ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

শেভিং এর জ্বালাপোড়া থেকে বাঁচার উপায়

মোহাম্মদ আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২১ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শেভিং এর জ্বালাপোড়া থেকে বাঁচার উপায়

প্রতীকী ছবি

মোহাম্মদ আসিফ : শেভিং এর সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত। বিশেষ করে ছেলেদের জন্য শেভিং প্রতি সপ্তাহে কিংবা দুই সপ্তাহ পর পর নিয়মিত কাজের একটি। তবে শেভিং বিষয়টার সঙ্গে যেহেতু মুখমণ্ডলের সম্পৃক্ততা রয়েছে সে ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করাটা আবশ্যক। আর সেই সাবধানতা অবলম্বনে ১১টি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সেগুলো হল:

১. শেভিং জেল ব্যবহার করুন : চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জোয়েল স্ক্লেশিঙ্গার এর মতে, ‘শেভিং এর সময় ভালো মানের শেভিং ক্রিম কিংবা জেল ব্যবহার করা জরুরি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার প্রিয় হল এলেমিস স্কিন সুথ শেভ জেল। কারণ এটি মূলত অ্যালোভেরাশেভ জেল যাতে জোজোবা তেল ও খনিজ গুণাগুণ থাকে যা শেভিং এর সময় ঠান্ডা একটি অনুভূতির সৃষ্টি করে। ক্লিনশেভ এর ক্ষেত্রে এই শেভ জেল ত্বকে রেজার এর জ্বালা-পোড়ার হাত থেকে রক্ষা করে।’

শেভিং জেল এর তুলনায় শেভিং ক্রিমগুলো বেশি মাত্রায় আর্দ্র থাকে। আর তাই যখন আপনি শেভিং জেল কিনতে যাবেন তখন আপনাকে জেলে আর্দ্রতার পরিমাণের ব্যাপারে সচেতন থেকে জেল বাছাই করতে হবে। যেমনটি হল ভেনাস উইথ ওলে আল্ট্রাময়েশ্চার। শেভিং এর সময় যাতে ত্বকে জ্বালা-পোড়া অনুভূত না হয় সেজন্য এই জেল এ শেভিং ক্রিম এর অতিরিক্ত আর্দ্রতার পদ্ধতিকে অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে। 

২. ড্রাইশেভ না করা : ট্যুরে গেছেন, কিংবা লং জার্নিতে এসে মনে পড়ল আপনার শেভিং ক্রিম বা জেল নেই। এখন ঠেকায় পড়ে কাজ চালাতে হবে। ক্রিম বা জেল ছাড়াই হয়ত আপনি শেভ করার কথা ভাবছেন। কিন্তু না। ভুলেও এই চিন্তা করবেন না।

নিউ ইয়র্কের একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মার্নি নুসাবাউম বলেন, ‘ড্রাই শেভিং আপনার ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কেননা ত্বকে আর্দ্রতা না থাকায় শেভ করলে রেজার এর ব্লেড এর আঘাতে চামড়া কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শেভিং জেল বা ক্রিমগুলো মূলত শেভিং এর সময় রেজারকে ত্বকের ওপর মসৃণভাবে চলতে সাহায্য করে। যাতে করে কোনো প্রকার কাঁটা-ছেড়া না হয়। সেই সঙ্গে এটি ত্বকে জলীয়বাষ্পের যোগান দেয় এবং ত্বককে সুরক্ষিত রাখে।

মার্নি নুসাবাউম শেভিং এর সময় একটি অ্যান্টিবায়োটিক শেভিং জেল ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দেন। শেভ এর সময় যদি কখনো ত্বক কেটে যায় এটি আপনাকে যেকোনো প্রকার সংক্রামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিবে।

