ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ব্যারিস্টার মইনুল কারাগারে

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১২, ২৩ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ব্যারিস্টার মইনুল কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলার অভিযোগে রংপুরে দায়ের করা মানহানির মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলামের আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মঙ্গলবার বেলা ১২টা ৫৫ মিনিটে মইনুল হোসেনকে আদালতে আনে ওয়ারী থানা পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। বেলা ১টা ১৩ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরুর আগে ১টায় তাকে এজলাসে নিয়ে আসে পুলিশ।

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের পক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার, গোলাম মোস্তফা খান, মোসলেহ উদ্দিন জসীমসহ শতাধিক আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন আব্দুল্লাহ আবু, কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, তাপস কুমার পালসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।

শুরুতে ঢাকা বারের সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান মইনুল হোসেনের বসার অনুমতি চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এরপর সানাউল্লাহ মিয়া আদালতকে বলেন, কোন মামলায় মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জানা দরকার। এ বিষয়ে অন্ধকারে আছি। তখন তাদের জানানো হয়, মইনুল হোসেনকে রংপুরের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে কি না, তাও জানতে চান আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। তখন তাদের জানানো হয়, আর কোনো মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।

এরপর মামলার ধারা এবং আবেদনে কী বলা হয়েছে, তা জানতে চান মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার। আদালত তাদের পুলিশের আবেদনটি দেখান। তখন তারা বলেন, এখানে কোনো ধারা উল্লেখ নেই। ধারা সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে কীভাবে আদেশ দেবেন, আদালতকে এ কথা বলেন মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার।

তখন কাজী নজিবুল্লাহ হিরু জানান, ধারা আছে কি না, তা আমাদের জানার বিষয় না। মামলাটি রংপুরের আর অনুমান করতে পারি, সারা দেশে যে মামলাগুলো হচ্ছে সেগুলোর মতো অথবা অন্য হতে পারে।

এরপর সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আমার কাছে মামলার একটা কপি আছে। সেখানে ৫০০, ৫০৬ ও ৫০৯ ধারা উল্লেখ আছে।

এরপর তারা মইনুল হোসেনের পক্ষে জামিন শুনানি করেন।

শুনানিতে তারা বলেন, ঘটনা ঢাকার, আসামিও ঢাকায় আর মিলি মায়া বেগম রংপুরে মামলা করেছেন। এখানে তার কি মানহানি হয়েছে? আর একটা টকশোর ব্যাপারে ঢাকায় মামলা হয়েছে। আর মামলাটি জামিনযোগ্য ধারার, তাকে আদালত জামিন দিতে পারেন। আদালত তাকে জামিন দিয়ে একটা যুক্তিসঙ্গত সময় দিয়ে নির্দেশনা দিতে পারেন। আর অজামিনযোগ্য হলে কী হবে, আপনার ভালো জানা আছে। মামলাটি জামিনযোগ্য ধারার এবং মইনুল হোসেন বয়স্ক, অসুস্থ বিবেচনায় তাকে জামিন দেওয়ার প্রার্থনা করেন তার আইনজীবী।

ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লা আবু বলেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বক্তব্য সারা জাতি শুনেছে। সারা দেশের নারী জাতিকে অবমাননা করা হয়েছে। আর মামলাটি রংপুরের, তাকে সেখান থেকে জামিন নিতে হবে। আমরা জামিন দিতে পারি না। এখানে ডকুমেন্ট নেই, আপনার জামিন দেওয়ার সুযোগ নেই। তাকে রংপুরে পাঠানোর আবেদন করেন তিনি।

এরপর কাজী নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, তিনি একটি ঘৃণিত কাজ করেছেন। প্রকাশ্য টেলিমিডিয়ায় একজন খ্যাতনামা সাংবাদিককে ‘চরিত্রহীন’ বলেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি মা-বোন, নারী জাতিকে, যারা পেশায় রয়েছে সকলকে হেয় করেছেন। বিশিষ্ট সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীরা তার বক্তব্য প্রত্যাহারের কথা বললেও তিনি তা করেননি। পরবর্তীতে তিনি নিউ নেশন পত্রিকায় একটা খোলা চিঠি লিখলেন। সেখানে বলা হল, আমি কেন ! এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনাকে চরিত্রহীন বলা হচ্ছে। এছাড়া, একটা ভিডিওতে তিনি মাসুদা ভাট্টিকে ৫/৬ বার বাজে মহিলা উল্লেখ করেন। কন্যা সমতুল্য মনে করে বলতেন, ভুল হয়েছে, ক্ষমা চাইতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি সকলকে আহত করেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন নারীসমাজকে।

ব্যারিস্টার মইনুলের জামিন নামঞ্জুরের আবেদন করেন কাজী নজিুবুল্লাহ হিরু।

এরপর মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, কাকে কী বলেছে, আমরা সবাই জানি। জামিনযোগ্য ধারায় জামিন না দিলে আমরা জামিনের আবেদন প্রত্যাহার করব। এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালতে চেঁচামেচি শুরু করেন।

তখন বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ১টা ৫২ মিনিটে বিচারক আদালত থেকে নেমে যান।

উল্লেখ্য, শুনানির মধ্যে আদালতে প্রবেশ করাকে কেন্দ্র করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা পুলিশের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। তখন বিচারক বলেন, সিকিউরিটির কারণে আদালতে প্রবেশ করা রেস্ট্রিক্ট করা হয়েছে। আর আপনাদের সিনিয়ররা তো কোর্টে আছেন। এ সময় তিনি সবাইকে শান্ত হতে বলেন।

এদিকে মইনুল হোসেনের জামিন নামঞ্জুরের আদেশের পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। আর আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা সরকারের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

প্রসঙ্গত, সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডির) সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের বাসা থেকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলার অভিযোগে রংপুরে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ অক্টোবর ২০১৮/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়