ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ২৭ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন

মামুন খান : ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফি অল্প বয়সের একটি মেয়ে এং মাদ্রাসার ছাত্রী ছিলেন। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের আরো কৌশলী হয়ে নারী ও শিশুবান্ধব উপায়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন ছিল। তিনি একজন সুশৃঙ্খল পুলিশ বাহিনীর সদস্য হয়েও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভিকটিম নুসরাতের শ্লীলতাহানির ঘটনার বক্তব্য ভিডিও ধারণ ও প্রচার করে অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। যার ফলে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।

ফেনীর সোনাগাজী থানা পুলিশের সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় দেওয়া প্রতিবেদনে এমনটিই উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা।

এ প্রতিবেদন আমলে গ্রহণ করে বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। একইসঙ্গে আদালত আগামী ১৭ জুন গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনের মতামতে বলা হয়, বাদীর দাখিলকৃত মামলায় দুইজন সাক্ষী এবং ঘটনা সংশ্লিষ্টে ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া সংক্রান্তে বিশেষজ্ঞ মতামত এবং দালিলিক সাক্ষ্যের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়েছে যে, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গত ২৭ মার্চ বেলা ১টা ১৮ ঘটিকার সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল দ্বারা থানায় আগত ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করেন, যাতে ভিকটিমের ব্যক্তিগত তথ্যপরিচিতি প্রকাশ পায়। এ অপরাধে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়। এ ছাড়া, ধারণকৃত ভিডিও গত ৮ এপ্রিল শেয়ারইট অ্যাপ্সের মাধ্যমে সজল নামক ডিভাইসে প্রেরণ করে প্রচার করায় একই আইনের ২৯ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়।

অন্যদিকে, ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যক্তিগত মোবাইলফোনে ভিডিও ধারণ করে তা ডিজিটাল বিন্যাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ায় সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির উপক্রম করায় একই আইনের ৩১ ধারায় অপরাধ করেছেন।

মামলায় যে সকল ধারায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন আমলে গ্রহণ করা হয়েছে ওই সকল ধারায় সর্বোাচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদী সুমন। তিনি বলেন, ‘তিনটি ধারার প্রত্যেকটিতে ৫ বছর করে ১৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। ’

সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে ফেসবুকে লাইভকারী আলোচিত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন গত ১৫ এপ্রিল আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২৭ মার্চ মেয়েটিকে অধ্যক্ষ তার কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেছেন বলে অভিযোগ উঠলে তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন অধ্যক্ষ এবং ছাত্রীকে থানায় নিয়ে যান। ওই সময় ওসি নিয়মবহির্ভূতভাবে জেরা করতে করতেই অনুমতি ব্যতিরেকে রাফির বক্তব্য ভিডিও করেন। পরবর্তীকালে ওই ভিডিও ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি অত্যন্ত অপমানজনক এবং আপত্তিকর ভাষায় নুসরাতকে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। এমনকি ভিডিওর এক পর্যায়ে দেখা যায়, রাফিকে বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করেছে কি না, সে কথা ওসি জিজ্ঞেস করেন, যা অত্যন্ত মানহানিকর।

অভিযোগে বলা হয়, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ও মামলা তুলে নেওয়ার জন্য গত ৬ এপ্রিল মুখোশ পরা ৪/৫ জন রাফিকে চাপ প্রয়োগ করলে রাফি মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর তারা রাফির গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। টানা পাঁচ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রাফি মারা যান।

ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নিয়মবহির্ভূতভাবে অনুমতি ব্যতিরেকে নুসরাত জাহান রাফির ভিডিও ধারণ করে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার করেন এবং অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষা প্রয়োগ করে মানহানি করেছেন, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। বাদী মামলাটি আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মে ২০১৯/মামুন খান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়