৩. রেজার এর ব্লেড পরিবর্তন করুন : শেভিং এর ক্ষেত্রে আপনি যে সরঞ্জাম ব্যবহার করেন সেটিও বিশাল ভূমিকা রাখে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জোয়েল স্ক্লেশিঙ্গার শেভিং এর ক্ষেত্রে পুরোনো রেজার ও ভোতা ব্লেড ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন। কারণ এগুলোর ব্যবহার ত্বকের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ত্বক কেটে যাওয়া, জ্বালা পোড়া করা এসব-ই পুরোনো রেজার ও ব্লেড ব্যবহার এর কারণ।

একের অধিক ব্লেড সংযুক্ত রেজার ব্যবহার না করতেও পরামর্শ দেন তিনি। কারণ এ ধরনের ব্লেডগুলো ত্বকের নীচের স্তরেও শেভ করে যা ত্বকের ক্ষতির মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। প্রতি ৮-১০ বার শেভের পর ব্লেড পরিবর্তন করা ভালো।

৪. অধিক চাপ প্রয়োগ না করা : পরিপূর্ণ শেভ এর জন্য একই জায়গায় বার বার রেজার ঘুরানো বা বার বার চাপ দেওয়া ভালো কাজ নয়। পারতপক্ষে এর ফলাফল হয় উল্টো। এর ফলে আপনার ত্বকে আঘাত লাগতে পারে, কেটে যেতে পারে এবং পরবর্তীতে জ্বালা-পোড়াও হতে পারে। শেভিং এর ক্ষেত্রে আপনি যে রেজারটি ব্যবহার করছেন সেটি যদি প্রথমবারের চেষ্টায় যথার্থ ফলাফল দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে আপনি ভুল রেজার ব্যবহার করছেন।

৫. ডিসপোজেবল রেজার পরিহার করুন: চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জোয়েল স্ক্লেশিঙ্গার এর মতে, ডিসপোজেবল রেজার (একবার ব্যবহারের জন্য রেজার) ত্বকের ক্ষতিকে মারাত্মক ভূমিকা রাখে। কারণ এগুলোর গঠন পাতলা হয় এবং শেভ করার জন্য অতিরিক্ত চাপ দেওয়া লাগে।

৬. রেজার শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন : রেজার এর ব্লেডে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার বাসা বাধতে পারে, যা থেকে ইনফেকশন হতে পারে।  তাই আপনার রেজার কখনোই অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন না, এমনকি আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধুর সঙ্গেও না। কয়েকবার শেভ এর পর ব্লেড পরিবর্তন করার পেছনের একটি প্রধান কারণ হল এটি।

৭. পদ্ধতি জানুন : আপনি কিভাবে শেভ করছেন সেটিও একটি মুখ্য বিষয়। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জোয়েল স্ক্লেশিঙ্গার এর মতে, ‘আপনার গালে দাড়ি বিকাশ অনুসারে যদি আপনি শেভ করে থাকেন তাহলে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে আসবে। বিশেষ করে যাদের ত্বক অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর তাদের জন্য এটি সুবিধাজনক ও সাহায্যকারী।’

তিনি আরো বলেন, ‘গোসলের সময় যদি আপনি শেভ করেন তাহলে সেটি আরো ভালো। কারণ গরম পানি আপনার ত্বক এবং ত্বকের ওপরের চুলগুলোকে আরো নরম করে তুলবে, যার ফলে সহজেই শেভ করা সম্ভব হবে।’ শেভ এর সময় যদি আপনি আপনার ত্বক টেনে ধরে শেভ করে তাহলে মাত্র বিকশিত হতে থাকা চুলগুলোও কেটে ফেলা চুলের মতো স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

৮. ফেসিয়াল করা : শেভিং এর ক্ষেত্রে আরেকটি মারাত্মক ভুল হল কখনো ফেসিয়াল না করা। ডা. নুসাবাউম বলেন, ‘শেভিং এর আগে ফেসিয়াল করলে সেটি ত্বকের মৃত কোষগুলোকে দূর করে ত্বক পরিষ্কার করে। যা আরামদায়ক শেভিং এর ক্ষেত্রে সহায়তা করে, রেজারকে ধাক্কা খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।’

