ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় ২৯ অক্টোবর

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১৬ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় ২৯ অক্টোবর

নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চার আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ আগামী ২৯ অক্টোবর ধার্য করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান আসামিপক্ষের সময় আবেদন নামঞ্জুর করে মামলার কার্যক্রম সমাপ্ত করে রায় ঘোষণার জন্য এ তারিখ ঠিক করেন।

এদিন এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল হবে কি না, এ বিষয়ে এবং মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে করা আবেদনের আদেশ দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতের আদেশ দাখিলে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রপক্ষের (দুদক) করা রায়ের দিন ধার্যের আবেদনের আদেশের জন্য দিন ধার্য ছিল।

মঙ্গলবার সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটে বিচারক আদালতে পৌঁছান। বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, আজ এ মামলায় আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন এবং খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল ও রায়ের তারিখ ধার্যের বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য আছে। উচ্চ আদালত খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চালানোর আদেশ দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। আমরা তার কপি আদালতে দাখিল করেছি। আসামিপক্ষ আপিল বিভাগে আদেশের বিরুদ্ধে ফাইল করবেন। এজন্য মামলার কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য সময় চেয়েছে। আমরা মামলার সকল কার্যক্রম শেষ করে রায়ের তারিখ ধার্যের আদেশ দেওয়ার আবেদন করছি।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আমরা এখনো উচ্চ আদালতের আদেশের কপি পাইনি। আদেশের অবজারভেশনে অনেক সিদ্ধান্ত এসেছে। কপি পেলে দেখতে পেতাম। আমরা উচ্চ আদালতের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাব। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এক সপ্তাহের সময় চান সানাউল্লাহ মিয়া। এখানে আদালতের পরিবেশ নেই, জানিয়ে তিনি কারাগার থেকে আদালত বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে অথবা বিশেষ জজ আদালত-৫ এর এজলাসে মামলার কার্যক্রম পরিচালানার জন্য মোশাররফ হোসেন কাজলকে ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিতে বলেন।

এরপর মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, পিপি সাহেব বলছেন, অর্ডার এখানেই শেষ, কিন্তু শেষ হয়নি। কোর্ট আশা করছে, খালেদা জিয়া আদালতে এসে বিচার মোকাবিলা করবেন।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। অসুস্থ থাকায় তিনি আদালতে আসতে পারছেন না। আর আদালতে বসে থাকার অবস্থা তার নেই। তিনি সুস্থ হয়ে আদালতে আসবেন। অনন্তকাল তো কেউ কারো জন্য বসে থাকবে না। আমরা আপিল বিভাগে যাব। এজন্য আমরা সময় চাচ্ছি।

মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশ এখানে এসেছে। তখন মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, আরো উচ্চ আদালত আছে। জবাবে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, উচ্চ আরো উচ্চ আদালতেও যাবেন। জাতিসংঘ পর্যন্ত গেছেন।

উচ্চ আদালতের আদেশের মধ্যে দেওয়া সীমাবদ্ধতার বিষয় নিয়ে মোশাররফ হোসেন কাজল ও মাসুদ আহম্মেদ তালুকদারের মধ্যে কিছুটা বাকবিতণ্ডা হয়।

এরপর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশ মানতে হবে। আদেশ থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

তখন বিচারক মাসুদ আহম্মেদ তালুকদারের কাছে সীমাবদ্ধতার বিষয়টির ব্যাখ্যা চান। মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার ব্যাখ্যা দেন।

তখন বিচারক বলেন, আজ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন থাকবে কি না? পিপি সাহেবের করা গত ২৬ সেপ্টেম্বর রায়ের দিন ধার্যের আবেদনের আদেশের জন্য দিন ধার্য ছিল। বিচারক এরপর আদেশ দেন।

আদেশে বিচারক উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে গত আড়াই বছর ধরে এ মামলার যুক্তিতর্ক শুনানির দিন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বারবার সময় দেওয়ার পরও আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক শুনানিতে অংশ নেননি। যদিও মামলাটিতে যুক্তিতর্ক শুনানির সুযোগ নাই। উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য চলার জন্য আদেশ দিয়েছেন। এরপরও আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক পেছানোর জন্য সময়ের আবেদন করেছেন। আজও তারা যুক্তিতর্ক শুনানি করেন নাই।  আসামিপক্ষের সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে রায় ঘোষণার জন্য ২৯ অক্টোবর দিন ধার্য করা হলো। আর খালেদা জিয়ার এ মামলার রায় ঘোষণার দিন পর্যন্ত জামিন বহাল থাকবে।

আদালতে কার্যক্রম শেষে সানাউল্লাহ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, পিপি সাহেব, জজ সাহেব এজলাসে ওঠার আগে এক ঘণ্টা সেশন করেন। খাস কামরায় বসে পিপি সাহেবের সাথে যুক্তিতর্ক করেন। এরপর এসে অর্ডার দেন। আজকে একইভাবে আমরা এসে দেখলাম, কোর্টে পিপি সাহেব নাই, জজ সাহেবের সাথে খাস কামরায়। জজ সাহেবের সাথে আলাপ-আলোচনা করে আমাদের আবেদন নাকচ করে ২৯ অক্টোবর রায়ের তারিখ রেখেছেন।

তিনি বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। যে রায়ের তারিখ ঘোষণা করেছেন তা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। আমরা এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।

মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, আমরা আদালতে বলেছি, জেলে থাকা আসামিকে ৫৪০ (এ) হাজিরা থেকে মওকুফ করার আইনগত বিধান নেই। জেলে রেখে কাউকে হাজিরা থেকে মওকুফ করা হয়েছে, এটার সর্বপ্রথম এবং সর্বশেষ উদাহরণ খালেদা জিয়া। সেই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে পিটিশন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন। আদালত বলেছেন, ‘আমরাও আশা করব, খালেদা জিয়া এসে বিচার মোকাবিলা করবেন।’ আদালতের আদেশের অংশটুকু পড়ে শুনিয়েছি।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। সুস্থ হয়ে তিনি আদালতে আসবেন। এ কথাও বলেছি, হাইকোর্ট কেবলমাত্র বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত নয়, সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের উপরে। হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছে তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাব আমরা, ল ইয়ার সার্টিফিকেট দিয়েছি। আমাদের বক্তব্যের পর আদালত খালেদা জিয়া জামিন বহাল রেখেছেন। কিন্তু যে সময় চেয়েছি যুক্তিতর্কের জন্য সেই আবেদন নামঞ্জুর করে রায়ের তারিখ ধার্য করেছেন।

মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, এটা তিনি বেআইনি আদেশ দিয়েছেন। তিনি একের পর এক বেআইনি আদেশ দিচ্ছেন। আবার সার্টিফিকেট পেতে যে যুক্তিসঙ্গত সময় দরকার সেটা আমরা পাচ্ছি না। নানারকম বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে আমাদের উচ্চ আদালতে আবেদন করে তা নিষ্পত্তি করে আসতে সময় লাগছে।

তিনি বলেন, আজকে সময় আবেদন নামঞ্জুর করে যে আদেশ দিয়েছেন তা বেআইনি ও অন্যায়। আমাদের বিচার ব্যবস্থায় এরকম কনো নজির নেই। উনি (বিচারক) অন্যায়ভাবে এ নজির তৈরি করার একটা অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। এ আদেশ বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় বেমানান।

এর আগে এ রকম কোনো আদেশ হয়নি, উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের আদেশকে রিভার্স করে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বিচার নিষ্পত্তির আদেশ দিবেন।

আড়াই বছর ধরে যুক্তিতর্কে কালক্ষেপণ করা হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, কোনো মামলায় কোনো আসামি সময় নেয় না, সময় বিচারক দেয়। আমরা যদি আপনাদের মাধ্যমে প্রশ্ন করি যে, বিচারক এত বার সময় দিলেন কেন? আমাদের সময়ের প্রার্থনা যদি অযৌক্তিক হয়ে থাকত আড়াই বছর তাহলে এতদিন কেন এই এই বিচারক অযৌক্তিক সময় মঞ্জুর করলেন? সময় যদি ন্যায়বিচারের জন্য দিয়ে থাকে তাহলে ন্যায়বিচার কোথায় চলে যাচ্ছে? সময় দেওয়া যুক্তিসঙ্গত।

তিনি বলেন, আমরা বরাবরই বলে যাচ্ছি, নিম্ন আদালতের বিচারকরা এদেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থায় কতটুকু স্বাধীন বিচার করছে সেই বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের কাছে নানা রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে।

মোশাররক হোসেন কাজল বলেন, খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় মেট্রো মেকার্সসহ অন্যান্য লোকের কাছ থেকে নেওয়া টাকা জিয়াউর রহমানের নামে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে তা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি যে অ্যাকাউন্ট করেছিলেন সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ শব্দটির ব্যবহার করেননি।

তিনি বলেন, এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৩২ জনের সাক্ষী হয়েছে। আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন। এরপর এ মামলায় গত আড়াই বছর কোনো যুক্তিতর্ক প্রদর্শন করেন না। আদালত বারবার তাদের যুক্তিতর্ক উত্থাপন করার জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তারা একগুয়েমি দেখিয়ে আদালতের কথা অমান্য করে বারবার নানা অজুহাতে যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য সময় চেয়ে চলেছেন। আদালতের আদেশকে সম্মান প্রদর্শন করেন না।

তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চলা ও আদালতের প্রতি অনাস্থার বিষয়ে আসামিপক্ষ হাইকোর্টে গেলে তা খারিজ  হয়। আজও তারা যুক্তিতর্ক প্রদর্শন না করে সময় চান। তাদের উচিত ছিল আজকে যুক্তিতর্ক প্রদর্শন করা অথবা সেই ব্যাপারে কিছু বলা।  হাইকোর্টে আদেশ হওয়ার পরও তারা মামলাটিতে কালক্ষেপণের জন্য যুক্তিতর্ক শুনানির সময় চেয়ে আবেদন করে বিচার বিলম্বিত করছেন। পরবর্তীতে আদালতের কাছে মনে হয়েছে, আমরা যে আবেদন করেছি সেটা যুক্তিসঙ্গত। এজন্য মামলার সকল কার্যক্রম শেষ করে রায়ে তারিখ ২৯ অক্টোবর ধার্য করেছেন।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী । তাকে সম্মান দেখিয়ে আদালত বারবার সময় দিয়েছেন। সময় দিলেও দোষ, না দিলেও দোষ। যৌক্তিকভাবে আবেদনের যথার্থতা বিবেচনা করে আড়াই বছর ধরে সময় দিয়ে চলেছেন। তারপরও আসামিপক্ষ কোনো অবস্থাতেই বিচার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন না।

রায়ের দিন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।

এদিন কারাগারে থাকা দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানকে আদালতে হাজির করা হয়।

উল্লেখ্য, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি অব্যাহত রয়েছে এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন হয়নি।

গত ৩০ জানুয়ারি মামলাটিতে খালেদা জিয়াসহ চার আসামির সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছরের কারাদণ্ড চায় রাষ্ট্রপক্ষ।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক।

মামলাটিতে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী এবং তার তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আসামি।

মামলাটিতে খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় চার্জ গঠন করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ অক্টোবর ২০১৮/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়