ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর গাছ (ভিডিও)

প্রকাশিত: ০১:৫১, ২৮ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর গাছ (ভিডিও)

মোস্তাফিজুর রহমান রুবেল : গাছ মানুষের জন্য উপকারী, পরিবেশের বন্ধু। কিন্তু এমন গাছ ও রয়েছে, যা আপনার ক্ষতির কারণ এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

এমন একটি বিষাক্ত গাছের নাম ‘ম্যাঞ্চিনীল ট্রি’। এর প্রতিটি অংশই বিষাক্ত। শরীরে লাগলে আপনার ত্বক ক্ষত হবে, চোখ অন্ধ এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘হিপোম্যানি ম্যান্সিনেলা’। গ্রিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত গাছ হিসেবে এই গাছের নাম উঠে এসেছে। স্প্যানিশ শব্দ ‘ম্যাঞ্জানিলা’ থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে, যার অর্থ ‘ছোট আপেল’। এই গাছের ফল এবং পাতা আপেল গাছের মতো দেখতে হওয়ায় এই নামকরণ করা হয়েছে। যদিও আপেল গাছ উচ্চ শক্তি ও পুষ্টিকর ফল উপহার দেয়, অন্যদিকে এই গাছ জীবন বিধ্বংসী বিষ দেয়।

কোথায় এই গাছ পাওয়া যায়?

 

এই গাছ ফ্লোরিডা, ইউএস, মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান এবং উত্তর দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায়। উপকূলীয় সমুদ্রসৈকত এবং লোনা জলাভূমিতে ম্যানগ্রোভের মধ্যে জন্মায়।

গাছটির বর্ণনা:

ম্যাঞ্চিনীল গাছ চিরহরিৎ প্রজাতির এবং ৪৯ ফিট পর্যন্ত উচ্চতার হতে পারে। ফুল ছোট হয় এবং রঙ সবুজাভ-হলুদ। পাতা চকচকে সবুজ এবং গাছের ছাল লালচে ধূসর রঙের হয়। সবুজ বা সবুজাভ-হলুদ ফল আপেলের চেহারার অনুরূপ।

কেন এই গাছ এত মারাত্মক?

এই গাছের প্রতিটা অংশ প্রবলভাবে বিষাক্ত। এই গাছ এত বিষাক্ত হয়ে ওঠার কারণ সম্পূর্ণভাবে এখনো জানা যায়নি। গাছটির রসে রয়েছে ফরবল এবং অন্যান্য ত্বক যন্ত্রণাদায়ক উপাদান, যার সংস্পর্শে শরীরে প্রচন্ডভাবে অ্যালার্জি ডার্মাটাইটিস হয়। এমনকি বৃষ্টির দিনে যদি কেউ এই গাছের নিচে আশ্রয় গ্রহণ করে, তাহলে পানি ধোয়া রস চামড়ায় ফোস্কা সৃষ্টি করে। গাড়ির রঙ নষ্ট হয়ে যায় এই গাছের রস পড়লে। যদি এই গাছ পোড়ানো হয় তাহলে এর ধোঁয়া চোখের জন্য অনেক ক্ষতিকর।

এর চেয়েও বড় খারাপ গুণ হচ্ছে, অনেকের অভিযোগ- গাছটির ফল খেলে মানুষের নিশ্চিত মৃত্যু ঘটে। যদিও আধুনিক নথিপত্রে কোনো মৃত্যু ঘটনার রিপোর্টের অস্তিত্ব নেই। তবে কিছু রিপোর্টে এই গাছের ফল খেয়ে চরম শারীরিক যন্ত্রণার কথা উল্লেখ রয়েছে।

যেসব জায়গায় এই গাছ জন্মে সেখানকার মানুষজনকে এই গাছের কাছে না ঘেষার জন্য সতর্ক করে সরকারের পক্ষ থেকে নোটিশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। চরম বিষাক্ততার কারণে ম্যাঞ্চিনীল গাছ বিভিন্ন থ্রিলার ও উপন্যাসে প্রায়ই স্থান পাচ্ছে।

একটিমাত্র প্রাণী এই গাছে বাস করে

বেশিরভাগ পাখি এবং জন্তু এই গাছ থেকে দূরে থাকে। তবে একটি মাত্র প্রাণী সব বিপদ উপেক্ষা করে গাছটিতে বসবাস করে। প্রাণীটি হচ্ছে, গুইসাপ প্রজাতির ছোট্ট সরীসৃপ ব্ল্যাক-স্পাইনি ইগুয়ানা। এটি এই গাছে বসবাস তো করেই, পাশাপাশি গাছটির ফল ও খায়, যারা এই গাছটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবে মনে করে তাদেরকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে।

ম্যাঞ্চিনীল গাছের উপকারী দিক

এই গাছের সঙ্গে ‘ভয়ংকর’ শব্দটি যুক্ত হলেও, ইকোসিস্টেমে গুরুত্বপূণ অবদান রেখে চলেছে। ঝড় থেকে উপকূলীয় এলাকাকে রক্ষায় এটি প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ প্রতিবন্ধক হিসেবে ভূমিকা রাখে। এই গাছের শেকড় মাটি ধরে রেখে সমুদ্র সৈকতের ক্ষয় রোধ করে।

মানুষও ইতিমধ্যে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এই গাছের ব্যবহার শুরু করেছে। সাবধানতার সঙ্গে এই গাছ কাটছে এবং বিষাক্ত রস রোদে শুকাচ্ছে। এরপর এর কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করা হচ্ছে। গাছটির আঠা মাঝে মধ্যে ওষুধি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং শুকনো ফল মুত্রবর্ধক হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ মার্চ ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়