ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

৭ মার্চের ভাষণের স্বীকৃতি উদযাপনে শক্তির মহড়া দেবে আ.লীগ

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৭ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৭ মার্চের ভাষণের স্বীকৃতি উদযাপনে শক্তির মহড়া দেবে আ.লীগ

নৃপেন রায় : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দ উৎসব উদযাপনে নাগরিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে সম্মিলিত শক্তির শোডাউন করবে আওয়ামী লীগ। আগামী ১৮ নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের নাগরিক কমিটি আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে স্মরণকালের স্মরণযোগ্য ‘জনসমাগম’ ঘটিয়ে ‘জাতীয় অর্জনে জাতীয় নির্বাচনী মহড়া’ দেবে।

নাগরিক কমিটির নেতারা জানান, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওইদিন তিনি জাতীয় অর্জন নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সাফল্য, অর্জন ও সাধিত উন্নয়নের কথা তুলে ধরে জাতির উদ্দেশে বিভিন্ন আগামী দিনের বিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক বার্তা দেবেন। বেলা আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশ আয়োজনে নাগরিক কমিটি সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর নাগরিক কমিটির সহায়ক শক্তি হিসেবে পেছন থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দিচ্ছে। নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।  সমাবেশের কার্যক্রম সমন্বয় করার জন্য নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, ডা. সারওয়ার আলী, হারুন-অর-রশিদ ও অসীম কুমার উকিল।

অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা বক্তব্য দেবেন। সমাবেশে ইউনেস্কোর মহাসচিবের উদ্দেশে সংস্থাটির কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভের মাধ্যমে একটি অভিনন্দনপত্র প্রদান করা হবে। ইউনেস্কোর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভকে ইতোমধ্যে নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সমাবেশে তার বক্তব্য দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর ইমেরিটাস আনিসুজ্জামান। সভা পরিচালনা করবেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী।

এ ব্যাপারে নাগরিক কমিটির ৫ সদস্যবিশিষ্ট টিমের সদস্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সমাবেশে আনিসুজ্জামান স্যার সভাপতিত্ব করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন। আর ছয়/সাত জন বক্তা থাকবেন। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে একটি ধন্যবাদ প্রস্তাব রাখা হবে ইউনেস্কোর প্রতি। জাতীয় সংগীত এবং বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে দেশাত্মবোধক গান ও আবৃতি থাকবে। ইউনেস্কোর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভকে ইনভাইট করা হয়েছে। উনি উপস্থিত থাকবেন এবং বক্তব্য রাখবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশের নাগরিক সমাজের মধ্যে বিভিন্ন পেশাজীবী যারা আছেন তারা এবং সাংবাদিক সবাই আসবেন। আমাদের মনে হয় প্রচুর লোকসমাগম হবে। এই ধরনের অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষও আসেন। এটা একটা বিরল গৌরব, সম্মান ও অর্জন। জাতীয় সম্পদ তো বটেই এটা এখন আন্তর্জাতিক সম্পদ।’

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের তাৎপর্য তুলে ধরে তিনি  বলেন, যুগে যুগে, দেশে দেশে বহু বীর নেতা ঐতিহাসিক বক্তৃতা করেছেন। কিন্তু একটি বক্তৃতায় একটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে, সেটা হল ৭ মার্চের ভাষণ। এটাই হল এর বিশেষত্ব।

সমাবেশে জনসমাগমের ব্যাপারে বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘যাতে সবাই সমাবেশে প্রবেশ করতে পারে সেজন্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের সহনশীল আচরণ করতে বলা হয়েছে। গেটগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবে। সমাবেশে সবাই যেন সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে ঢুকতে পারে, সেটা দেখা হবে। এছাড়াও ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে রামেন্দু মজুমদার, মোজাম্মেল বাবু, ডা, সারওয়ার আলী, হারুন-অর রশিদ, অসীম কুমার উকিল আছেন। এই টিমের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন অসীম কুমার উকিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেন, বাঙালি জাতির যা কিছু অর্জন আওয়ামী লীগের হাত ধরে, আওয়ামী লীগ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে রাজনীতি করে। কিন্তু এই দেশে কিছু দল আছে তারা শুধু জাতীয় স্বার্থকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক চরিতার্থ হাসিলের সুযোগ খোজে। তাই ১৮ নভেম্বর তারিখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জাতির ঐক্যের প্রতীক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। তিনি জাতীয় অর্জনের স্বীকৃতি উদযাপনের মাধ্যমে জাতিকে আগামী দিনে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাবেন। পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতিকে রাজনৈতিক বার্তা দেবেন। এদিকে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সমাবেশস্থল পরির্দশন করেন।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৭১-এর ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ১ নভেম্বর জরুরি বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লী। বৈঠকে ৭ দিনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। কর্মসূচিতে প্রথমে ৯ নভেম্বর সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হলেও পরে আওয়ামী লীগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৯ নভেম্বরের পরিবর্তে ১৮ নভেম্বর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।

এ ব্যপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে মহিলা আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় বলেন, ‘১৮ নভেম্বরের সমাবেশ নিয়ে চারদিকে যে অভূতপূর্ব সাড়া, এটা যদিও একটা আলোচনা সভা হবে তবুও আমার কাছে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের স্মরণকালের সবচেয়ে বড় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।’

মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা দলে দলে যোগ দেবেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আদর্শিক ও চেতনার দিক থেকে ভাষণটি আজ শুধু এই বাঙালির সম্পদ নয়, আন্তর্জাতিক সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। এটা জাতি হিসেবে পরম আনন্দের। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা বক্তব্য রাখবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আশা করি সর্বস্তরের জনগণ এতে যোগ দেবেন। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, এটা আওয়ামী লীগের সমাবেশ নয়। এটা কারও পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নয়। এই সমাবেশের তারিখ আমরা অনেক আগে ঘোষণা করেছি। কাজেই এই সমাবেশ পাল্টাপাল্টি সমাবেশ- এটা কেউ যদি মনে করে তাহলে জাতির আনন্দ প্রকাশের অনিন্দ্য সুন্দর দিনটিকে ছোট করা হবে। কেউ যেন ক্ষুদ্র গ-িতে এটা না ভাবেন। এই ভাষণ যেহেতু ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে, সেজন্য আমরা ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাবো। আমার কাছে মনে হয়, এই সমাবেশ যদিও কোন দলের নয়, আমার বিশ্বাস উপস্থিতির দিক থেকে স্মরণকালের সব রেকর্ড ভঙ্গ করবে।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ নভেম্বর ২০১৭/নৃপেন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়