ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রায়ের জন্য তারিখ ধার্যের বিষয়ে আদেশ ৩০ সেপ্টেম্বর

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রায়ের জন্য তারিখ ধার্যের বিষয়ে আদেশ ৩০ সেপ্টেম্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় যুক্তিতর্ক সমাপ্ত করে রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য হবে কি না, সে বিষয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর আদেশ দেবেন আদালত।

একই সঙ্গে এ মামলায় বিচারকের বিরুদ্ধে দুই আসামির অনাস্থার বিষয় ও মনিরুল ইসলাম খানের জামিন বলবৎ রাখার বিষয়েও একইদিন আদেশ দেওয়া হবে।

বুধবার রাজধানীর পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত নবগঠিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান আদেশের জন্য এদিন ঠিক করেন।

এদিন বেলা ১১টা ১০মিনিটের দিকে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে মনিরুল ইসলামের আইনজীবী আক্তার হোসেন পূর্বের ন্যায় তার (মনিরুলের) জামিন বৃদ্ধির আবেদন করেন। আর আদালতের প্রতি অনাস্থার বিষয়ে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন এজন্য মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখার আবেদন করেন।

এরপর খালেদা জিয়ার পক্ষে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন বৃদ্ধির ও মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখার আবেদন করা হয়। এ মামলায় খালেদার পক্ষে সিনিয়র আইনজীবীরা সাক্ষ্য-জেরা করেছেন। সিনিয়র আইনজীবীদের মধ্যে আব্দুর রেজ্জাক খানের বিরুদ্ধে গত ১২ সেপ্টেম্বর ১০ মামলা, মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১৩ মামলা করেছে পুলিশ। আমার বিরুদ্ধেও ১৫টি মামলা করেছে। আব্দুর রেজ্জাক খান বয়স্ক লোক, ৮৬ বছর বয়স। তিনি কোর্টে এসে মামলা পরিচালনা করতেন। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে কারাবিধি অনুযায়ী নয়, সরাসরি বিচারকের আদেশ চান সানাউল্লাহ মিয়া। তিনি বলেন, আপনি (বিচারক) আদেশ দিলে খালেদা জিয়া চিকিৎসা করাতে পারতেন, সুস্থ হয়ে কোর্টে আসতে পারতেন।

সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, এ মামলার কার্যক্রম একাধারে তিনদিন থাকলে আমাদের অসুবিধা হয়। আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে খালেদা জিয়ার অন্য মামলায় আমাদের যেতে হয়। মামলাটি সপ্তাহে একদিন দিলে ভাল হয়, আমাদের সুবিধা হয়।

মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, আমরা আপনার কোর্টে মামলা করছি। আমাদের একটা যুক্তিসঙ্গত সময় দেন। আমরা মামলা নিষ্পত্তি করতে সহযোগিতা করবো। আর মামলা হয়ে শেষ হয়ে এসেছে, এত তাড়াহুড়ো করার কি আছে।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ধার্য আছে। আসামিপক্ষ গতানুগতিক দরখাস্ত, একই কথা বলছেন। মামলাটিতে যুক্তিতর্কের সুযোগ নাই, তারপরও আপনি শুনছেন, আগেও শুনেছেন। শোনা ভাল, ধারণা দেওয়া যায়। আমরা বলবো আসামি দোষী আর আসামিপক্ষ বলবে খালাস পাবে এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আসবে, আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তারা আদালতে আসছেন, কিন্তু আদালতকে কিছু দিচ্ছেন না।

তিনি বলেন, যুক্তিতর্কের যে ম্যাটার সেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সমাপ্ত ঘোষণা করে রায়ের তারিখ ধার্যের আবেদন করেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি আসামিদের জামিন বৃদ্ধির বিরোধিতা করেন।

মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আসামিপক্ষ বাইরের ষড়যন্ত্র, পরামর্শে আদালতের কার্যক্রমে সাহায্য করছেন না। তারা জেদ ধরে বসে আছেন। কোনোক্রমেই সাহায্য করছেন না।

জবাবে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, খালেদা জিয়ার জামিনে থাকা আপনার এখতিয়ার। আর সব দেশে যুক্তিতর্ক হয়-চলছে, আমাদের দেশেও চলছে। আর আমরা অন্যায় দাবি করিনি। খালেদা জিয়ার পক্ষে সিনিয়র চারজন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। আর আমরা মামলার জামিন আবেদনসহ বাকি কাজগুলো করি। দাবি যুক্তিসঙ্গত মনে করেন আমাদের সময় দিন, সাহায্য করবো।

মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আমরা আদালতে আসি, আপনি জামিন দেন চলে যায়। আদালতকে কিছু দেয় না। মাঠে-ঘাটে সব জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন ন্যায়বিচার ব্যাহত করছি। আমরা ন্যায়বিচার ব্যাহত করছি না। আর পিপি সাহেব মামলা থেকে রাজনৈতিক কথা বেশি বলেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। আর পিপি সাহেবের এক তরফা আচরণের কারণে বিচার যদি প্রহসন হয়ে যায় উনি এর দায়ভার নিবেন কি না প্রশ্ন রাখেন মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার।

এরপর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আদালতের সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না। আমরা মামলাটি নিষ্পত্তি করতে চাচ্ছি। আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন না। যুক্তি প্রদর্শন না করে সময়ক্ষেপন করছেন। আমরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সমাপ্ত করে রায়ের তারিখ ধার্যের জন্য আবেদন করছি।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটিতে যুক্তিতর্ক সমাপ্ত করে রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য হবে কি না সে বিষয়ে, বিচারকের বিরুদ্ধে দুই আসামির অনাস্থার বিষয় ও মনিরুল ইসলাম খানের জামিন স্থায়ীর বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেন। আর ওই তারিখ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন বৃদ্ধি করেন আদালত।

গত ২০ সেপ্টেম্বর একই বিচারক বিচার বিলম্বের জন্য খালেদা জিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতে আসছেন না, উল্লেখ করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ (এ) ধারায় তার উপস্থিতি মওকুফ করেন। তবে আইনজীবীরা চাইলে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই যুক্তি উপস্থাপন করতে পারবে বলে আদালতের আদেশ রয়েছে।

উল্লেখ্য, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি অব্যাহত রয়েছে এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন বাকি আছে।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮/মামুন খান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়