ডিআইজি মিজানের যত অবৈধ সম্পদ
নিজস্ব প্রতিবেদক : পুলিশের আলোচিত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান এবং তার স্ত্রী, ভাই ও ভাগ্নের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ডিআইজি মিজানুর রহমানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ভাগ্নে পুলিশের এসআই মাহমুদুল হাসান ও ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদ ও সম্পদের তথ্য গোপন ছাড়াও তার ১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার ৭১২ টাকার বৈধ সম্পদ রয়েছে।
মামলার এহাজারে বলা হয়, আসামি মিজানুর রহমান অবৈধ অর্থ দিয়ে বিভিন্ন সময়ে তার নিকট আত্মীয়-স্বজনের নামে বিভিন্ন সম্পদ ক্রয় করে কৌশলে নিজেই ভোগদখল করে আসছেন।
এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে:
ডিআইজি মিজান তার ভাগ্নে মাহমুদুল হাসানের নামে ২০১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলশান-১ এর পুলিশ প্লাজায় ২১১ বর্গফুট আয়তনের একটি দোকান (৩১৪) ২৪ লাখ ২১ হাজার টাকা দিয়ে বরাদ্দ নেন। এই দোকান তারর স্ত্রী সোহেলিয়া আনারের নামে ভাড়া দেখিয়ে নিজের দখলে রাখেন মিজান। তার অর্থে এই দোকান কিনলেও তিনি তা গোপন করেন।
আসামি মিজানুর রহমান নমিনী হয়ে মাহমুদুল হাসানের নামে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বরে ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখায় এফডিআর অ্যাকাউন্ট খুলে ৩০ লাখ টাকা জমা করেন। দুদকের অনুসন্ধানকালে এই এডিআর ভেঙে সুদ-আসলে ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭ টাকা উত্তোলন করে স্থানান্তর করেন।
ডিআইজি মিজান তার ভাই মাহবুবুর রহমানের নামে ২০১৬ সালে নিউ বেইলী রোডে ৬৬ লাখ টাকায় ২৪০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কেনেন। এ ফ্ল্যাটটি ডিআইজি মিজানের দখলে রয়েছে। এটা তার অর্থে কেনা।
ডিআইজি মিজান তার ভাগ্নে মাহমুদুল হাসানের নামে ২০১৬ সালে রাজধানীর কাকরাইলের ‘নির্মাণ সামাদ ট্রেড সেন্টার’ এ ১৭৭৬ বর্গফুটের একটি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকায় কেনেন।
ডিআইজি মিজান অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে এভাবে তার স্বজনদের নামে সম্পদ কিনে তার তথ্য গোপন করেন বলে এহাজারে বলা হয়।
একই সাথে ডিআইজি মিজানসহ চার আসামির বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুদক। মামলা করার পর তারা যাতে বিদেশে না যেতে পারেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইমিগ্রেশনের বিশেষ পুলিশ সুপারের বরাবর চিঠি দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনজুর মোর্শেদ।
এছাড়া, ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পুলিশের আলোচিত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও দুদকের বরখাস্তকৃত পরিচালক এনামুল বাছিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুদক। তাদেরকে আগামী ১ জুলাই হাজির হতে বলা হয়েছে।
সোমবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির পরিচালক মনজুর মোর্শেদ বাদী হয়ে আজকের মামলাটি ( মামলা নম্বর ১) দায়ের করেন। এই মামলার মাধ্যমে দুদক নিজ কার্যালয়ে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু করল। এর আগে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশন সভায় মামলাটি অনুমোদন দেওয়া হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন-২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত বছরের ৩ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ডিআইজি মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। প্রথমে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছিলেন দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী। পরে এই দায়িত্ব পান এনামুল বাছির। এরপর ডিআইজি মিজানুর রহমান দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার পর দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে গত ১০ জুন সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান দুদকের আরেক পরিচালক মনজুর মোর্শেদ।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুন ২০১৯/এম এ রহমান/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন