ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আবজাল-রুবিনা দম্পতিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২৫ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আবজাল-রুবিনা দম্পতিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের জন্য অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে সরকারের সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আবজাল-রুবিনা দম্পতিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই মামলার অনুমতি দেওয়া হয়।

শিগগিরই মামলাটি দায়ের করা হবে বলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য নিশ্চিত করেছেন

দুদকের অনুসন্ধানে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয় সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খানমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সংশ্লিতা পাওয়া গেছে। রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম যাচাই করে ওই অনিয়মের তথ্য পেয়েছে দুদক।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি আবজাল হোসেন, তার স্ত্রী রুবিনা খানম এবং তাদের ১৫ জন নিকটাত্মীয়ের আরো সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে সংস্থাটি। সুনির্দিষ্টভাবে এই ১৭ জনের সম্পদের খোঁজ চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় চিঠি দেয় সংস্থাটি। তাদের ধারণা, আবজালের যেসব সম্পদের তথ্য তাদের হাতে আছে, তার বাইরেও অনেক সম্পদ রয়েছে। আবজাল দম্পতি তাদের নিকটাত্মীয়দের নামে ওই সব সম্পদ করেছেন। তাই ওই সব সম্পদের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়।

চিঠিতে যাদের সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়, তারা হলেন- আবজাল হোসেন, তার স্ত্রী রুবিনা খানম, আবজালের ছেলে রুলমান আহমেদ রাকিব, দুই মেয়ে আনিকা সুলতানা রূপা ও আদিবা সুলতানা রথী, শ্বশুর জয়নাল তালুকদার, শাশুড়ি রেহেনা বেগম, তিন শ্যালক রফিকুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম; তিন শ্যালকের স্ত্রী রুমানা, রুমা খান ও লিমা আক্তার; দুই ভাই বেলায়েত হোসেন ও লিয়াকত হোসেন, দুই ভাইয়ের স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার ও নাসরিন আক্তার লাকি।

তাদের মধ্যে আবজালের দুই ভাই ও তিন শ্যালককে গত ৩১ জানুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এই পাঁচজনও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত। আবজালের দুই ভাই হলেন ফরিদপুর টিবি হাসপাতালে ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট বেলায়েত হোসেন ও জাতীয় অ্যাজমা সেন্টারের হিসাবরক্ষক লিয়াকত হোসেন। তিন শ্যালক হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক রকিবুল ইসলাম, উচ্চমান সহকারী রেজাউল ইসলাম এবং খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অফিস সহকারী শরিফুল ইসলাম।

দুদক সূত্র জানায়, আবজাল হোসেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিক্যাল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার প্রাক্তন স্টেনোগ্রাফার। এখন তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ব্যবসা করেন।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, আবজাল হোসেন বেতন পান সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার মতো। অথচ চড়েন হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের গাড়িতে। ঢাকার উত্তরায় তার ও তার স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি।

এই দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে গত ১০ জানুয়ারি আবজাল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। রুবিনা খানমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৭ জানুয়ারি দুদকে হাজির থাকতে বলা হলেও তিনি সময় চেয়ে আবেদন করেন। এর আগে আবজাল ও রুবিনার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক।

আবজাল হোসেনের বাড়ি ফরিদপুরে। ১৯৯২ সালে তৃতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তার। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে অফিস সহকারী পদে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন তিনি। ২০০০ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তিনি ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে ক্যাশিয়ার পদে বদলি হন। এই ধারাবাহিকতায় তিনি বর্তমান পদে যোগ দেন।

আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খানম একই প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা শুরু করেন। মূলত স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্য তারা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

অনুমোদনকৃত মামলার আসামিরা হলেন-কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা. মো. রেজাউল করিম (অবসর), অধ্যাপক ডা. সুবাস চন্দ্র সাহা, চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন এবং লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল রশিদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিক্যাল এডুকেশন শাখার সাবেক হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা  মো. আবজাল হোসেন, রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মিসেস রুবিনা খানম, কক্সবাজার জেলার হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা সুকোমল বড়ুয়া, এসএএস সুপার সুরজিত রায় দাস (অবসর), কক্সবাজার জেলার হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা পংকজ কুমার বৈদ্য, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের হিসাবরক্ষক হুররমা অকতার খুকী, চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়নের সাবেক উচ্চমান সহকারী মো. খায়রুল আলম (বর্তমানে প্রধান সহকারী)।  

দুদকের উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলমের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি টিমের দাখিল করা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দশ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন দেয় সংস্থাটি।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ এপ্রিল ২০১৯/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়