ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যেসব ক্ষেত্রে মেসেজের পরিবর্তে ফোন কল জরুরি

আসিফ রাতুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৮ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেসব ক্ষেত্রে মেসেজের পরিবর্তে ফোন কল জরুরি

প্রতীকী ছবি

আসিফ রাতুল : বন্ধুত্ব, সম্পর্ক ও কর্মজীবনের খাতিরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি টেক্সট মেসেজ না পাঠিয়ে ফোন করবেন।

* প্রেমের সর্ম্পক ভাঙা
যেখানে আপনি একাধিক তারিখে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বা বছরব্যাপী একটি গভীর প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল, সেখানে টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে যদি আপনার সম্পর্ক শেষ করে দেন, তাহলে তা খুব বেদনাদায়ক এবং অসম্মানজনক। এ কারণে অনলাইন ডেটিং বিশেষজ্ঞ জুলিয়া স্পাইরা বলেন যে, ‘এক্ষেত্রে সাক্ষাতে বলা কিংবা ফোন হাতে নেওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘আপনি কারো সঙ্গে নগ্নতায় ঘনিষ্ঠ হয়েছেন কিংবা কোনো এক সময় দুজনে ভবিষ্যত চিন্তাভাবনা করেছেন, ভদ্রতা হচ্ছে তার সঙ্গে দেখা করে বলা কিংবা ফোন করা।’ স্পাইরা বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকলে তা সরাসরি আলোচনায় দূর হয়, যা সম্পর্ক ভাঙা রোধ করে।’ 

* দেখা করার তারিখ বাতিল করা
কখনো কখনো যথেষ্ট সাহস বা আয়োজনের প্রয়োজন হয় ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে প্রথমবার দেখা করার ক্ষেত্রে। স্পাইরা বলেন, ‘আপনি কোনো কারণে নির্দিষ্ট দিনে দেখা করতে অপারগ হোন, তাহলে ফোন করে তারিখ পরিবর্তনে বিষয়টি জানান। কেননা যদি কেউ দেখা করার তারিখ সম্পর্কে উত্তেজিত হয়ে থাকে এবং আপনি যদি তা একটি মেসেজের মাধ্যমে বাতিল করে দেন তাহলে ব্যাপারটি আসলেই দুঃখজনক হবে।’

দুঃসংবাদ প্রদান করা
চাকরি হারানো থেকে শুরু করে প্রিয়জন হারানো- দুঃসংবাদ সবসময় কঠিন হয়ে থাকে। কিন্তু যখন আপনি কাউকে বাস্তবতা সম্পর্কে বলবেন তখন তাদের মন খারাপ হতে পারে, তাই আপনার সাধ্যমতো তাদের প্রস্তুত করা জরুরি এবং একটি টেক্সট মেসেজ এক্ষেত্রে কার্যকর উপায় হতে পারে না।

বিবাহ এবং পরিবার থেরাপিস্ট কোর্টনি গেটার বলেন, অন্য ব্যক্তি আপনার অ-মৌখিক সংকেত দেখতে পারে না এবং আপনি আসলে কেমন অনুভূতি প্রকাশ করছেন তাও বুঝতে পারে না। এছাড়াও, আপনি জানেন না যে দুঃসংবাদ দেওয়ার সময় অন্য ব্যক্তিটি কী অবস্থায় আছে। নিশ্চয়ই কেউ একটি বড় সভা, পরীক্ষা বা ইভেন্টের আগে দুঃসংবাদ কামনা করবেন না। তাই ভালো পরিকল্পনা হচ্ছে, সামনা সামনি কোথাও দেখা করে সংবাদটি জানাতে পারেন অথবা তা সম্ভব না হলে ফোন করে জানাতে পারেন।

সংবেদনশীল, ব্যক্তিগত তথ্য পাঠানো
আপনি আপনার পরিচিত মানুষদের বিশ্বাস করে গোপন তথ্য মেসেজ করতে পারেন, কিন্তু হ্যাকারদের এরকম সততা নেই। তাই ব্যক্তিগত, সংবেদনশীল বা আর্থিক তথ্য মেসেজের মাধ্যমে না পাঠানোই ভালো। কোর্টনি গেটার বলেন, আপনি জানেন না যে অন্য কেউ আপনার তথ্য দেখছে কিনা এবং তা হয়তো সাইবার দুনিয়া সম্পূর্ণরূপে মোছা হয়নি। সুতরাং টেক্সট মেসেজে অথবা ইমেইলে ব্যক্তিগত ছবি বা বার্তা বা ছবি পাঠানোর আগে নিজেকেই ভাবতে হবে ঝুঁকি কতখানি রয়েছে। যদি একটিও নেতিবাচক ফলাফল ভাবনায় আসে, তাহলে পাঠানোর ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনা করুন।

গুরুতর চিন্তা প্রকাশ করা
আপনার কিশোর সন্তান জিজ্ঞেস না করেই গাড়ি নিয়ে গেছে, আপনার সঙ্গী মদ্যপান করেছে, আপনার সহকর্মী মিটিংয়ের সময়সীমার মধ্যে আসেনি- যখন আপনি এ ধরনের গুরুতর উদ্বেগে আছেন তখন মেসেজ টাইপ না করে সরাসরি কথা বলতে পারেন। ‘মেসেজের কথোপকথনের মধ্যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভাব থাকে না। এতে সহজে ভুল ভাবনার সৃষ্টি হতে পারে এবং সমস্যা প্রথম অবস্থান থেকে আরো বড় অবস্থানে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে।’ – বলেন মনোবিজ্ঞানী নিকি মার্টিনেজ।

