ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘মিয়ানমারে হস্তক্ষেপের অধিকার নেই জাতিসংঘের'

এনএ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪০, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘মিয়ানমারে হস্তক্ষেপের অধিকার নেই জাতিসংঘের'

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেছেন, তার দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করার অধিকার জাতিসংঘের নেই।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রাখাইনে রোহিঙ্গা ‘গণহত্যার’ জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ জেনারেলদের বিচারের সুপারিশ করার এক সপ্তাহ পর এ কথা বললেন জেনারেল হ্লাইং।

চ্যানেল নিউজ এশিয়া জানিয়েছে, মিয়ানমারের এই জেনারেল সে দেশের রাজনীতি থেকে সেনাবাহিনীকে সরে যাওয়ার যে কথা বলেছে জাতিসংঘ তারও তীব্র সমালোচনা করেছেন।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা মায়াবতির বরাত দিয়ে নিউজ এশিয়া ও স্ট্রেইট টাইমস জানিয়েছে, রোববার দেশটির রাজধানী নে পি দোতে সেনাবাহিনীর এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন জেনারেল  হ্লাইং।

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) রাখাইনের ঘটনা নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরুর পর এই প্রথম জেনারেল মিন অং হ্লাইং প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কথা বললেন।

দেশটির প্রভাবশালী এই জেনারেল বলেন, একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো দেশ, সংস্থা বা গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই। তিনি এই বলে সতর্ক করেন যে, অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলতে গেলে যেমন ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে, একইভাবে কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রেও একই ফল হতে পারে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারে গণতন্ত্র বিকাশের পথ তৈরি করতে ‘সশস্ত্র সংঘাত থামিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার’কাজ সেনাবাহিনী চালিয়ে যাবে। রাখাইনের ঘটনা নিয়ে ‘অগ্রহণযোগ্য কোনো দাবি’ সেনাবাহিনী মেনে নেবে না।    

জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমার এই বিশ্ব সংস্থার যেসব চুক্তিতে সই করেছে, সেগুলো প্রতিপালন করে উল্লেখ করে হ্লাইং আরো বলেন, একেক দেশের গণতন্ত্র চর্চার ধরন একেক রকম। একটি দেশ সেই ধরনের গণতন্ত্রের চর্চা করে, যা তার জন্য উপযুক্ত।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে  জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তথ্যানুসন্ধান মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার বাহিনী ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ থেকেই রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটিয়েছে।

জেনেভায় জাতিসংঘের দপ্তরে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, রাখাইনে ব্যাপকহারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার বাহিনীর অভিযানের উদ্দেশ্যই ছিল গণহত্যা। এ জন্য মিয়ানমারের সেনারা রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা ও ধর্ষণ করেছে এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।

প্রতিবেদনে রাখাইনে মানবতাবিরোধী এসব অপরাধের অভিযোগে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংসহ ছয় জেনারেলের বিচারের সুপারিশ করেছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা বন্ধে সেনাবাহিনীর রাশ টানতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ব্যর্থ হয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এরপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ দোষী সেনা কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিকভাবে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়।

কিন্তু  মিয়ানমার জাতিসংঘের ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, আমরা জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান মিশনকে মিয়ানমারে প্রবেশের অনুমতি দেইনি। তাই মানবাধিকার মানবাধিকার পরিষদের দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই এবং তাদের সুপারিশও গ্রহণ করতে পারছি না।’

উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে রাখাইনে পুলিশ চেকপোস্ট এবং সেনাঘাঁটিতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি হামলা চালিয়েছে এ অভিযোগ করে রাখাইনের গ্রামগুলোতে অভিযান শুরু করে মিয়ানমার বাহিনী। রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা, নারীদের ধর্ষণ এবং রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম নিজেদের বাড়ি-ঘর থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়