ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিরাট কোহলির সাক্ষাৎকার : পর্ব-১

মো. নুরুল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিরাট কোহলির সাক্ষাৎকার : পর্ব-১

ভারতের তারকা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি

মো. নুরুল আমিন : উপমহাদেশ বড়ই বিচিত্র জায়গা। আবেগপ্রবণ উপমহাদেশের মানুষের আবেগ যেন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় পছন্দের তারকাকে চোখের সামনে পেলে। ধরুন ইংল্যান্ডের রাস্তায় ঘুরতে বের হয়েছেন জো রুট কিংবা অ্যালিস্টার কুক। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে দু’চারজন হয়তো তাদের চিনতে পারে। চিনতে পারলে বড়জোর তা হাই-হ্যালো পর্যন্ত গড়ায়।

 

কিন্তু বিরাট কোহলির মতো উপমহাদেশীয় তারকার বেলায় ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। উন্মুক্ত রাস্তায় হাঁটতে বের হওয়া তো দূরের কথা কোন স্থানীয় রেস্টুরেন্টে ডিনারে যাওয়াটাও রীতিমত যুদ্ধযাত্রার মতো ব্যাপার। চাইলেই করতে পারেন না অনেক কিছু। যেখানেই যান ভক্তদের ভীড়।

 

মাঠের খেলার বাইরের এই জগতটাকে কিভাবে সামলান ভিরাট কোহলি? সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্যা টেলিগ্রাফ’কে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে মাঠ ও মাঠের বাইরের এমন অনেক কিছু নিয়েই কথা বলেছেন ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ক। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল। আজ প্রকাশিত হল প্রথম পর্ব:

 

প্রশ্ন : কোন ধরনের খ্যাতির বিড়ম্বনায় কি পড়তে হয়?

কোহলি : আসলে, এ ধরনের পরিস্থিতি খুব স্বাভাবিক যখন আপনি একজন ভারতীয় একজন ক্রিকেটার। ভারতে আপনি যখন কোন একটি বিষয়ে খুব ভালো করতে শুরু করবেন মানুষ আপনাকে অলৌকিক ভাবতে শুরু করবে। আপনাকে ছুঁয়ে দেখতে চাইবে, আপনার কথা শুনতে চাইবে। সম্প্রতি আমাকে বাড়ি পরিবর্তন করতে হয়েছে সেখানে প্রতিনিয়ত আগ্রহী মানুষের আগমণ বাড়তে থাকায়। কোন রেস্টুরেন্টে যেতে চাইলে সাথে পুলিশি প্রহরায় থাকতে হয়। আশেপাশের টেবিলে যেন কেউ না থাকে আগে থেকে জানিয়ে রাখতে হয়।

 

প্রশ্ন : ভক্তদের এ ধরনের আচরণকে কিভাবে দেখেন?

কোহলি : এটি এমন একটি বিষয় যে চাইলেও উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। আপনি দূরে থাকতে চাইলে তারা ঠিকই আপনাকে খুঁজে নেবে। তাই আমি প্রথম থেকেই ব্যপারটি খুব স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলাম। কারণ, আমি জানি- তারা আমাকে ভালোবাসে বলেই এমনটা করে। তারা চায় আমি ভালো করি। সীমানার প্রান্তে ফিল্ডিং করার সময় আমি বুঝতে পারি তারা কি চায়। শুধু একটি সেঞ্চুরি। এটি আমাকে আরো ভালো খেলতে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু আজ হয়তো সবাই আমাকে নিয়ে আছে। সবসময় যে এমনটা থাকবে তা নয়। হয়তো অন্য কেউ এসে পাদপ্রদীপের আলো নিজের দিকে টেনে নেবে। আমি সত্যিই এদিনের অপেক্ষায় আছি।

 

 

প্রশ্ন : ভক্তদের নিয়ে বিশেষ কোন ঘটনা মনে পড়ে কি?

কোহলি : একবার আমি বিমানবন্দর থেকে নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে বের হচ্ছি। হঠাৎ কোত্থেকে একজন এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। নিরাপত্তাকর্মীকে আশ্বস্ত করার পর সে আমার হাতদুটো দেখতে চাইল। আমার এখনো মনে আছে সে এমনভাবে হাতদুটো স্পর্শ করলো যেন তারপর তার শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো। সে আমাকে ‘সুপারম্যান’ ভাবছিল বলে মনে হচ্ছিল।

 

প্রশ্ন : যখন এ ধরনের পরিস্থিতি থাকে না, মানে বিদেশ সফরে থাকেন তখন কি করেন?

কোহলি : আপনি যখন অস্ট্রেলিয়া কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকবেন আপনাকে রাস্তায় মানুষ চিনতে পারলেও আপনাকে বিরক্ত করবে না। আমি এই সুযোগটি কখনোই মিস করি না। হেডফোনে গান শুনতে শুনতে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় হেঁটে কাটিয়ে দেই। এই অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ।

 

প্রশ্ন : আপনার পারিবারিক জীবন নিয়ে কিছু বলুন।

কোহলি : আমি খুব দৃঢ় একটি পারিবারিক বন্ধনে বড় হয়েছি। পরিবার এবং খুব কাছের বন্ধুরা সবসময়ই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানি আজকের এই মাতামাতি ১০-১২ বছর পর আর থাকবে না। তখন যাদেরকে আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে তাদের আমি কোনভাবেই দূরে ঠেলে দিতে চাই না।

 

প্রশ্ন : বদলে যাওয়া বিরাট কোহলিকে নিয়ে কিছু বলুন।

কোহলি : আমি সবসময় ফিটনেসকে যেকোনো খেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করি। দুর্দান্ত একটি মৌসুম কাটানোর পরও ২০১২ সালের আইপিএলে ভালো করতে না পেরে আমি খুব হতাশ ছিলাম। সে সময় নিয়মিত অ্যালকোহল পান করা থেকে শুরু করে অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, ঘুমে অনিয়ম ছিল নিত্যদিনের কাজ। এরপর আমি নিজেকে বদলে ফেলার প্রতিজ্ঞা করি। দৈনিক অতিরিক্ত দেড় ঘন্টা শরীরচর্চায় ব্যয় করা থেকে শুরু করে সব ধরনের চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করা শুরু করি। প্রথম দিকটা খুব কষ্ট হলে এর ফল পেয়েছি খুব দ্রুতই। অন্তত ১০ কেজি ওজন কমিয়ে মাঠে আরো শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসীরুপে আবির্ভূত হওয়াটা খুব কার্যকরী ছিল। ২০১৫ সালে আমি ভারোত্তোলন ও শুরু করি। ভালো ফিটনেস আপনাকে সবসময় আরো মানসিক শক্তি প্রদান করে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ ডিসেম্বর ২০১৬/মো. নুরুল আমিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়