ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

উচ্চস্বরে নিজের সঙ্গে কথা বলা ভালো?

স্বপ্নীল মাহফুজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫১, ১৩ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উচ্চস্বরে নিজের সঙ্গে কথা বলা ভালো?

প্রতীকী ছবি

স্বপ্নীল মাহফুজ : সচেতনভাবে হোক অথবা অবচেতনভাবে হোক, সারাদিন আমরা বিভিন্ন বিষয়ে মনে মনে নিজের সঙ্গে কথা বলি, যেমন- আমার দেরি হতে যাচ্ছে, এ কাজটা আমার মতো দুর্বল লোকের পক্ষে করা সম্ভব না, আমি এ জামাটা পছন্দ করি, আমি কাজটা ঠিক সময়ে করতে পারিনি, এটা খুব সহজ কাজ, বিয়ের বয়স চলে যাচ্ছে, মনের মতো মানুষ পেলাম না, আমার সম্ভবত ক্যানসার হয়েছে অথবা আর কখনো বউয়ের গায়ে হাত তুলব না। কিন্তু এ ধরনের শব্দগুচ্ছ কি কখনো উচ্চস্বরে নিজেকে বলেছেন? আপনার উত্তর হ্যাঁ হলে আপনি বিজ্ঞানের সঠিক পাশে আছেন।

ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কার, সাইকোথেরাপিস্ট এবং ফাইন্ডিং ইওর রুবি স্লিপার্স: ট্রান্সফরমেটিভ লাইফ লেসন’স ফ্রম দ্য থেরাপিস্ট'’স কাউচের লেখক লিসা ফেরেন্টজ বলেন, ‘গবেষণায় পাওয়া গেছে যে উচ্চস্বরে কিছু ভাবনার প্রকাশ বর্তমান ও ভবিষ্যতকে জয় করতে বা তুলনামূলক ভালো ফল পেতে সাহায্য করে এবং এ চর্চাটি আমাদের সকলেরই করা উচিত।’

ফেরেন্টজ প্রায়সময় তার গ্রাহকদের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটাতে অথবা তাদের দৈনন্দিন কাজকে আরো ফলপ্রসূ করতে উচ্চস্বরে নিজের সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘নিজের ভাবনা উচ্চস্বরে নিজেকে শুনানো খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ অভ্যাস কোনো কাজের প্রতি ভাবনা, মানসিক অবস্থা ও আচরণের ধরন সম্পর্কে এমন কিছু শুনিয়ে থাকে যা আমরা সাধারণত লক্ষ্য করতে পারি না।’ যদি আমরা নিজেদের কানকে বেশি করে ইতিবাচক বা অণুপ্রেরণামূলক কথা শুনাই, তাহলে উদ্যম ও সফলতার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

মানসিক শক্তি বাড়ানোর একটি ভালো উপায় হলো স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা, নিজের শক্তিশালী দিক ও ইতিবাচক প্রতিজ্ঞা বা দৃষ্টিভঙ্গি লিখে রাখা এবং আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তা উচ্চস্বরে নিজেকে শুনানো। প্রথম প্রথম লজ্জা অনুভূত হতে পারে, কিন্তু হাল ছেড়ে দেবেন না। ফেরেন্টজ বলেন, ‘অন্যান্য যেকোনো কিছুর মতো নিজে নিজে উচ্চস্বরে কথা বলার চর্চায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে আপনি আবিষ্কার করবেন যে এ অভ্যাস কতই না সহজ।’ প্রকৃতপক্ষে, ইউনিভার্সিটি অব লেথব্রিজের একটি গবেষণায় যেসব ছাত্রদেরকে নিজের সঙ্গে ইতিবাচক কথা  বলা ও নেতিবাচক কথা এড়িয়ে যাওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল তারা দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ ও প্রতিক্রিয়া পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিল।

ফেরেন্টজ সম্ভাব্য ভীতিকর বা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে উচ্চস্বরে নিজের কানকে উদ্দীপনামূলক কথা শুনাতে উৎসাহিত করছেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা নিজেদেরকে ইতিবাচক কথা শুনাই, তখন আমাদের মানসিক শক্তি বেড়ে যায়- এর ফলে আমাদের সামনে এগিয়ে আসা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সাহস পেয়ে থাকি।’ একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব অ্যাথলেট প্রতিযোগিতার পূর্বে প্রায়সময় নিজেদের সঙ্গে উদ্দীপনামূলক কথা বলত তাদের সফলতার হার বেশি ছিল।

ইতোমধ্যে জেনেছেন যে নিজেকে ইতিবাচক কথা শুনালে মানসিক শক্তি ও কঠিন কাজে সফলতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, কিন্তু নিজেকে হতাশার কথা ব্যক্ত করলে এর বিপরীতটা ঘটতে পারে। হতাশা আপনার মধ্যে উদ্যমহীনতা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে চ্যালেঞ্জিং কাজ তো দূরে থাক- সহজ কাজেও অনীহা সৃষ্টি হবে। ইতিবাচক ভাবনা কাজে লেগে থাকার অনুপ্রেরণা দিয়ে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়, কিন্তু নেতিবাচক ভাবনা অবশিষ্ট মানসিক শক্তিও নিঃশেষ করে ব্যর্থতাকে আরো ত্বরান্বিত করে। তাই সকল ধরনের ভাবনা উচ্চস্বরে প্রকাশের প্রয়োজন নেই, নিজেকে কেবলমাত্র ইতিবাচক বা উদ্দীপনামূলক কথাই শোনান- আত্মবিশ্বাস বা মানসিক শক্তির বিনাশকারী ভাবনা থেকে দূরে থাকুন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ জুন ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়