ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

১৫২ কোটি টাকা সম্পদ, স্ত্রীসহ বাদলের বিরুদ্ধে চার্জশিট

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৫, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৫২ কোটি টাকা সম্পদ, স্ত্রীসহ বাদলের বিরুদ্ধে চার্জশিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : আইএফআইসি ব্যাংকের প্রাক্তন পরিচালক লুৎফর রহমান বাদল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫২ কোটি ৫২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে পৃথক দুই মামলায় চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশন থেকে চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে বলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন।

২০১৭ সালের ২৮ ও ২৯ মে বাদল ও তার স্ত্রী সোমার বিরুদ্ধে দুদকের প্রাক্তন উপপরিচালক শেখ আবদুস সালাম বাদী হয়েছে রমনা থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন মো. মোশারফ হোসেইন মৃধা।

মামলার এহাজারে বলা হয়, বাদলের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৩০ কোটি ২৭ লাখ ২৩ হাজার ৩৯৬ টাকা। আর তার স্ত্রী সোমার সম্পদের পরিমাণ ১৩৭ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৬৯৭ টাকা।

তদন্ত প্রতিবেদনে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বাদলের  বিরুদ্ধে ৫৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ও তার স্ত্রী সোমা আলম রহমানের বিরুদ্ধে ৯২ কোটি ৮২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদক জানায়, আসামি মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বাদল দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর ও অস্থাবর ১৩০ কোটি ২৭ লাখ ২৩ হাজার ৩৯৬ টাকার হিসাব দেন। অপরদিকে তদন্তকালে তার সম্পদ পাওয়া যায় ১৩০ কোটি ২৯ লাখ ৫৬ হাজার ৭২৯ টাকা। অর্থ্যাৎ ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এছাড়া দুদকের তদন্তে ৫৯ কোটি ৭০ লাখ ৩৪ হাজার ২৯০ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া যায়। যা দুদক ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১) ধারা অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

অন্যদিকে তদন্তকালে দেখা যায়, আসামি সোমা আলম দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে মোট অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন ১৩৫ কোটি ২৮ লাখ ৬৯৭  টাকা। কিন্তু তদন্তকালে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায় ১৩৭ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৬৯৭  টাকা। এক্ষেত্রে সোমা আলম ২ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার সম্পদ অসৎ উদ্দেশ্যে গোপন করেন। এছাড়া তদন্তকালে সোমা আলম রহমানের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া যায় ৯২ কোটি ৮২ লাখ ৮২ হাজার ৩৭২ টাকা। তদন্তকালে প্রমাণ পাওয়ায় দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১) ধারা অনুসারে শিঘ্রই সংশ্লিষ্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

এর আগে গত ২০ জানুয়ারি ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বাদল ও তার স্ত্রী সোমা আলম রহমানের নামে থাকা সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি আদালতের অনুমতি নিয়ে জব্দ করে দুদক।

দুদক সূত্রে জানা যায়, লুৎফর রহমান বাদলের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ১৩০ কোটি ২৭ লাখ ২৩ হাজার ৩৯৬ টাকার। তার স্ত্রীর সম্পদ ১৩৭ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৬৯৭ টাকার। জব্দ করা মোট সম্পদ প্রায় ২৬৮ কোটি টাকার। আসামি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে পলাতক আছেন।

সূত্র জানায়, আসামিরা সম্পদ হস্তান্তরের জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এসব সম্পদ হস্তান্তর করলে বিচারের রায় শেষে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ ও জরিমানা আদায় একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়বে। তদন্তের স্বার্থে আসামি লুৎফর রহমান বাদলের নামে বিভিন্ন লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার মূলধনও বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ এবং বাড়ি-ফ্ল্যাট ও জমি ক্রোক করার প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করার জন্য ঢাকার স্পেশাল জজ আদালতে চিঠি পাঠানো হয়।

জব্দ করা সম্পত্তির মধ্যে আছে লুৎফর রহমানের বনানীর পুরাতন ডিওএইচএসের ৫ নং রোডের ৬৮ নম্বর বাড়ি, বারিধারা মডেল টাউনের তিন তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি, ধানমন্ডির রয়েল প্লাজা, বনানীর গলফ হাইটস, গুলশানের ভাটারার বাড়ি এবং কাকরাইলও রমনার ভূমি জব্দ করা হয়েছে।

ফ্রিজ করা অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে-সাউথ ইস্ট ব্যাংকের একক ও যৌথ হিসাব, ওয়েসিস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ৫০ হাজার টাকার শেয়ার, সিনক্লিয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের ১ লাখ টাকার শেয়ার, লতিফ সিকিউরিটিজস লিমিটেডের ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার, বিসিক করপোরেশনের ৫০ হাজার টাকার শেয়ার, ডায়াপার লিমিটেডের ৬০ লাখ টাকার শেয়ার, বেঙ্গল মিডিয়া করপোরেশনের ১ কোটি টাকার শেয়ার, আল মানার হাসপাতালের ৬৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার শেয়ার এবং অন্যান্য সম্পদ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/এম এ রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়