ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

কফি পানে মলত্যাগের চাপ পায় কেন?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৮, ৯ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কফি পানে মলত্যাগের চাপ পায় কেন?

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : কফি মানুষের শক্তি বৃদ্ধি করে, কিন্তু এটি তাদের বাওয়েল মুভমেন্ট বা মলত্যাগের হারও বাড়াতে পারে। যদিও এ বিষয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি, কিন্তু গাট নামক পরিপাকতন্ত্র বিষয়ক সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় পাওয়া যায় যে, ৩০ শতাংশ লোক কফি পানের পর বাথরুমের দিকে ছুটে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কফি কেন মলত্যাগের প্রবণতা সৃষ্টি করে?

কফিতে প্রাকৃতিকভাবে শত শত রাসায়নিক থাকে, তাই কফি কেন মানুষকে বাথরুমের দিকে চালিত করে তার উত্তর একটু জটিল, বলেন ইন্টারন্যাশনাল ফুড অ্যান্ড ইনফরমেশন কাউন্সিল ফাউন্ডেশনের নিউট্রিশন কমিউনিকেশন্সের সিনিয়র ডিরেক্টর ও রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান ক্রিস সলিড। লোকজন বলে যে কফিতে বিদ্যমান ক্যাফেইনের পরিমাণ হতে পারে কফি পানের পর মলত্যাগের তাড়নার কারণ, কারণ এটি পাকস্থলির মাংসপেশি ও কোলনকে সক্রিয় করে। নিউট্রিশন ওভার ইজি ডটকমের সার্জারি বিশেষজ্ঞ মনিকা রেইনেজেল বলেন, ‘সাধারণত গরম পানীয়ও এ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, সেখানে গরম পানীয়টা ক্যাফেইনযুক্ত কফি হলে মলত্যাগের তাড়না হয়ে যাবে দ্বিগুণ।’ যদিও ক্যাফেইন পাকস্থলি বা অন্ত্রের কার্যক্রমকে উদ্দীপ্ত করে, কিন্তু এটি হতে পারে আপনাকে বাথরুমে পাঠানোর অন্যতম কারণ, বলেন ডায়েটিশিয়ান সলিড। এছাড়া দিনে বহুবার কফি পান এ প্রতিক্রিয়া আরো বাড়িয়ে তোলে।

কফি পান জনিত অম্লতাও মলত্যাগের তাড়না সৃষ্টি করতে পারে। কফিতে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড থাকে এবং এটি শরীরে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডের উৎপাদন বৃদ্ধি করে, বলেন ডা. সলিড। উভয় অম্লই পাকস্থলির পিএইচ কমায় এবং পাকস্থলি থেকে অন্ত্রে খাবারের মুভমেন্ট ত্বরান্বিত করে। এসব অম্ল পাকস্থলি থেকে খাবার সচরাচরের তুলনায় দ্রুত বের হতে বলপ্রয়োগ করে। কফি গ্যাস্ট্রিন ও কোলেসিস্টোকিনিনের মতো হরমোনের উৎপাদনও বৃদ্ধি করে, যা খাবার হজমের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও কোলনকে সক্রিয় করে, এর ফলে বাথরুমে যাওয়ার তাড়না সৃষ্টি হয়, বলেন ডা. সলিড। ডিক্যাফ (ক্যাফেইনমুক্ত) কফিরও একই প্রতিক্রিয়া রয়েছে, কারণ এটিও গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড ও গ্যাস্ট্রিন উভয়কে প্রভাবিত করে, তাই ক্যাফেইন একাই আপনাকে বাথরুমে পাঠায় না।

তাহলে মলমূত্রত্যাগের তাড়না প্রতিরোধের উপায়? কিছু গবেষণা সাজেস্ট করছে যে, নিয়মিত কফি পান এ প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে পারে। জার্নাল অব হিউম্যান নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্সে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, অভ্যাসগত পানে কফির মূত্রবর্ধক উপাদানের প্রতি সহনশীলতা বিকশিত হয়। ডা. রেইনেজেল বলেন, ‘নিয়মিত কফি পানকারীদের মধ্যে কফি মূত্রবর্ধক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে না, তাদের ক্ষেত্রে পানিশূন্যতা পূরণের জন্য কফি পান সাধারণ পানি পানের সমান।’

এবার বলা যাক কফির ল্যাক্সাটিভ ইফেক্ট বা মলবর্ধক প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে। কফিতে ক্রিম, গরুর দুধ ও নন-ডেইরি মিল্ক মিশালে মলবর্ধক প্রতিক্রিয়া বেড়ে যেতে পারে- তাই যদি আপনি দুধের প্রতি স্পর্শকাতর হন, তাহলে এসবকিছু কফিতে যোগ করা আপনার জন্য সহায়ক হবে না। তাই ব্ল্যাক অথবা নন-ডেইরি ক্রিমার দিয়ে কফি পানের চেষ্টা করতে পারেন।

যেহেতু কফি-মলত্যাগ প্রহেলিকার কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই, তাই এর সমাধান হলো- নিজের শরীরকে বোঝা ও নিজ ঝুঁকিতে কফি বানিয়ে পান করা (অর্থাৎ কফিতে আপনি কি মেশাবেন তা আপনার ছেড়ে দেওয়া হলো)। যদি কফি পানে আপনার মলত্যাগের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তাহলে কোনো লুকায়িত স্বাস্থ্য দশা আছে কিনা চেক করতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ এপ্রিল ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়