ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

খোঁড়ল এবং কোকোন

সামিয়া কালাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৯, ২১ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খোঁড়ল এবং কোকোন

সামিয়া কালাম : আসলে জাঁকালো ভাবে ভূমিকা দেবার কিছু নেই। যে হারে গাছ নিধন হচ্ছে, তাতে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার পাশাপাশি আবাস হারাচ্ছে পাখি, কীটপতঙ্গ। বৃক্ষ নিধনের পাশাপাশি এখন পরিবেশ নিজেই কিছুটা অভিমানী। তাই ঝড়-ঝাপ্টা বজ্রপাত এসবের মাধ্যমে অসংখ্য গাছ উপড়ে যাচ্ছে, বা পুড়ে যাচ্ছে।

ব্যক্তিগত উদ্যোগে খুব বেশি কিছু করা সম্ভব হয়না।  তারপরেও নিজের গৃহের যেটুকু জায়গায় গাছ রাখার জন্য উপযোগী আমি সেখানেই টবের মধ্যে নানা রকমের গাছ রোপণ করেছি। কেবল ফুলের সুবাসের জন্য নয়। আমার সংগ্রহে আছে বেশ কিছু উপকারী গাছ। এর মাঝে তুলসী, কারি-পাতা, পোলাউ পাতা, পুদিনা-পাতা, বারোমাসি ধনে পাতা এবং থানকুনি পাতা অন্যতম। আছে কালো ধানি মরিচ এবং বোম্বাই মরিচের গাছ। দুটো লেবু গাছে ফুল এসেছে এ বছর। একাধিক নিম গাছ বনসাই করে রেখেছি, কেবল পাতার উপকারিতার জন্য। আর আছে অসংখ্য পাতা বাহার।

ফুলের গাছের মাঝে পরতুলিকা, মাধবীলতা, রঙ্গন, বাগান বিলাস, রুয়েলিয়া, গোলাপ, নীল-পারুল, হ্যালিকোনিয়া, হাস্নাহেনা, রেইন লিলি আর কয়েক রকম ক্যাকটাস। ছোট বড় মিলিয়ে পঞ্চাশের অধিক টব আমার ঘরে। 

গাছগুলো কেবল সাজিয়ে রাখলেই হয় না। নিয়মিত কীটনাশক আর সার প্রয়োগ করতে হয়। ফ্ল্যাট বাড়িতে এক এক সিজনে এক এক দিক থেকে রোদ আসে। তাই রোদের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গে টবের অবস্থান পাল্টাতে হয়। বিশেষ করে যেসব গাছে রোদ বেশি দরকার, সেসব গাছের টব সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবস্থান পাল্টাই। তাছাড়া মরা ডাল এবং পাতা বেছে দেওয়া, টবের মাটি উল্টেপাল্টে দেওয়া সহ গাছের জন্য অনেকটুকু সময় এবং শ্রম দিতে হয়। কিন্তু তা কোনো ভাবেই ক্লান্তি বা বিরক্তির কারণ হয় না। বরং গাছের সঙ্গে সময় কাটানো খুব আনন্দের এবং মনের প্রশান্তি আনতে গাছের সঙ্গে সময় কাটানো খুব কাজে আসে।

সেদিন এরকম একটা দিন ছিল। গাছের সার এবং কীটনাশক সব কিছু নিয়ে সানসেটের গাছগুলোর দিকে মন দিলাম। আমার সহকারী একটা একটা করে টব ওপরে উঠাচ্ছে এবং আমি গাছের মাটি খুঁচিয়ে সেখানে কোকো ডাস্ট আর ড্যাপ সার দিয়ে দিচ্ছি। আগাছা বেছে দিচ্ছি। কালো মরিচের গাছটা খানিকটা দুর্বল বলে একটা মরা গাছের ডাল দিয়ে খুঁটি দিয়েছি। বাতাসে সে গাছটা বেশ সাপোর্ট পায়। দেখি সেই মরা ডালটায় একটা ছোট্ট খোঁড়ল তৈরি হয়েছে। খুব ভালো করে নজর করলে দেখা যায় সেই খোঁড়লে একটি পোকাও আছে। অতি উৎসাহে আমার দুই পুত্রকে ডেকে দেখালাম। তারা অবাক হয়ে দেখল এবং বেশ কিছু ছবি তুলল। আরো একটু বিস্ময় বাকি ছিল দক্ষিণের বারান্দায়। লেবু গাছের ডালপালাগুলো ছেটে দিতে যেয়ে দেখি একটা পরিত্যাক্ত কোকোন গাছের ডালে শুয়ো পোকার ঝুলে আছে।

আমার ছেলেরা ‘দ্য সুইট কোকোন’ নামে একটি শর্ট ফিল্মে এক বিরাট শুয়ো পোকার চমৎকার এক প্রজাপতি বনে যাবার গল্পটি দেখেছে। কিন্তু সেসব তো হয় বনে বাদারে, নিজ গৃহ কোণে এরকম এ ‘সুইট’ কোকোন এসে বাসা করবে ভেবে তারা আবারো অবাক হলো, আনন্দিতও হলো। আর আমি এই ভেবে আনন্দিত হলাম যে, আমার ক্ষুদ্র গৃহে অনেক কীটপতঙ্গের গৃহ আছে।

ও, ভালো কথা। বলে রাখি মাস ছয়েক আগে এক ঘুঘু দম্পতি তাদের সংসার পেতেছিল আমার বারান্দার ফলস সিলিঙ্গে। ছানারা বড় হবার পর তারা নিজ নিজ ভাগ্য অন্বেষণে চলে যায়।  

আপনার গৃহ কোণে গাছ রাখুন। আপনার শিশুদের সঙ্গে গাছ এবং প্রকৃতির পরিচয় করিয়ে দিন। সুনির্মল বসুর এই কবিতাটি আমায় খুব ভাবায়।

‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর,
সবার আমি ছাত্র,
নানান ভাবে নতুন জিনিস
শিখছি দিবারাত্র।
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়,
পাঠ্য যেসব পাতায় পাতায়
শিখছি সে সব কৌতূহলে,
নেই দ্বিধা লেশমাত্র।’

তাই আমি নিজে শিখি এবং আমার সন্তানদের শেখাই।

 

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মে ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়