ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দুদকের ২ মামলা

আবজাল দম্পতির ২৮৫ কোটি টাকা পাচার

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৩, ২৭ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আবজাল দম্পতির ২৮৫ কোটি টাকা পাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা পাচার এবং ৩৪ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন, দুদক।

বৃহস্পতিবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-ঢাকা-১ এ কমিশনের উপ-পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে মামলা দুটি করেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বিষয়টি জানিয়েছেন।

দুই মামলায় আবজালকে আসামি করা হলেও তার স্ত্রী রুবিনাকে একটি মামলার আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামি মিসেস রুবিনা খানম নিজ নামে ট্রেড লাইসেন্স খুলে তার স্বামী মো. আবজাল হোসেনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসাপাতালসমূহে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও মালামাল সরবরাহ করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। অবৈধ প্রক্রিয়ায় এ সকল অবৈধ আয়কে বৈধ করার পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা নিজ নামে ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং রূপা ফ্যাশনের নামে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকে বিভিন্ন হিসাব চালু করেন। এসব ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময় ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা উত্তোলণ করে উহার উৎস, প্রকৃতি, মালিকানা স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মালিনল্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন। একইভাবে তার স্বামী বরখাস্তকৃত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আবজাল হোসেন  একজন সরকারি চাকুরিজীবি হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের হিসাবসমূহে সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ করেছেন।  অর্থ্যাৎ ২৮৪ কোটি ৫১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৫৫ টাকা পাচার, হস্তান্তর কিংবা স্থানান্তর করে মানিলন্ডারং অপরাধ করেছেন তারা। যে কারনে আবজাল দম্পতির বিরুদ্ধে মালিনল্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ২ (ফ) ধারায় পৃথক দুইটি মামলা করেছে দুদক।

অন্যদিকে মিসেস রুবিনা খানম তার স্বামী আবজাল হোসেনের সহযোগিতায় নিজ নামে ৫ কোটি ৯০ লাখ ২৮ হাজার ৯২৬ কোটি টাকার  স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি গোপনসহ মোট ৩১ কোটি ৫১ লাখ ২৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ ভোগদখলে রেখেছেন বলে ওই একই মামলায় বলা হয়েছে। যা দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) এবং ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ মামলায়  আবজাল ও তার স্ত্রীকে আসামি করা হয়েছে।

অপর মামলায় আবজাল হোসেনের বিরুদ্ধ ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা পাচারের অভিযোগের পাশাপাশি ২ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ ভোগ দখলে রেখেছেন এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। যে কারণে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) এবং ২৭ (১) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

এর আগে ২৬ এপ্রিল কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে সরকারের সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিক্যাল এডুকেশন শাখার সাবেক হিসাবরক্ষক আবজাল ও তার স্ত্রীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

আবজাল হোসেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিক্যাল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার প্রাক্তন স্টেনোগ্রাফার। এখন তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ব্যবসা করেন। এ দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে গত ১০ জানুয়ারি আবজাল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। আবজাল ও রুবিনার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক। আবজাল হোসেনের বাড়ি ফরিদপুরে। ১৯৯২ সালে তৃতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তার। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে অফিস সহকারী পদে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন তিনি। ২০০০ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তিনি ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন।

আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খানম একই প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা শুরু করেন। মূলত স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্য তারা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুন ২০১৯/এম এ রহমান/ সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়