বিষণ্ণতার প্রকাশ
আপনার বন্ধুরা রেস্টুরেন্টে যেয়ে ইনস্টাগ্রামে ছবি পোস্ট করেছে এবং তারা আপনাকে আমন্ত্রণ করেনি। অথবা আপনার প্রাক্তন প্রিয়জন নতুন সঙ্গী পেয়েছে। আপনি যদি কাউকে অনলাইনে দেখে হতাশ হয়ে পরেন তাহলে আপনার হাত থেকে ফোন রেখে দেওয়াই ভালো।

সম্পর্ক বিশেষজ্ঞবিদ এবং লেখক ডন মাইকেল বলেছেন যে, যেকোনো ধরনের বিষন্ন মেসেজ অবিলম্বে যেকোন ব্যক্তির অনুভূতি পাল্টে দিতে পারে। এছাড়াও, যদি আপনি সত্যিই অতিমাত্রায় উত্তেজিত হন, তাহলে মেসেজ পাঠানোর পূর্বে কয়েক মিনিট হাঁটার সিদ্ধান্তটা খুব খারাপ নয়। মেসেজে পাঠানোর পরে অনুতপ্ত হলে, আপনি তা আর ফিরিয়ে নিতে পারবেন না।

পরচর্চা করা
টেক্সট মেসেজে কারো সম্পর্কে বাজে কথা লেখার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা আপনার কথাগুলো অন্যকেউ দেখে ফেলায় তা স্ক্রিনশট সহ ছড়াতে পারে। তৃতীয় পক্ষকে দেখাতে চান না এমন কিছু টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে ফাঁস হয়ে বড় ইস্যুর ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বান্ধবীকে বলা হয়েছে এমন কোনো মেসেজ ফেসবুক পোস্ট হয়ে যেতে পারে অথবা আপনার বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হতে পারে। যদিও আপনি একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে বার্তা প্রেরণ করছেন, তবুও দ্বিতীয়বার ভাবুন। আপনাকে কখনো বিপদে ফেলতে পারে এমন কোনো ভয়ানক বা গোপন তথ্য পাঠানো থেকে বিরত থাকুন।

মেসেজে ঝগড়া করা
মেসেজের মাধ্যমে শেষ কথাটা জানিয়ে দেওয়াটা সেসময় আপনাকে সাময়িকভাবে কিছুটা শান্তি দিলেও, কয়েক ঘণ্টা পর এটার জন্য দু: খ হতে পারে। আর যদি আপনি আপনার সঙ্গীর সঙ্গে ঝগড়া করেন তাহলে এটা বিষয়টাকে সহজে আরো খারাপ করতে পারে। আপনার সঙ্গীকে জানিয়ে দেন যে, বাসায় এসে ঝগড়ার বিষয় নিয়ে কথা বলবেন অথবা জরুরি দেখা করে কথা বলুন। মনোবিজ্ঞানী ও সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ সারাহ মেন্ডেল বলেন, ভুল বোঝাবুঝি মেসেজের মাধ্যমে চালালে তা আপনার অবস্থানকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। কারণ মুখে ফুটে ওঠা বহিঃপ্রকাশ পড়তে পারবেন না এবং শব্দের পেছনের অভিপ্রায় বুঝতে পারবেন না। আপনার সঙ্গীর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে এবং তার কন্ঠ শোনার সময় মস্তিষ্কে ভালো হরমোনের উৎপত্তি হয়, যা শরীরে একটা স্বাচ্ছন্দ্যের আমেজ তৈরি করে সহায়তা করে সঙ্গীকে চুম্বন দিয়ে মিটমাট করার জন্য।

একতরফা সুদীর্ঘ আলোচনা
কাউকে পাঠানো মেসেজের উত্তর পাচ্ছেন না? এক্ষেত্রে অন্যের ওপর দোষ দেওয়ার আগে, নিজের ভুল খুঁজুন। আপনি সুদীর্ঘ অনেক কথা লিখে মেসেজ করেছেন এবং কিছুটা সময় অপেক্ষা না করে বরঞ্চ বার বার মেসেজ পাঠাচ্ছেন, এটা কাউকে বিরক্তি করতে পারে। খুব মন খারাপ হলে ফোন করে দেখতে পারেন। তবে মেসেজ পাঠালে তার উত্তরের জন্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করাই উচিত। অন্যকে তার প্রয়োজনীয় সময়টা দেয়া উচিত, সঙ্গে সঙ্গে উত্তর না পেয়ে একের পর এক দৃষ্টি আকর্ষণের মেসেজ পাঠানো উচিত নয়। হতে পারে তারা আসলেই ব্যস্ত আর বার বার ম্যাসেজের মাধ্যমে আপনি শুধু তাদের জ্বালাতন করছেন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ মার্চ ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়