শেভিং এর পর ত্বকের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের জন্য ময়েশ্চারাইজার বা শেভিং লোশন এর ব্যবহার ভুলে যাওয়া যাবে না। গোসলের পরপরই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করতে হবে। এতে করে ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে এবং শেভ এর ফলে জ্বালা-পোড়া হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।

৯. পিরিয়ড এর সময় সাবধানে শেভ করুন : পিরিয়ড এর সময় ত্বক আরো বেশি নমনীয় ও দুর্বল হয়ে পড়ে। আর তাই তখন সাবধানতা অবলম্বন করে শেভ করতে হবে। বিশেষ করে কোমরের নীচের অংশে শেভ এর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

নিউ ইয়র্ক সিটির একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সেজাল শাহ বলেন, ‘আমাদের সকলেরই একটি বিষয় মনে রাখা উচিত যে, স্বাভাবিকভাবে আমাদের শরীরের নীচের স্তরের ত্বকে যে চুল গজিয়ে উঠে সেটি মূলত আমাদের জন্য উপকারী। এটি যেকোনো প্রকার সংক্রমণ থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রজনন অংশের ত্বক দেহের অন্যান্য অংশের তুলনায় অনেকটাই নাজুক থাকে। তাই ওই অংশের ত্বক শেভ করলে সেটা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে আরো সহায়ক হয়ে উঠে। কেননা এসব অংশে শেভিং এর ফলে ছোট ছোট ক্ষত তৈরি হতে পারে যা ত্বকে ইনফেকশনের প্রদাহের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়।’

১০. লেজার চিকিৎসা গ্রহণ করুন : আপনার যদি সময় এবং টাকা দুটোই থেকে থাকে তাহলে আপনি হেয়ার রিমুভাল এর জন্য লেজার চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন এবং এটি খুবই কার্যকর। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জোয়েল স্ক্লেশিঙ্গার বলেন, ‘বর্তমানে অধিকাংশ কসমেটিক সার্জারি সম্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানে লেজার চিকিৎসায় তীব্র আলো এবং তাপের ব্যবহার এর মাধ্যমে ত্বক থেকে চুল অপসারণের কাজ সম্পাদন করা হয়। এর মাধ্যমে প্রতিটি চুলকে তার গ্রন্থি থেকে অপসারণ করা হয়।’

তবে লেজার চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, লেজার পদ্ধতিতে হেয়ার রিমুভাল প্রক্রিয়া শুধুমাত্র সেসকল মানুষের ক্ষেত্রেই সফলভাবে কাজ করবে যাদের গায়ের রঙ তুলনামূলক হাল্কা এবং চুলের রঙ গাঢ়। যাদের চুলের রঙ সোনালী, লাল অথবা ধূসর তারা একরকম ফলাফল নাও পেতে পারেন। কারণ তাদের চুলের গ্রন্থি ততটা প্রকাশ্য থাকে না বা দেখা যায় না। সেই সঙ্গে যাদের গায়ের রঙ তামাটে বা একটু গাঢ় তারা সব মেশিনের সাহায্যে হেয়ার রিমুভাল লেজার ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন না। কেননা সব মেশিন গাড় রঙের চামড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে পারে না।

১১. শেভের পর ত্বকে র‌্যাশ সমস্যায় করণীয় : শেভ করার আপনার ত্বক লালচে হয়ে গেছে এবং র‌্যাশের সৃষ্টি হয়েছে। সেক্ষেত্রে করণীয় কি? এক্ষেত্রে আপনাকে হাইড্রোকর্টিসন ক্রিম ব্যবহার করতে হবে যা আপনাকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে। সংক্রমণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুদিনের জন্য দিনে দুইবার করে এই ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। তারপরেও যদি আপনি সংক্রমণ থেকে মুক্তি না পান তাহলে আর দেরী না করে ভালো চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ অক্টোবর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়