ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

‘রাজউকের কর্মকর্তাসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা’

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ২২ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘রাজউকের কর্মকর্তাসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা’

নিজস্ব প্রতিবেদক : গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী  শ ম রেজাউল করিম  বলেছেন, এফ আর টাওয়ারের অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত রাজউকের কর্মকর্তাসহ সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখব। যারা অবসরে গেছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য প্রক্রিয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা এখনো কর্মরত আছেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বুধবার সচিবালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে গত ২৮ মার্চ বনানী মডেল টাউনের এফ আর টাওয়ারে অগ্নিদূর্ঘটনা সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের তদন্তের বিষয় ছিল এফ আর টাওয়ার নির্মাণে কোনো অনিয়ম, ব্যত্যয় হয়েছে কি না, হয়ে থাকলে তা কি ধরনের হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন স্তরে কী কী অনিয়ম হয়েছে। এ অনিয়মের সাথে মালিকপক্ষ, ডেভেলপারপক্ষ এবং রাজউকে তৎকালীন কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা ছিলেন তাদের সম্পৃক্ততা কিভাবে ছিল। কী কী নিয়মের লঙ্ঘন হয়েছে’।

মন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯০ সালে এফ আর টাওয়ারের ১৫তলা পর্যন্ত ভবনের অনুমোদন সঙ্গত ছিল। পরবর্তীতে ১৫ তলা থেকে ১৮ তলা পযন্ত নকশা অনুমোদনের প্রক্রিয়া যথাযথ ছিল, কিন্তু অনুমোদকালীন বিদ্যমান বিধির আওতায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি, আবেদনকালীন বিদ্যমান আইনের আওতায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে আইনগত বিষয়ের ব্যত্যয় ঘটেছে। ১৮ তলার উর্ধ্বে ভবনের সকল তলা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। এফ আর টাওয়ার কর্তৃপক্ষ একটি প্ল্যানের অনুমোদিত কপি দেখানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু রাজউকের রেকর্ডে কোথাও তার কোনো অস্তিত্ব নেই। রাজউকের কাছে সংরক্ষিত নথিতে মূল প্ল্যানেরও কোনো কপি নেই। রাজউকের কোনো অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে অবৈধ যোগাযোগের মাধ্যমে বিল্ডিং এর মালিক ও ডেভেলপার বাইরের একটি প্ল্যান তৈরি  করতে পারে, আইনগতভাবে এই প্ল্যানের কোনো বৈধতা নেই। পরবর্তীতে অসাধু যোগসাজশে ঋণ গ্রহণের অনুমতি প্রদানের প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তাদেরও তদন্তে দায়ী করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ‘তদন্তে রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে পরিদর্শক পযন্ত, রেজিস্ট্রার ব্যবস্থাপনায় যারা ছিলেন, যারা ঋণ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিলেন তাদের সকলকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই ঘটনায় জড়িত হিসেবে রিপোর্টে এসেছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তি হিসেবে আমাদের কাছে অনেক সাক্ষ্য-প্রমাণাদি রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘তদন্তে অনেকগুলো অনিয়ম সনাক্ত হয়েছে, সবমিলে আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি তাদের অভিযোগের থেকে অব্যাহতি পাওয়ার সুযোগ নেই।

মন্ত্রী বলেন, ‘এফ আর টাওয়ারের অবৈধভাবে নির্মিত অংশ ভেঙে ফেলার জন্য আইনগত প্রক্রিয়ায় আমরা কাজ শুরু করেছি। এক্ষেত্রে আমরা আইনকে অনুসরণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব’।

তদন্ত প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে অবৈধভাবে কাজে জড়িত সবার নাম প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যাতে জানতে পারে তদন্তের নামে লুকোচুরি করা হয় না। সত্যকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বা রাজউক চেপে রাখেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সেটা শুধু মুখে না, কথায় কথায় না’।

রাজউক থেকে বহুতল ভবনের অনিয়ম চিহ্নিত করার জন্য ২৪টি পরিদর্শন টিম গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সকল বিল্ডিং পরিদর্শন করবো। প্রাথমিকভাবে বহুতল ভবন পরিদর্শন করা হয়েছে। বহুতল ভবনেরর ভেতরে এ পর্যন্ত রাজউক অনেুমদিত নকশা আছে এমন ভবন পাওয়া গেছে ১১৩৬টি, রাজউক ব্যতিত অন্যান্য সংস্থা অনুমোদিত নকশা আছে এমন ভবন ২০৭টি, ভবন মালিকগণ রাজউক অনুমোদিত নকশা প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছে এমন ভবনের সংখ্যা ৪৩১টি এবং সরকারি ভবনের নকশা প্রদর্শন করা হয়নি  এমন ভবন ৪৪টি। নিদিষ্ট সময়ে নকশা প্রদর্শনে ব্যর্থ ভবনের বিরুদ্ধে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যত্যয়কৃত ভবনের অনিয়মকৃত অংশ ভেঙে ফেলার জন্য আমরা নির্দেশ দেব। ভেঙে না ফেললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখিয়েছি। রাজউকের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সম্পৃক্তদের নাম উল্লেখ করে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। কাজেই আপনারা আশ্বস্ত থাকতে পারেন আইনানুগ প্রক্রিয়ায় যারাই অভিযুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনোভাবেই কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই’।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘পরিদর্শন একটি চলমান প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে সকল ভবন পরিদর্শন করা হবে’।

এ সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসিরসহ তদন্ত কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।



রাই‌জিং‌বি‌ডি/ঢাকা/২২ মে ২০১৯/আসাদ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়