ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ইন্টারভিউ বোর্ডে যা করা ঠিক না

আহমেদ শরীফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১২, ৭ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইন্টারভিউ বোর্ডে যা করা ঠিক না

প্রতীকী ছবি

আহমেদ শরীফ : কথাটা খুব সহজ শোনালেও আপনি যখন চাকরির জন্য ইন্টারভিউ বোর্ডের মুখোমুখি হবেন তখন মনে রাখতে হবে, যিনি বা যারা  ইন্টারভিউ নেবেন, তারা আপনাকে চেনেন না। আপনাকে যথার্থভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে তাদের কাছে। পোশাক, দেহভাষা, প্রকাশ ভঙ্গি, ব্যক্তিত্ব, এগুলোর যেকোনো একটিতে ঘাটতির কারণে আপনার চাকরি প্রাপ্তির সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই যেসব বিষয় ইন্টারভিউ চলাকালে আপনাকে পরিহার করতে হবে, সেগুলো হলো:

* নির্দিষ্ট সময় পর ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য উপস্থিত হবেন না। এতে আপনার সময়জ্ঞান সম্পর্কে যে বিরূপ ধারণা তৈরি হবে, ইন্টারভিউ চলাকালে তা দূর করা আপনার পক্ষে কঠিন হয়ে উঠবে।
কেন তা ক্ষতিকর :
দেরি করে ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রবেশ করার মানে হলো আপনি যে পদের জন্য ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন, সে পদের প্রতি আপনার খুব একটা আগ্রহ নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা ইন্টারভিউ গ্রহণকারীদের মনে এই ধারণা জন্মাবে যে, আপনাকে যদি ওই পদে নিয়োগ দেয়া হয়, তবে কর্মক্ষেত্রেও আপনি এরকম দেরি করে আসবেন। তাই আপনাকে অবশ্যই সময়জ্ঞান সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।

* অফিসের কোনো কর্মকর্তা অথবা ইন্টারভিউ গ্রহণকারীকে অসম্মান করবেন না। আপনি যদি দক্ষ এবং সব ব্যাপারে যোগ্যও হয়ে থাকেন, তারপরও অসম্মানজনক আচরণ করার কারণে আপনি চাকরিটা হারাতে পারেন।
কেন তা ক্ষতিকর:
রিসেপশনিস্ট থেকে শুরু করে কোনো অফিস কর্মকর্তার সঙ্গে যদি রুক্ষ আচরণ করেন, তবে সে আপনার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে পারে। যেহেতু চাকরি পাওয়ার আগেই আপনি ওই অফিসের কর্মকর্তার সঙ্গে রুক্ষ আচরণ করেছেন, সেহেতু চাকরি পাওয়ার পর এ ধরনের আচরণ আপনি পুনরায় করবেন, এটা ধরে নেয়া যায়। তাই ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে মেজাজ ঠান্ডা রাখুন। কারো সঙ্গে রাগারাগি  করবেন না।

* ইন্টারভিউ চলাকালে উত্তর দেয়ার বদলে উল্টো নিজেই খুব বেশি প্রশ্ন করবেন না।
কেন তা ক্ষতিকর:
এতে কর্তৃপক্ষ আপনাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতিহীন এবং এই চাকরিরর জন্য খুব একটা আগ্রহী ও সুবিবেচক মনে নাও করতে পারেন।

* প্রশ্নকর্তা অনেক সময় প্রার্থীর আগের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চান। অনেক প্রার্থী এক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত করে তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণণা করেন। আপনাকে এ ব্যাপারে অবশ্যই সাবধানী ও স্বল্পভাষী হতে হবে।
কেন তা ক্ষতিকর :
চাকরিদাতা যদি জানতে পারেন আপনি পুরোপুরি সত্য বলছেন না, তাহলে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে। পূর্ব অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে যদি আপনি শুধু নিজের প্রশংসাই করেন এবং অন্যদের কৃতিত্ব না দেন, তাহলে ইন্টারভিউ গ্রহণকারী বুঝে নেবেন যে আপনি আসলে টিম প্লেয়ার নন বরং আত্মকেন্দ্রিক।

