ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

সুচিত্রার জন্মদিন, পাবনায় পৈত্রিক বাড়িতে হতাশ দর্শনার্থীরা!

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০১, ৬ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুচিত্রার জন্মদিন, পাবনায় পৈত্রিক বাড়িতে হতাশ দর্শনার্থীরা!

পাবনা প্রতিনিধি : আজ ৬ এপ্রিল। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা রমা দাশ গুপ্ত ওরফে সুচিত্রা সেনের ৮৮তম জন্মদিন। ১৯৩১ সালের এদিন পাবনায় জন্মগ্রহণকারী সুচিত্রা ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতায় চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।

মহানায়িকার জন্মদিন উদযাপনে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে পাবনা জেলা প্রশাসন ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ। এ ছাড়া দেশের বাইরে নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজা হলে সুচিত্রা সেন জন্মোৎসবের আয়োজন করেছে সুচিত্রা সেন মেমোরিয়াল।

সুচিত্র সেন ভুবন ভুলানো হাসি আর বাঁকা চোখের চাহনি দিয়ে জয় করেছিলেন দুই বাংলার কোটি দর্শকের হৃদয়। হয়ে উঠেছিলেন দুই বাংলার চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষের মহানায়িকা। যার অভিনয় প্রেমে আজও বুঁদ হয়ে আছেন ভক্তরা।

পাবনার মেয়ে রমা দাশ গুপ্ত, সবার কাছে যিনি পরিচিত সুচিত্রা সেন নামে। যার শৈশব-কৈশরের একটি অংশ কেটেছে পাবনার হেমসাগর লেনের পৈত্রিক বাড়িতে। যে বাড়ির প্রতি কোণায় কোণায় ছড়িয়ে রয়েছে সুচিত্রা সেনের স্মৃতিময় দিনগুলো।

সুচিত্রা সেনের মৃত্যুর ছয় মাসের মাথায় ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামায়াতের কবল থেকে উদ্ধার করা হয় সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি। তারপর থেকে অনেকটা অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে বাড়িটি।

গেল বছর আজকের দিনে কিছু ছবি দিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা করা হলেও তাতে তৃষ্ণা মিটছে না দর্শনার্থীদের। বাড়িটিতে পূর্ণাঙ্গ ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি আর্কাইভ’ গড়ে তোলার সরকারি উদ্যোগে নেই দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

চুয়াডাঙ্গা থেকে বাড়ি দেখতে আসা দুইজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অনেকদিনের আশা ছিল মহানায়িকার বাড়িটি দেখার। সেই আশা পূরণ হলো। কিন্তু দেখতে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল। মনে হচ্ছে বাড়িটি একটি পোড়ো বাড়ির মতো পড়ে আছে। বাড়ির সামনে-ভেতরে ময়লা-আবর্জনা, বড় বড় ঘাস, লতাপাতায় ভরপুর। বিভিন্ন স্থানে ভঙ্গুর অবস্থা।’

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ভবনের সামনে সিসি ক্যামেরার কথা লেখা থাকলেও ভেতরে নেই কোনো সিসি ক্যামেরা। একজন কেয়ারটেকার থাকলেও নারী দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। নারী দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি বাড়িটি পূর্ণাঙ্গ স্মৃতি আর্কাইভ হিসেবে আমরা দেখতে চাই। দীর্ঘদিন ধরে শুনছি, সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু কোথায় সেই প্রকল্প?’

সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি উদ্ধার নিয়ে আন্দোলন শুধু পাবনার মধ্যেই সীমাবদ্ধতা ছিল না। আন্দোলনের ঢেউ উঠেছিল সুদূর নিউ ইয়র্কেও। সেখানকার সুচিত্রা সেন মেমোরিয়াল এর আহ্বায়ক গোপাল স্যানাল বলেন, ‘বাংলাদেশের পাশাপাশি নিউ ইয়র্কেও আন্দোলন করেছি আমরা বাড়িটি উদ্ধার ও সেখানে স্মৃতি আর্কাইভ গড়ে তোলার দাবিতে। সুচিত্রা সেনের ভক্ত রয়েছে সারা বিশ্বে। তাই নিউ ইয়র্কে প্রতি বছর মহানায়িকার জন্ম ও মৃত্যুদিবস পালন করা হয়। প্রবাসী সকল বাঙালির মনে জায়গা করে আছেন সুচিত্রা সেন। আমরা চাই বাড়িটি যেন এভাবে অবহেলায় নষ্ট হয়ে না যায়।’

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ পাবনার সহসভাপতি ডা. রামদুলাল ভৌমিক বলেন, ‘বাড়িটিতে সুচিত্রা সেন স্মৃতি আর্কাইভ করতে প্রকল্প প্রস্তাবনা রয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এর সাথে দেশের আরো দশটি স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি নিয়ে প্রকল্প যোগ হয়ে একটি প্যাকেজ প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। কিন্তু কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তা জানা নেই। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্রকল্পের কাজ যেন আটকে না যায়, সেই প্রত্যাশা করি।’

পাবনা জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ইতোমধ্যে বাড়িটিতে উন্নয়নের জন্য কিছু বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেটা দিয়ে কিছু কাজ করা হবে। তারপরও বাড়িটিতে সুচিত্রা স্মৃতি সংগ্রহশালা করার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, আমরাও চেষ্টা করছি।’ তবে পাবনাবাসীকে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার আহ্বান জানান তিনি।



রাইজিংবিডি/পাবনা/৬ এপ্রিল ২০১৮/শাহীন রহমান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়