ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

কারখানার বর্জ্যে বিষিয়ে ওঠা গ্রাম ‘কাঁচুরী’

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৯ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কারখানার বর্জ্যে বিষিয়ে ওঠা গ্রাম ‘কাঁচুরী’

পাবনা প্রতিনিধি: অবৈধভাবে গড়ে উঠা সুতা প্রসেসিং কারখানার বর্জ্য দূষণে বিষিয়ে উঠেছে পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কাঁচুরী গ্রামের মানুষ।

আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এ কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত পানি ছড়িয়ে পড়ছে জমিতে জমিতে। আর এতে উর্বরতা হারাচ্ছে এসব কৃষি আবাদি জমি। অন্যদিকে জলাবদ্ধ হয়ে থাকা নানা রঙের কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি পচা গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি পরিণত করেছে মশা মাছির ভাগাড়ে।

বলা যায়, বাতাসে বিষের গন্ধ নিয়ে বসবাস করছেন পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কাঁচুরী গ্রামের মানুষ। এই সমস্যার সমাধানে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয়রা বলেছেন, সরকারি জায়গায় সরকারি অনুমতি ছাড়াই মামা-ভাগ্নে প্রসেসিং এন্ড ডাইং এর বর্জ্য দূষণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে কাঁচুরী গ্রামের ভুক্তভোগী জনসাধারণ প্রতিকার চেয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক, নির্বাহী প্রকৌশলী পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সুজানগর উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ৫ বছর ধরে স্থানীয় জনগণের নিষেধ না মেনে প্রভাব খাটিয়ে আবাসিক এলাকায় ও সরকারি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় সরকারের বিনা অনুমতিতে অবৈধভাবে দু’টি কারখানা চলছে । এতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও নেই। কারখানা দুটি কাঁচুরী গ্রামে গড়ে উঠার পর থেকে কারখানার কেমিক্যাল বর্জ্য পদার্থের সাথে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদেরই ভয় ভীতি প্রদর্শন করা হয় এমন অভিযোগও উঠেছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শামীম হোসেন বলেন, ‘পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এটা আমিও জানি, আমার কাছে এলাকার মানুষ এ নিয়ে বহুবার অভিযোগ করেছে। আমি তাদের বলেছি আপনারা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন, আমার ক্ষমতা সীমিত। আমি ডাকলে কারখানার মালিক আসে না।’
 


স্থানীয় আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যালের গন্ধে বাড়িতে বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটে চলাচল করাও অসুবিধা, সর্বোপরি মশার উপদ্রব। মিলটি প্রশাসনের সহায়তায় অতি জরুরি অপসারণ করা দরকার।’

স্থানীয় কৃষক বিল্লাল শেখ বলেন, ‘কারখানার কেমিক্যালের বিষাক্ত পানি আমার ইরি ধানের ক্ষেতে ঢুকে পড়ে। ধীরে ধীরে আমার ক্ষেতের ঊর্বরতা শক্তি হারিয়ে যায়। বর্তমানে ক্ষেতে আর কোন ফসল হতে চায় না। একই অবস্থা বিরাজ করছে পাশের একটি পেঁয়াজের ক্ষেতেও। কারখানাটি অপসারণ না করা গেলে ধীরে ধীরে বহু ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে জমির উর্বরা ক্ষমতা।’

স্থানীয় ডালিয়া ও হাসনা নামের দুই বৃদ্ধা বলেন, ‘রান্নার সময়, শোবার সময়, গরম ভাত খাবার সময় এমনকি ঘুমের ভেতর, এভাবেই ২৪ ঘন্টা জুড়ে মনে হয় কেমিক্যাল খাচ্ছি। এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়। দেখারও কি কেউ নেই!’

কারখানার মালিক শাহীন হোসেন খান অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠান চালানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর অনুমতি নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি। চেয়ারম্যানের এক সার্টিফিকেট নিয়ে দুই জায়গায় চালালে সমস্যা কি? কেমিক্যাল দিয়ে কোম্পানি চালাতে সরকারি অনুমোদন লাগে জানতাম না।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি জায়গা মাছ চাষের জন্য লিজ নেওয়া আছে ওখানে একটি কারখানা আছে তবে এর জন্য আলাদা সার্টিফিকেট লাগলে জোগাড় করব।’

তিনি বলেন, ‘শত্রুতাবশত আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। আমার কারখানা চালানোর জন্য এলাকায় তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না।’

এ ব্যাপারে পাবনা জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সুজানগর সাতবাড়ীয়া এলাকার কাচুরী গ্রামে অবৈধভাবে কেমিক্যাল দিয়ে কারখানা চালানোর অভিযোগটি পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’




রাইজিংবিডি/ পাবনা/৯ মে ২০১৯/শাহীন রহমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়