* ইন্টারভিউ বোর্ডে বেতন নিয়ে বিতর্কে জড়াবেন না।
কেন তা ক্ষতিকর:
অনেক সময় দক্ষ প্রার্থীরা বেতন নিয়ে দর কষাকষি ও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এরকম অনমনীয় আচরণে চাকরিটা হারাতে হয় তাদের। কারণ প্রার্থীর উদ্ধত ও বেপরোয়া মনোভাব প্রকাশ পায় এর মাধ্যমে। তাই যেকোনো কোম্পানিতে চাকরির ক্ষেত্রে প্রথমেই বেতন কতো? সুবিধা কী কী? এসব প্রশ্ন করবেন না। এতে কর্তৃপক্ষ বেঁকে বসতে পারেন।

* আগে যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন, সেখানকার বস বা সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করবেন না।
কেন তা ক্ষতিকর:
প্রথমত, এতে করে ইন্টারভিউ গ্রহণকারীরা ভাববেন যে, আপনি যদি এখানে চাকরি করে অন্য কোথাও আবার চাকরির খোঁজে যান, তাহলে সেখানে গিয়েও তাদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, মনে রাখতে হবে যে, ইন্টারভিউ গ্রহণকারী আপনার ওই প্রাক্তন বসের পরিচিত কেউ হতে পারেন। এতে করে চাকরিটা হারাতে পারেন আপনি।

* আবেগতাড়িত হয়ে পরিবার বা নিজের প্রসঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলবেন না, দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করুন।
কেন তা ক্ষতিকর:
ইন্টারভিউ গ্রহণকারী মনোচিকিৎসক নন। তিনি আপনাকে কোনো প্রেসক্রিপশন দিতে পারবেন না। তার সঙ্গে মনের দুঃখ ভাগাভাগি করার অবকাশ যেহেতু নেই, তাই স্বল্প ভাষায় প্রাসঙ্গিক কথা বলবেন। নইলে ইন্টারভিউ গ্রহণকারী ভাববেন আপনি ব্যক্তিগত জীবনকে কর্মক্ষেত্র থেকে পৃথক করতে পারছেন না। এতে আপনার অযোগ্যতা প্রকাশ পাবে।

* নিজেকে সবচেয়ে যোগ্য ভেবে ত্রুটিহীন মনে করবেন না।
কেন তা ক্ষতিকর:
ইন্টারভিউ গ্রহণকারী যদি আপনার দুর্বলতাগুলো জানতে চান, তবে সেক্ষেত্রে নিজেকে যোগ্য প্রমাণের জন্য বলেবেন না যে আপনি সব বিষয়েই ভালো জানেন। একজনের পক্ষে সব কিছু জানা সম্ভব নয়। প্রশ্নকর্তা নিজেও এর ব্যতিক্রম নন। তাই নিজের দুর্বলতাগুলো উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। নইলে কর্তৃপক্ষ ধরে নেবেন আপনি আপনার দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন না। তাছাড়া এতে আপনার অহংবোধও প্রকাশ পাবে, যা ঠিক নয়।

* ইন্টারভিউ গ্রহণকারীদের কাছে অথবা প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাছে চাকরির প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে অথবা পরবর্তীতে এ ব্যাপারে ফোনে বা চিঠির মাধ্যমে অতি উৎসাহ দেখাবেন না।
কেন তা ক্ষতিকর:
প্রথমত, কর্তৃপক্ষের মতে আপনি প্রতিষ্ঠান থেকে কী পাবেন সেটা আসল কথা নয়, প্রতিষ্ঠান আপনার কাছে কী পাবে সেটাই আসল কথা। দ্বিতীয়ত, চাকরিদাতা যদি দেখেন আপনি এই চাকরির জন্য মরিয়া, তবে তিনি ভাববেন যে এই পদের জন্য আপনি খুব একটা যোগ্য প্রার্থী নন এবং যেকোনো চাকরিই আপনি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। তাকে এটি বোঝাতে হবে, তিনি যে চাকরির জন্য আপনার ইন্টারভিউ নিচ্ছেন, সে চাকরির জন্য আপনি বিশেষভাবে আগ্রহী ও যোগ্য।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়