবী) বুদ্ধিজীবীরা ওনাদের আদালতে আসতে মানা করছেন। আমরা মিডিয়ায় দেখলাম। তবু ওনারা এসেছেন বলে ধন্যবাদ। আজ (সোমবার) মামলায় যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য আছে। আইনে যুক্তিতর্কের বিধান না থাকার পরও আদালত ওনাদের যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু ওনারা করছেন না। ওনারা যদি যুক্তি উপস্থাপন না করেন তবে আদালত আইন অনুযায়ী অগ্রসর হবেন।’
এরপর আসামী জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং ম্যাডাম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চলার যে আদেশ দিয়েছেন ওই আদেশ আইন সঙ্গত হয়নি। আপনি (বিচারক) যে সকল উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে ওই আদেশ দিয়েছেন, তা এ মামলার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। অপব্যাখ্যা দিয়ে ওই আদেশ দিয়েছেন। তাই ওই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। তাই যুক্তিতর্ক শুনানি ২০ দিনের জন্য মুলতবি চেয়েছি।’
এরপর অপর আসামি মনিরুলের আইনজীবী মো. আক্তার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘আপনি (বিচারক) যে আদেশ দিয়েছেন সেখানে দেখলাম, দুদকের প্রসিকিউটর সাহেব আদালতে যা বলেছেন তাতো লিখেছেনই। যা বলেন নাই তাও লিখেছেন। আর আমরা যে বক্তব্য রেখেছি তার আংশিকও লিখেননি। আদেশটি আইনসঙ্গত হয়নি, তাই ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যেতে ৩০ দিন সময় দিন।’
এরপর প্রসিকিউটর কাজল বলেন, ‘মনে হচ্ছে তারা একজোট হয়ে এসেছেন। একই সুরে কথা বলছেন। ওনাদের বুদ্ধিজীবীদের নির্দেশই ওনারা পালন করছেন।’
এরপর প্রসিকিউটর কাজলের এ বক্তব্যের বিষয়ে আইনজীবী মাসুদ তালুকদার ও আমিনুল ইসলাম প্রতিবাদ করলে এ নিয়ে বাকবিত-া হয়। শেষে প্রসিকিউটর কাজল বলেন, ‘আশা করি তাদের আবেদন নামঞ্জুর হবে। যদি এরপরও তারা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন না করেন তবে রায়ের জন্য দিন ধার্যের জন্য অনুরোধ করবো।’
এরপর বিচারক আসামির পক্ষের যুক্তিতর্ক স্থগিত রাখার আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন এবং চিকিৎসার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এ আদেশের পর আইনজীবী আমিনুল বলেন, ‘আপনি (বিচারক) আমাদের আবেদন নামঞ্জুর করায় আপনার প্রতি আমাদের আস্থা নেই। আমরা আপনার আদালত থেকে মামলাটি অন্য আদালতে বদলির জন্য বদলি মিস মামলা করবো এজন্য ২০ দিনের সময় দিন।’
অপর আসামি মনিরুলের আইনজীবী মো. আক্তার হোসেন কাঠগড়ায় তার আসামিকে দেখিয়ে বলেন, ‘আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন। তাকে প্রকাশ্যেই জিজ্ঞাসা করি আপনার (বিচারক) প্রতি তার আস্থা আছে কি না।’
কাঠগড়ায় থাকা আসামিকে বিচারকের প্রতি আস্থা আছে কি না প্রকাশ্যে আদালতে জানতে চাওয়ায় দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে এ নিয়ে উভয় পক্ষ বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন।
এরপর প্রসিকিউটর কাজল বলেন, ‘ওনাদের আদালতের প্রতি আস্থা নেই। আবার জামিন বাড়ানোর আবেদন করেছেন। আশা করি, মাননীয় আদালত আসামির জামিন বাতিল করবেন।’
এরপর বিচারক আইনজীবী আমিনুলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আস্থা নেই। টাইপ করে ওই আবেদন নিয়ে এসেছেন। এ আবেদন প্রথমে কেন দিলেন না।’
উত্তরে আইনজীবী আমিনুল বলেন, ‘আপনি নামঞ্জুর করার আগে তো দিতে পারি না।’
বিচারক ড. মো. আক্তারুজ্জামান এরপর আসামি মুন্নার জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। একই সঙ্গে মঙ্গলবার অনাস্থার আবেদনের বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেন।
উল্লেখ্য, মামলাটিতে এ আসামির পক্ষে চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ওই আদালতে লিখিত যুক্তিতর্ক দাখিল করা হয়। তবে তাঁর পক্ষে মৌখিক যুক্তি উপস্থাপন বাকী আছে।
আরও উল্লেখ্য, গত ২০ সেপ্টেম্বর একই বিচারক বিচার বিলম্বের জন্য খালেদা জিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতে আসছেন না উল্লেখ করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ (এ) ধারায় তার উপস্থিতি মুওকুফ করেন। তবে আইনজীবীরা চাইলে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই যুক্তি উপস্থাপন করতে পারবেন বলে আদালতের আদেশ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।
মামলাটিতে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী এবং তার তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আসামি।
মামলাটিতে খালেদা জিয়া ও অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮/মামুন খান/শাহনেওয়াজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন