ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রানা প্লাজা ধস: শ্রমিকদের নিরাপত্তায় অগ্রগতি হয়নি

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৪ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রানা প্লাজা ধস: শ্রমিকদের নিরাপত্তায় অগ্রগতি হয়নি

নাসির উদ্দিন চৌধুরী : দেশে শিল্প দুর্ঘটনার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ রানা প্লাজা ধস। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারান ১ হাজার ২৩২ জন পোশাক শ্রমিক। আহত হন দুই হাজারেরও বেশি শ্রমিক। অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছেন। দুর্ঘটনার ৬ বছর পুর্ণ হলেও দোষীদের শাস্তি হয়নি এখনও।

নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও আহত শ্রমিকরা নানাভাবে আর্থিক সহায়তা পেলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি অনেকেই। বিশ্লেষকরা জানান, রানা প্লাজা ভবন পুননির্মাণ ও শ্রমিক কল্যাণে অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও শ্রমিকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিতে এখনও অগ্রগতি খুব একটা হয়নি। দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্রাতিষ্ঠানিক না হওয়ায় সমস্যা রয়ে গেছে।

এদিকে একশনএইড বাংলাদেশের সর্বশেষ জরিপের তথ্যে দেখা যায়, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার শিকার জীবিত শ্রমিকদের ৫১ শতাংশ এখন কর্মহীন। দু’বছর আগে এই হার ছিল ৪২ শতাংশ। আহত শ্রমিকদের ২০ দশমিক পাঁচ শতাংশ শ্রমিকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। গত বছর এই হার ছিল ১২ শতাংশ। এবার ৫১ শতাংশ বলছেন, তাদের শারীরিক অবস্থা কোনরকম স্থিতিশীল। অন্যদিকে ৫১ শতাংশ শ্রমিক কাজ করতে পারছেন না। এর মধ্যে ৭৪ শতাংশ শারীরিক এবং ২৭ শতাংশ মানসিক দুর্বলতার কারণে কাজ করতে পারছেন না। যারা কাজে যেতে পেরেছেন তাদের মধ্যে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ আহত শ্রমিক গার্মেন্টসে ফেরত গেছেন। আর আহত ২০ শতাংশ জবাব দেন যে, তাদের পারিবারিক উপার্জন সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকা।

একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের কারণে যে সকল শ্রমিক নিহত ও আহত হয়েছেন ক্ষতিপূরণ পাওয়া তাদের অধিকার। যদি সংঘবদ্ধভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতো আহত শ্রমিকদের তাহলে হয়তো বর্তমান পরিস্থিতি এমন হতো না। খণ্ড খণ্ড ভাবে টাকা দেওয়ার ফলে ক্ষতিপূরণ কোন উপকারেই আসেনি।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘দু:খজনক হলেও সত্য রানা প্লাজা ধসের ৬ বছর হলেও পরিস্থিতি ভাল না হয়ে আরো খারাপের দিকে গেছে। দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকদের জন্য যে উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল তার গতি কমে গেছে। আইনি ভিত্তি তৈরি হয়নি। যেটি হলে ভবিষ্যতে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে অর্থনৈতিক, সামাজিক, শারীরিক দিক বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের বিষয়টি আর এডহক হত না। আহত শ্রমিকদের জন্য একটি হাসপাতাল হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি।’

এদিকে রানা প্লাজার অষ্টম তলায় নিউ স্টাইল লিমিটেডে কাজ করতেন মাহমুদুল হাসান হৃদয়। তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজার ভবন ধসের ঘটনার ছয় বছর পার হয়ে গেলেও এখনও অনেক শ্রমিক ও তার স্বজনরা ক্ষতিপূরণ পাননি। অনেককে যা দেওয়া হয়েছে তা খুবই সামান্য। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তারা তাদের ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচও চালাতে পারছেন না। ভবন ধস কেড়ে নিয়েছে অনেকের জীবন। যাদের কারণে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে তাদের বিচার কাজ শেষ করা হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভবনটি যেদিন ধসে পরে সেদিন সেখানে আমার চাকরির বয়স মাত্র ১৪ দিন হয়েছিল। উদ্ধার কর্মীরা ২০ ঘণ্টা পর ধংসস্তূপের নিচ থেকে আমাকে বের করে নিয়ে আসে করে। কিন্তু পায়ে ও মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে আজ আমি প্রায় পঙ্গু। ঐ সময় অল্প কিছু যা সহযোগিতা পেয়েছি তা দিয়ে ঠিকমতো চিকিৎসাও করাতে পারিনি।’

রানা প্লাজার ৬ষ্ঠ তলার ইথার টেক্স কারখানায় কাজ করতেন শিলা বেগম। দুর্ঘটনার প্রায় দুই বছর আগে থেকে কাজ করতেন কারখানাটিতে। কিন্তু দুর্ঘটনায় ধসে যাওয়া ভবনের স্তুপে চাপা পরেন তিনি। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর উদ্ধারকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। প্রথম দিকে কিছু সাহায্য পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে কোনো রকমে দুমুঠো খেয়ে বেঁচে আছেন। টাকার অভাবে তার চিকিসা বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রাক্তন সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সর্বোচ্চ সাহায্য সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে। আর যারা আহত হয়েছেন আমরা তাদের অর্থ সহযোগিতা দিয়েছি। তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি সবসময় আছে। আমরা সবসময় বলে আসছি, তাদের যদি কখনো চাকরি বা কোনো কিছু প্রয়োজন হয় তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, কখনো আমাদের কাছে কেউ আসেনি।’

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে শ্রমিকরা কর্মস্থলে যোগ দেয়ার পরপরই সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। দুর্ঘটনার পর জনগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালায়। ভবনটিতে পোশাক কারখানা, একটি ব্যাংক এবং মার্কেট ছিল। ভবনটিতে ফাটল থাকার কারণে ভবন ব্যবহার না করার জন্য সতর্কবার্তা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ এপ্রিল ২০১৯/নাসির/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়