ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্কুল থেকে কলেজে (প্রথম পর্ব)

ঝুমকি বসু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্কুল থেকে কলেজে (প্রথম পর্ব)

প্রতীকী ছবি

ঝুমকি বসু : এ যেন শৈশব আর কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে উত্তরণ। মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে ডানা মেলার প্রথম ধাপ। স্কুলজীবন পেরিয়ে কলেজজীবনে প্রবেশ জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। এতদিনের নিয়মে বাঁধা রুটিন ছেড়ে একটুখানি বেরিয়ে আসার অবকাশ। আর তাতে সবাই রোমাঞ্চিত হবে না, তা কি আর হয়!

আসলে স্কুলে পড়াকালীন ‘কলেজ’ শব্দটি প্রায় সকলের কাছেই এক রঙিন ক্যানভাসের মতো। কলেজে পড়তে যাওয়া মানেই তো চোখে একরাশ স্বপ্ন, ভবিষ্যতকে নতুনভাবে দেখার ইচ্ছা। যেন ‘আমি বড় হয়ে গেছি’ এমন অনুভূতি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে ব্যাপ্ত করারও সময় এটা। আর এই সময়টার উপযুক্ত ব্যবহারের দায়িত্ব ছাত্রছাত্রীদের মতো তাদের বাবা-মায়েরও। কিন্তু বাবা-মায়েদের ভূমিকা ঠিক কীরকম হবে? কী কী বিষয় মাথায় রাখবেন তাঁরা? বাবা-মায়েদের জন্য রইল কিছু পরামর্শ।

* পেশা নির্বাচনের স্বাধীনতা
স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ঢোকা মানেই ভবিষ্যতের দিকে আরও এক পা এগিয়ে যাওয়া। আর ভবিষ্যৎ মানেই সঠিক পেশা নির্বাচন। তবে সঠিক পেশা বলতে আসলে ঠিক কী বোঝায়, তা নিতান্তই আপেক্ষিক। হয়তো আপনার সন্তান খুব ভালো ছবি আঁকে, তার ভাবনাচিন্তাও গৎবাঁধা লেখাপড়ার বাইরে। কিন্তু আপনি পেশা হিসাবে ডাক্তারি- ইঞ্জিনিয়ারিং বা সরকারি চাকরির বাইরে কিছুতেই ভাবতে পারেন না। কিংবা আপনার পরিবারের পুরোনো প্রজন্মের মানুষেরা এই পেশাগুলো বেছে নিয়েছিলেন। তাই ‘ডাক্তারের সন্তান ডাক্তার হবে’ ভেবে নিয়ে আপনিও সন্তানকে সেই পেশা বেছে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। আর সেভাবেই তাকে পড়াশোনা করাতে গিয়ে হয়তো ওর সৃজনশীল সত্তাটাই হারিয়ে যায়। বাবা-মা হিসেবে সন্তানের পড়াশোনা ও পেশা বেছে নেওয়ার ব্যাপারে সন্তানের মতামত নেওয়াটাও জরুরি। প্রথাগত পড়াশোনা করলেই যে সে সফল হবে, তা নয়। আর পড়াশোনায় যদি নিজের ভালোবাসা না থাকে তাহলে ভালো ফলাফলও আশা করা যাবে না। আজকাল এমনিতেও প্রথাগত পড়াশোনার বাইরে নানা বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুবিধা বাড়ছে। তাই সন্তান ভিন্ন বিষয় বেছে নিতে গেলে ঘাবড়ে যাবেন না।

* কলেজের ফলাফলই সব নয়
স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম হতে না পারলে সন্তানকে বকতেন? সেই অভ্যাস ধরে রাখতে চাইলে মুশকিলে পড়বেন। কোনও কারণে যদি আপনার সন্তান কলেজে ভালো ফল করতে না পারে, তাহলে ভেঙ্গে পড়বেন না। মনে রাখবেন, স্কুল বা কলেজের ফলাফলই কেরিয়ার গঠনের এক ও একমাত্র মাপকাঠি নয়। আপনার সন্তানের মেধা অনুযায়ী বরং ওর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করুন। সবসময় একটা ব্যাকআপ প্ল্যান ভেবে রাখুন।

