ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কোরবানির ছাগল কেনার পর করণীয়

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ২৭ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কোরবানির ছাগল কেনার পর করণীয়

ছবি : সংগৃহীত

ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান : ঈদুল আজহার আর বেশিদিন বাকি নেই। অনেকেই হয়তো পছন্দের কোরবানির ছাগল ইতিমধ্যে কিনে ফেলেছেন।

কোরবানির ছাগল বলে কথা। তাই দেখা যায় বাজার থেকে নিয়ে আসার পর অনেকেই যত্ন করে ছাগলকে বেশি খাওয়াতে থাকেন। তবে কোরবানির আগে ছাগলের খাবারের ব্যাপারে সচেতন থাকাটা খুবই জরুরি। অন্যথায় ছাগল অসুস্থ হয়ে পড়েছে অথবা কিনে আনার কদিন পরই মারা গেছে- এমন দুর্ঘটনার মুখোমুখি হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু হবে না।

চাল, গম, আটা... যা পায় ছাগল তাই খায়। অনেকে বারবার এসব খাবার ছাগলের সামনে দিয়ে রাখেন। তখন ছাগল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি খেয়ে ফেলে। যা ছাগলের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে, দ্রুত চিকিৎসার অভাবে মারাও যেতে পারে।

ভাত, চাল, গম ও যেকোনো দানাদার খাদ্য বেশি পরিমাণে খেলে ছাগলের হজমে সমস্যা হয়। বেশি পরিমানে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারে পেটের মধ্যে খুব বেশি পরিমানে ভোলাটাইল ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি হয়। যার ফলে ছাগলের পেট ফুলে যায়। যাকে ব্লক বা কার্বোহাইড্রেট এনগ্রজমেন্ট ও বলা হয়। ফলে ছাগলের শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হয়। জাবর কাটে না। প্রসাব পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়।

এছাড়া বেশি পরিমাণে কাঁঠাল পাতা খাওয়ালে, কাঁঠালের পাতায় ফসফরাস বেশি থাকায় মূত্রনালী ও মূত্রথলীতে পাথর জমে। যাকে ইউরোলিথিয়াসিস বলে। এর ফলেও ছাগলের প্রসাব বন্ধ হয়ে যায়। উপযুক্ত চিকিৎসার অভাব হলে ছাগলের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। সাধারণত খাসির ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি হয়।

ব্লট বা কার্বোহাইড্রেট ইনগ্রোজমেন্ট হলে শরীরের বেশি পরিমান ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি হয়, যা নিয়ন্ত্রণের জন্য রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ান এর পরামর্শে ক্ষায়ীয় দ্রবণ যেমন ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (বাজারে নোব্লোট বা অ্যান্টি ব্লোট নামে পাওয়া যায়) খাওয়াতে হয়। অবস্থা গুরুতর হলে বাম পেটে ছিদ্র করেও গ্যাস বের করা হয়ে থাকে।

ইউরোলিথিয়াসিস এর ক্ষেত্রে প্রথমে পাথরের উপস্থিতি লক্ষ্য করা হয়। প্রস্রাবনালীর শেষ মাথার দিকে থাকলে অনেক সময় চাপ দিয়ে ভেটেরিনারি ডাক্তাররা বের করে থাকেন। আর মূত্রথলী বা আরো ভিতরে হলে অপারেশন এর মাধ্যামে বাইপাস ক্যাথেটার লাগানো হয়। যদিও এই অপারেশন খুব কম জায়গায় করা হয়।

প্রতিকার

* পরিমিত খাবার প্রদান করা : দানাদার খাবার কম খাওয়ানো। ওজন অনুযায়ী প্রতিদিন ২৫০-৫০০ গ্রামের বেশি না খাওয়ানো। আর খাবারের বস্তা বন্ধ রাখা, না হলে ছাগল ইচ্ছামতো বেশি খেয়ে ফেলতে পারে।

* ঘাস খাওয়ানো : দানাদার খাবারের চেয়ে বেশি করে ঘাস খাওয়াতে হবে।

* পর্যাপ্ত পানি খাওয়ানো : দিনে ৩-৪ বার পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি খেতে দিতে হবে।

* কাঁঠাল পাতা কম খাওয়ানো : কাঁঠাল পাতায় বেশি পরিমাণে ফসফরাস থাকায় খুব অল্প পরিমাণে পাতা খাওয়াতে হবে।

* বাসি ও পচা ভাত খাওয়ানো থেকে বিরত রাখা : বাসি ও পচা খাবারে দ্রুত গ্যাস তৈরি হয়। তাই এগুলো ছাগলকে দেয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।

ছাগলের যত্নে উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চললে কোরবানির আগে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

লেখক: ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন, মাস্টার্স ইন প্যাথলজি,  হাবিপ্রবি, দিনাজপুর।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ আগস্ট ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়