ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘পরিপক্ক হয়ে জাতীয় দলে এসেছি, হতে চাই তামিম ভাইয়ের মতো’

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৯, ২০ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘পরিপক্ক হয়ে জাতীয় দলে এসেছি, হতে চাই তামিম ভাইয়ের মতো’

ক্রীড়া প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম থেকে : বল থ্রো করছিলেন স্টিভ রোডস। অনেকক্ষণ ধরে পরখ করছিলেন নবাগত সাদমান ইসলামকে। বেশ কয়েকটি ভুল শট! এগিয়ে গেলেন তার কাছে। কথা বললেন দীর্ঘক্ষণ।

শ্যাডো করে বুঝিয়ে দিলেন। দুই পায়ের ব্যবধান বোঝাচ্ছিলেন, কোনটায় কমাতে হবে, কোনটায় বাড়াতে হবে। আবার থ্রো ডাউন। এবার সলিড সাদমান। শিষ্যর দ্রুত উন্নতিতে হাসিমুখ রোডসের। এরপর অধিনায়ক সাকিব, লেগ স্পিনার রিশাদ ও অফস্পিনার নাঈমের বল দেখেশুনে নিজের খোলস থেকে বেরিয়ে আরামসে খেলছিলেন বাঁহাতি ওপেনার।

২২ গজের ক্রিজে অনেক পথ পেরিয়ে জাতীয় দলে সাদমান ইসলাম। গতকালই দলে ডাক পাওয়ায় তখন পর্যন্ত বুঝে পাননি জাতীয় দলের অনুশীলন জার্সি। তাই এইচপি জার্সি গায়ে করলেন অনুশীলন। আজ অনুশীলনে না আসলেও সমস্যা হতো না। ঐচ্ছিক অনুশীলন। কিন্তু হোটোলে শুয়ে-বসে কাটাতে নারাজ। তাই মুশফিক, সাকিব, নাঈমের সঙ্গে অনুশীলনের মঞ্চে সাদমান।   

২০১৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক সাদমান ইসলাম ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাট হাতে দারুণ সফল। সবশেষ ওয়ালটন জাতীয় ক্রিকেট লিগে ঢাকা মেট্রোর হয়ে ১০ ইনিংসে  রান করেছেন সর্বোচ্চ ৬৪৮। সর্বোচ্চ রান ১৮৯। ৬৪.৮০ গড়ে ২টি সেঞ্চুরি ও ৩টি হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন এ বাঁহাতি।

জাতীয় লিগে রান করার সুবাদে সুযোগ পান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে। বিসিবি একাদশের হয়ে ৭৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলার পুরস্কার হিসেবে তিনি এখন প্রথম টেস্টের দলে। আজ প্রথম দিনের অনুশীলন শেষে মুখোমুখি হন গণমাধ্যমের। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তারই চুম্বক অংশ দেওয়া হলো রাইজিংবিডি’র পাঠকদের জন্য,

প্রশ্ন: প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তো অনেক দিন থেকেই খেলছেন, রান পাচ্ছেন নিয়মিত। তবে এরপরেও কি জাতীয় দলে সুযোগ পেতে দেরি হয়ে গেল?
সাদমান ইসলাম: আমি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলছি অনেক দিন থেকেই, প্রায় চার পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে। আমি যেমন পারফরম্যান্স করে আসছি হয়তো তা ঠিক আছে। একজন ব্যাটসম্যান যখন জাতীয় দলে খেলতে যায় তখন একটু পরিপক্ব হয়ে যাওয়াই ভালো। আমার মনে হয় আমি যেমন খেলেছি হয়ত আমি একটু পরিপক্ক হয়েছি। আর প্রস্তুতি ম্যাচটি ভালো খেলেছি। নির্বাচকদের কাছে মনে হয় কিছুটা ভালো মনে হয়েছে আর সেই কারণেই আমার সুযোগ এসেছে। 

প্রশ্ন: কোচ তো মাঠে ছিলেন, কথা হচ্ছিল কি রকম?
সাদমান ইসলাম: কোচ তেমন কিছু বলেননি। শুধু বলছিল যে ভালো ব্যাটিং করেছ, তবে আরেকটু লম্বা করতে পারতে ইনিংসটি এমন কিছু একটা বলেছেন। আর বললো যে একটু টেকনিক্যালি কাজ করতে হবে এবং ডিফেন্স নিয়ে একটু কাজ করতে হবে। আর তেমন কিছু বলেননি।

প্রশ্ন: প্রস্তুতি ম্যাচে খেলার আগে কি ভেবেছিলেন এটা বার্ষিক পরীক্ষা। যদি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তাহলে প্রোমোশন পাবেন?
সাদমান ইসলাম: এটা তো অবশ্যই। সেখানে কোচ ছিল, নির্বাচকেরা ছিলেন। তাঁদের সামনে আমি ভালো করেছি। শুরুতে ১৩ জনের স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে  হয়তো এই ম্যাচটিতে আমি ভালো করতে পারি বা কিছু করতে পারি তাহলে সুযোগ আসতে পারে। সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করে আমি ম্যাচটি খেলেছি। 

প্রশ্ন: পরিণত হয়ে আসা এবং ঘরোয়া ক্রিকেট ও জাতীয় দলের পার্থক্য---
সাদমান ইসলাম: পরিণত হয়ে আসাটা আসলে অনেক জরুরী। যেমন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলে আসার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা হয়তো একটু চিন্তাভাবনা করেই খেলতে হয় সবার। আর আমার কাছে মনে হয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আর জাতীয় দলের পার্থক্য অনেক। কিন্তু যেহেতু আমি অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছি তাই আমি জানি যে কিভাবে ইনিংসটা গুছিয়ে নিতে হবে। এই বিষয়টি যদি আমার জানা থাকে তাহলে আমার মনে হয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটু হলেও ভালো করার সুযোগ থাকে।

প্রশ্ন: ব্যাটিংয়ের সময় কোচের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ভুলগুলো ধরিয়ে দিচ্ছিলেন। কোন বিষয়গুলোতে বেশি ফোকাস ছিল?
সাদমান ইসলাম: আমার ডিফেন্সটা নিয়ে কথা বলেছিলাম আগে। কালকের ম্যাচটিতে আমার ডিফেন্সটা দেখেছে সে। আর উনি যেভাবে আমাকে ডিফেন্সের ব্যাপারে টেকনিক্যালি বলেছেন সেভাবে যদি করতে পারি তাহলে আরও ভালো হয় এবং আরও বেশি টিকতে পারব ও স্পিনটা আরও ভালো খেলতে পারব।



প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য পরিশ্রমের বিকল্প নেই। এটা নিয়ে আপনার ভাবনা…

সাদমান ইসলাম: পরিশ্রম তো অবশ্যই করতে হয়। সেটি না করলে পারফরম্যান্সে একটু হলেও সমস্যা হবে। আর পরিশ্রম করেছি এর জন্য হয়ত এই জায়গায় আমি আসতে পেরেছি। আমার কাছে মনে হয় সব কাজেই পরিশ্রমটা দরকার। সাফল্যের জন্য পরিশ্রম লাগবেই। হয়ত পরিশ্রমের কারণেই আজকে জাতীয় দলে আমি।

প্রশ্ন: প্রস্তুতি ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসারদের সামলেছেন। সচরাচর এরকম গতি খেলার সুযোগ হয়না। কেমন লাগলো খেলে। বাড়তি কি বুঝলেন?
সাদমান ইসলাম: তেমন কিছু চিন্তা করিনি আমি। আমাদের বাংলাদেশেরও তো অনেক জোরে বল করার মত পেসার আছে। আমি শুধু ভেবেছি যে নাম নিয়ে চিন্তা করলে হয়তো খারাপ হবে। আমি চিন্তা করেছি যে শুধু বল আসবে আর আমি খেলব। এছাড়া আর কিছু চিন্তা করিনি।

প্রশ্ন: জাতীয় দলে খেলার আগে নিজেকে কতটুকু গুছিয়ে নিচ্ছেন?
সাদমান ইসলাম: আমি তো অবশ্যই নিজেকে তৈরি করে রাখব। আর সুযোগ যদি আসলে তাহলে আমি সবসময় যেভাবে খেলে আসছি সেভাবে খেলব। কিভাবে নিজেকে গুছিয়ে নিতে হয়, পারফর্ম করতে হয় এবং কিভাবে বড় রান করতে হয় এগুলো ঠিক রাখতে হবে। আমি সেভাবেই নিজেকে সেট করি আর সেভাবেই সেট করছি নিজেকে।

প্রশ্ন: আপনার লক্ষ্য?
সাদমান ইসলাম: আমার লক্ষ্য পারফর্ম করার। সেটি যেখানেই হোক রান করে আসব। বাকিটা নির্বাচকদের ওপরে। আমার কাজ হল পারফর্ম করার, সেটাই আমি করতে থাকব। এটাই আমার লক্ষ্য।

প্রশ্ন: জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে---
সাদমান ইসলাম: অপেক্ষা তো করতেই হয়। জাতীয় দলে খেলা তো সকলেরই স্বপ্ন থাকে। যেমন আমি বিশ্বকাপের পর এসে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছি। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ থেকে শুরু করে সবখানে খেলে আসছি। এটাই লক্ষ্য ছিল যে যেখানেই খেলবো সেখানেই পারফর্ম করতে থাকব। কোন একদিন সুযোগ আসবে। আমি যদি পারফর্ম করতে থাকি তাহলে অবশ্যই কোন একদিন সুযোগ আসবে।

প্রশ্ন: আপনার আইডল ক্রিকেটার?
সাদমান ইসলাম: তামিম ইকবাল ভাইকে ছোট থেকে আদর্শ হিসেবে নিয়েছি।



রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২০ নভেম্বর ২০১৮/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়