* বাঁধন আলগা করুন
স্কুলে সন্তানকে যে নিয়মনিষ্ঠার মধ্যে বেঁধে রেখেছিলেন, কলেজে যদি সেভাবে বেঁধে রাখতে চান, তাহলে কিন্তু হবে না। স্কুল নির্দিষ্ট সময়ে শুরু ও ছুটি হতো। কিন্তু কলেজের ক্লাসের সময় সবসময় নির্দিষ্ট থাকবে এমনটা নয়। তাই তিনটার জায়গায় যদি চারটা বাজে বাসায় ফিরতে, তাহলে চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ার কোনও কারণ নেই। বরং সন্তানকে ফোন করে জেনে নিন। বন্ধুবান্ধব দুই-একজনের ফোন নম্বর কাছে রাখুন। কলেজজীবনের মূল আনন্দই কিন্তু স্বাধীনতায়। তবে তা অবশ্যই লাগামছাড়া নয়। কলেজ শেষে বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখা বা ফুচকা খেতে যাওয়া মোটেই কোনও অপরাধ নয়। এজন্য বাসায় ফিরতে একটু দেরি হলে, বকাবকি না করাই ভালো। ছুটির দিনেও আপনার সন্তানকে নিজস্ব একটা জীবন উপভোগ করতে দিন। কলেজের এই বয়সটা ওর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ালে তা পরোক্ষভাবে ওর ব্যক্তিত্বের বিকাশে সাহায্য করবে। তবে ঠিক কতটা ছাড়বেন, আর কতটা নজরে রাখবেন - সেই সীমারেখাটাও ঠিক করে নিতে হবে। অনেক ছেলেমেয়েই এই প্রথম মুক্তির স্বাদ পেয়ে তার অপব্যবহার করে। খারাপ নেশায়ও জড়িয়ে পড়ে। তাই স্বাধীনতা যেন লাগামছাড়া না হয়, তা খেয়াল রাখুন। আপনার সন্তানকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে ওর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে মাঝেমাঝে ঢুঁ মেরে নিন। অবসর সময়ে কলেজে ওর নতুন বন্ধুদের কথা জিজ্ঞেস করুন। আর খেয়াল রাখুন ওর আচরণ বা স্বভাবে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে কি না। এই বয়সে এক নতুন জগতে এসে ওরও মানিয়ে চলতে অসুবিধা হতে পারে। কিন্তু সে হয়তো তা আপনার সঙ্গে শেয়ার করতে পারছে না। আপনার আর সন্তানের মধ্যের এই গ্যাপটুকু আপনাকেই সরু করে আনতে হবে। শাসন আর উদারতা- দুইয়েরই সমন্বয় খুব জরুরি।

* আপডেট থাকুন
আপনার সন্তান রাঁধতে ভালোবাসে। কিন্তু সেই রান্না নিয়ে পড়াশোনা করে যে দিব্যি কেরিয়ার তৈরি করা যায়, তা হয়তো আপনি জানেন না। আবার হয়তো আপনার সন্তানের ইচ্ছা সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ার। আপনি ব্যাপারটা না জানা থাকায় হয়তো সেদিকে পা বাড়ালেন না। আগে হয়তো এসব বিষয়ে পড়াশোনা করার তেমন সুযোগ ছিল না। কিন্তু এখন আমাদের দেশেও নানা বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ বাড়ছে। তাই এসব ব্যাপারে খোঁজখবর রাখা আপনার দায়িত্ব। আপনার অজ্ঞতা সন্তানের উপর চাপিয়ে দিলে আখেরে তারই ক্ষতি। আজকাল ইন্টারনেটের কল্যানে ওয়েবসাইটে এ জাতীয় খবর পাওয়া খুবই সহজ।

* প্রথা ভাঙুন
পড়াশোনা বা পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাধারণ গড়পড়তা মানুষের মনে এখনও কিছু গৎবাঁধা চিন্তাধারা কাজ করে। যেমন ধরুন, এসএসসি পরীক্ষায় যদি কেউ বিজ্ঞান বা অঙ্কে খুব ভালো নম্বর না পায়, তাহলে বাবা-মায়েরা মুষড়ে পড়েন। এবার তো তাহলে সন্তানকে আর্টস পড়তে হবে। যেন আর্টসের বিষয়গুলো ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ গড়তে অক্ষম। নামজাদা গল্পলেখক বা দুনিয়া কাঁপানো কূটনীতিবিদ, ক্রিকেট খেলোয়াড় বা অনুবাদক, সাংবাদিক বা শিল্পী- এরা নিশ্চয় সবাই বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেননি। আসলে প্রতিটি বিষয়েরই সম্ভাব্য পেশা আছে। আপনাকে শুধু তা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। পাঁচজনের কথায় প্রভাবিত হবেন না। বস্তাপচা চিন্তাভাবনা ছেড়ে বরং নতুনভাবে ভাবুন। আপনার সন্তান যদি শিল্পী হয়ে নাম করে এবং সেই পেশা উপভোগ করে, তাতে আপনার খুশি হওয়া উচিৎ। সন্তান আপনার পছন্দমতো বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে না বলে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। বরং তাকে উৎসাহ দিন যেন সে তার নিজের পছন্দমতো বিষয় বেছে নিয়ে সফল হয়। আপনাদের উৎসাহ তাকে আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়