ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মৌমাছি থেরাপিতে এক নারীর মৃত্যু

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০২, ২১ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মৌমাছি থেরাপিতে এক নারীর মৃত্যু

প্রতীকী ছবি

লাইফস্টাইল ডেস্ক : জীবন্ত মৌমাছির কামড়ের মাধ্যমে আকুপাংচার চিকিৎসায় অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ায় স্পেনের ৫৫ বছর বয়সি এক নারীর মৃত্যু ঘটেছে। বিকল্প থেরাপির কিভাবে অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে এ ঘটনা তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

আপনার যদি জানা না থাকে যে, জীবন্ত মৌমাছির অ্যাকুপাংচার থেরাপি কি, তাহলে এজন্য আপনাকে দোষ দেয়া যায় না। কেননা এই থেরাপি একটি অস্বাভাবিক পদ্ধতি।

‘আমরা মৌমাছিকে ধরে শরীরের একটি পয়েন্টে রাখি, যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি হুল ফোটাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এটির মাথা চেপে ধরে রাখি। আথ্রাইটিস থেকে শুরু করে ক্যানসার পর্যন্ত বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে আমরা এ চিকিৎসায় ইতিবাচক ফলাফল দিতে সক্ষম হয়েছি।’- ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে চিকিৎসা প্রক্রিয়ার এ ব্যাপারটি জানিয়েছিলেন মৌমাছি আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ ওয়াং মেনগ্লিন।

বেশ কিছু রোগ নিরাময়ে এই পদ্ধতিতে সুস্থতা পাওয়া যায় বলা হলেও এর স্বপক্ষে খুব সামান্যই প্রমাণ রয়েছে। চীন এবং কোরিয়াতে এই চিকিৎসা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলেও, অন্যান্য দেশেও তা ছড়িয়েছে।

৫৫ বছর বয়সি এক নারীর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে স্পেনের রামন এবং কাজাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের দুইজন গবেষক ভাজকুয়েজ-রেভুল্টা ও মাদ্রিগাল বার্গালেটার গবেষণায় বিষয়টি জানা গেছে এবং এই চর্চা অন্যদেরকে জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবেই উঠে এসেছে।

জানা গেছে, ওই নারী দুই বছর ধরে জীবন্ত মৌমাছির কামড়ের আকুপাংচার চিকিৎসা (অ্যাপিথেরাপি) গ্রহণ করতেন, মাসে একবার মৌমাছির কামড় নিতেন।

গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ওই নারী পেশীবহুল সুঠাম শরীর পেতে এবং স্ট্রেসমুক্ত থাকতে অ্যাপিথেরাপি চিকিৎসা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার অন্য কোনো রোগ কিংবা স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টির মতো কোনো মেডিক্যাল রেকর্ড ছিল না।’

তিনি অ্যাপিথেরাপির এক সেশনে মৌমাছির কামড় শরীরে নেওয়ার পর হঠাৎ শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ জ্ঞান হারান।

বিষয়টি অদ্ভুত মনে হতে পারে যে, মৌমাছির কামড় থেকে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া ঘটনার আগেও তিনি অনেকবার মৌমাছির কামড় থেরাপি নিয়েছিলেন কিন্তু সম্ভাব্য এই ঝুঁকি বিশ্বাসযোগ্য।

গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, অ্যালার্জির পুনরাবৃত্তি ঘটে থাকতে পারে-এক্ষেত্রে মৌমাছির বিষ সাধারণত যা প্রত্যাশা করা হয় তার চেয়ে তীব্র অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ায় বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

ওই নারীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল এবং প্রতিক্রিয়া বন্ধ করার চেষ্টা হিসেবে অ্যাড্রেনিয়া এবং অ্যান্টিহিস্টামাইন সহ বিভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রণ দেওয়া হয়। দুর্ভাগ্যবশত চিকিৎসা সত্ত্বেও, বেশ কয়েক সপ্তাহ পর ওই নারী একাধিক অঙ্গ বিকল হওয়া সহ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

অ্যাপিথেরাপির জনপ্রিয়তা যদিও দিন দিন বেড়ে চলেছে কিন্তু মেডিক্যাল চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই থেরাপি কার্যকর হওয়ার খুব কম প্রমাণ দিতে পেরেছে এবং এই থেরাপি থেকে এ ধরনের নেতিবাচক ঘটনা এটিই প্রথম নয়। ২০১৫ সালে পিএলওএস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক স্যালাইন ইনজেকশনের তুলনায় মৌমাছির বিষ আকুপাংকচার দেখিয়েছে যে, এতে প্রতিকূল ঘটনা সংঘটিত হওয়ার ঝুঁকি ২৬৩ শতাংশ বেড়েছে।

ভাজকুয়েজ-রেভুল্টা ও মাদ্রিগাল বার্গালেটার তাদের গবেষণার উপসংহারে বলেন, ‘এর অধিক ঝুঁকি সম্ভাব্য উপকারিতা অতিক্রম করতে পারে। এই অভ্যাসটি অনিরাপদ এবং অনুচিত।’ গবেষণাটি জার্নাল অব ইনভেস্টিগেশনাল অ্যালার্জোলজি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমিউনোলজি-তে প্রকাশিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র : সায়েন্স অ্যালার্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়