ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

খুলনায় ঈদের ফিরতি যাত্রায় বাসের টিকিটে নৈরাজ্য!

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ৮ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খুলনায় ঈদের ফিরতি যাত্রায় বাসের টিকিটে নৈরাজ্য!

খুলনার বিভিন্ন বাস কাউন্টার, টার্মিনালের পরিবর্তে সড়কেই গাড়ি রেখে যাত্রী তোলা হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা: পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে ফিরতি যাত্রায় চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে খুলনাঞ্চলের যাত্রীদের।

ঈদের সুযোগে খুলনায় বাসের টিকিটে এক ধরণের নৈরাজ্য চলছে। একদিকে অতিরিক্ত মূল্য, অন্যদিকে টিকিটের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে যাত্রীদের হয়রানি করা হচ্ছে। ফলে ঈদ ফেরত যাত্রীদের মধ্যে দেখা গেছে চরম ক্ষোভ।

খুলনা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরমুখী মানুষ বাসের টিকিট সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাস কাউন্টারগুলোতে গিয়ে ধর্ণা ধরেও টিকিট পাচ্ছেন না অনেকে। তাছাড়া ৪শ’ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকায়। ৮শ’ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকায়।

ঈদের আগেই জেলা প্রশাসন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে নগরীর বেশ কয়েকটি বাস কাউন্টারে অনিয়মের অভিযোগে জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে গত ২৬ মে টিকিটের মূল্য তালিকা না থাকায় ফাল্গুনী, বনফুল ও ইমাদ কাউন্টারকে দুই হাজার টাকা করে জরিমানা করে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ২৯ মে একই অভিযোগে মেট্রোপলিটন কাউন্টারকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ঢাকার ফিরতি টিকিট সংগ্রহ করতে আসা নগরীর নূরনগর এলাকার কলেজছাত্র ইসতিয়াক ৯ জুনের এসি বাসের দু’টি টিকিট সংগ্রহের চেষ্টায় এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ছুটছেন। কিন্তু তিনি টিকিট পাচ্ছেন না। তিনি জানান, টিকিট সংগ্রহের জন্য সোনাডাঙ্গা, শিববাড়ি ও রয়েলের মোড়ে সকল বাস কাউন্টার ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু কোথায় ওই দিনের টিকিট পাননি।

ঈদের ছুটি শেষে টিকিট প্রতি ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা হারে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে নগরীর রয়্যাল মোড়, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল ও শিববাড়ি মোড়স্থ বিভিন্ন বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতারা জানান, মালিকপক্ষের নির্দেশেই টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর বেশি কিছু তারা জানেন না।

ঈগল পরিবহণের শিববাড়ি মোড় কাউন্টার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম খন্দকার দারা জানান, ঈদের আগে এসি টিকিটের দাম রাখা হয়েছে ১২শ’ টাকা। তবে অগ্রিম টিকিটের দাম রাখা হচ্ছে ১৬শ’ টাকা। চেয়ার কোচের ভাড়া ৫৫০ টাকার পরিবর্তে অগ্রিম টিকিটের মূল্য রাখা হচ্ছে ৬২০ টাকা। যা সরকারি রেট অনুযায়ী ঠিক আছে বলে তিনি দাবি করেন।

গ্রীন লাইন পরিবহণের শিববাড়ি মোড় কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা শেখ জাহিদুর রহমান জানান, লঞ্চে পারাপার ৮শ’ টাকার স্থলে ৯শ’ টাকা রাখা হচ্ছে। তাদের কোম্পানি যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া রাখছে না।

সোহাগ পরিবহণের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জানান, তারা চেয়ার কোচের ভাড়া রাখছেন ৬১০ টাকা, আর এসি বাসের ভাড়া রাখছেন ১৩শ’ টাকা। তারা কোনো ভাড়া বৃদ্ধি করেননি দাবি করে বলেন, ‘অনেক পরিবহণ যাত্রী জিম্মি করে ভাড়া বৃদ্ধি করেছে।’

হানিফ পরিবহণের ম্যানেজার আবু সাহান চৌধুরী জানান, সরকারের নিয়ম অনুযায়ী আরিচা রুটে যাত্রী প্রতি ভাড়া আসে ৬২১ টাকা। তারা রাখছে ৬১৫ টাকা। তবে স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া রাখা হয় ৫৫০ টাকা করে। এসি বাসের ভাড়া ১২শ’ টাকার স্থলে ১৬শ’ টাকা রাখা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে টিকিটের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান শুরু হবে। প্রমাণ পেলে জেল-জরিমানা করবে ভ্রাম্যমাণ আদালত।’

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম বলেন, ‘বিআরটিএ নির্ধারিত টিকিটের মূল্যের থেকে বেশি টাকা নিলে তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

তাছাড়া ঈদ পরবর্তী অভিযান শুরু হবে বলেও জানান তিনি।



রাইজিংবিডি/ খুলনা/ ৮ জুন ২০১৯/ মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়