ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘গ্রাম হবে শহর, এর অর্থ ঢাকা শহর বানানো নয়’

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৭, ৫ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘গ্রাম হবে শহর, এর অর্থ ঢাকা শহর বানানো নয়’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, গ্রাম হবে শহর, এর অর্থ গ্রামকে ঢাকা শহর বানানো নয়। এর অর্থ শহরাঞ্চলের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা গ্রামাঞ্চলে নিশ্চিত করা এবং গ্রামে একটি ‘সিস্টেম্যাটিক’ টাউন স্থাপন করা। যা আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার। বিকেন্দ্রীয়করণেও ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ল্যান্ড-জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়নের সময় আমরা লক্ষ্য রাখছি কৃষি জমির সুরক্ষার ব্যাপারে, যেন দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত না হয়।

রোববার ঢাকা শিল্প ও বণিক সমিতির উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, দেশের সমসাময়িক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল কারিগর বেসরকারি সেক্টর-এবং, এতে এটাও প্রমাণ হয় বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ‘ফ্যাসিলিটেটর’ (সহায়তা প্রদানকারী) হিসেবে সফল।

ভূমিমন্ত্রী মনে করেন আবাসন খাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সাশ্রয়ী মূল্যের বাসস্থান সংস্থান।

তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে অবকাঠামো নির্মাণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। একসময় উন্নয়ন শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক ছিল। এখন বর্তমান সরকার দেশের সামগ্রিক এবং সমানুপাতিক উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে।

তবে, সরকার কি করবে তা নিয়ে বসে না থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে উদ্যোগ নিয়েও ঢাকার বাইরে বিনিয়োগ করার আহবান জানান সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন ঢাকা বাংলাদেশ নয়, বাংলাদেশ ঢাকা নয়।

মন্ত্রী বলেন, কোনো নতুন কাজ শুরুর আগে সরকারের অনেক কিছু ভাবতে হয়। বেসরকারি সেক্টরে সেই অসুবিধা অনেক কম। তিনি সবাইকে ‘আউট অফ দ্য বক্স’ চিন্তা করার পরামর্শ দেন। ভূমিমন্ত্রী মনে করেন প্রাইভেট পর্যায়ে কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে পিপিপির আওতায় দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টানেন মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ‘ফ্যাসিলিটেটর’ এবং ‘রেগুলেটর’ হিসেবে মূল দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এবং জনস্বার্থে সরকারেরও উদীয়মান সেক্টরে সরাসরি কাজ করতে হয়।

তিনি বলেন, জমির দাম বাড়ার কারণ মোটেও কোনো  ধরনের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রভাবে হয় নাই। এটা মূলত অর্থনীতির মৌলিক ব্যাপার-চাহিদা এবং যোগানের প্রভাব। এজন্যই অনেক সময় কোন কোন ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কে জমির মূল্যের ৬০ শতাংশ অর্থ কাজের শুরুতেই প্রদান করা হয়।

মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের পরে দেশের অর্থনীতি এবং গণতন্ত্র স্থবির হয়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেই অবস্থা থেকে ইতোমধ্যে উত্তরণ লাভ করে নিম্নমধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত হবার পথে। বর্তমান গতিতে চললে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।

তিনি বলেন, এই বছরের জুন কিংবা জুলাই নাগাদ সমগ্র দেশে ই-নামজারি চালু হয়ে যাবে এবং ভূমি সম্পর্কিত বিভিন্ন ফি এবং কর প্রদানের সুবিধার্থে ইতিমধ্যে পেমেন্ট গেটওয়ের স্থাপন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমরা সঠিক পথেই আছি। অর্থনৈতিক খাতসমূহের উপাত্ত তাই প্রমাণ করছে। আমাদের উন্নয়নে ইনশাল্লাহ কেউ বাধা দিতে পারবে না।

সেমিনারের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রাণের শহর ঢাকাকে নিরাপদ করার জন্য একযোগে মিলে কাজ করতে হবে। সেই সাথে সমষ্টিগত এবং সু-সংহতভাবে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করার কথাও তিনি জানান। তিনি স্যাটেলাইট সিটির গুরুত্বের কথাও উল্লেখ করেন।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির। তিনি তার বক্তব্যে নগরায়ণ এবং বিকেন্দ্রীকরণে ১৬টি সমস্যা চিহ্নিত করেন এবং সেসব থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি সরকারি এবং বেসরকারি আবাসন সেক্টরের অংশীদারীত্বের সম্ভাবনা এবং গুরুত্বের কথাও আলোচনা করেন।

আলোচনায় অংশ নেন অ্যাসেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হোল্ডিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান সেলিম আখতার খান, প্যারাডাইস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কন্সট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আল আমিন এবং ভিসতারা আর্কিটেক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ।

সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আবাসন মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন।

উন্মুক্ত আলোচনার মধ্যে দিয়ে সেমিনারের কার্যক্রম শুরু হয়। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারী আলোচকদের বক্তব্যের ওপর স্থপতি কাজী গোলাম নাসির তার মতামত ব্যক্ত করেন।

সেমিনারের সভাপতিত্ব এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি ওসামা তাসীর। সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন উক্ত সমিতির জ্যৈষ্ঠ সহ-সভাপতি ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী।

সরকারি-বেসরকারি আবাসন সেক্টরের বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী এবং নির্বাহীসহ উক্ত সেক্টরের সাথে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারের শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের ঢাকা চেম্বার এবং রিহ্যাবের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা স্বারক দেওয়া হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ মে ২০১৯/নঈমুদ্দীন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়