ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘মানসম্পন্ন সময়োপযোগী শিক্ষার বিকল্প নেই’

সাইফুল আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘মানসম্পন্ন সময়োপযোগী শিক্ষার বিকল্প নেই’

ডেস্ক রিপোর্ট : বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে মানসম্পন্ন ও সময়োপযোগী উচ্চশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং গবেষণার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী শক্তিই পারে সকল প্রতিকূলতা এবং প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে সভ্যতাকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে।’

শেখ হাসিনা রোববার সকালে তেজগাঁওস্থ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রদত্ত ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৫ ও ২০১৬’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

যুগোপযোগী উচ্চশিক্ষা মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য বলে এ সময় বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উদ্যোগে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ ২০১৫ ও ২০১৬ প্রদান অনুষ্ঠানে এ বছর ২৬৫ জন কৃতী শিক্ষার্থীকে এই পদকে ভূষিত করা হয়। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব অনুষদে সর্বোচ্চ নম্বর বা সিজিপিএ অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালের জন্য ১২৪ জন এবং ২০১৬ সালের জন্য ১৪১ শিক্ষার্থী এই পদক লাভ করেন।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।



ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এ ছাড়া পদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যত্বত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়া জাবিন লতা এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ অনুষ্ঠানে স্ব-স্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যগণ, সরকারের পদস্থ কমৃকর্তাবৃন্দ, ইউজিসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান, ইউজিসির বর্তমান এবং প্রাক্তন সদস্যবৃন্দ, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উপাচার্যগণ, শিক্ষাবিদ, স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ এবং ইউজিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক বিজয়ীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এতগুলো ছেলে-মেয়ে আমাদের কাছ থেকে স্বর্ণ পদক পেল অর্থাৎ কত মেধা আমাদের দেশে রয়েছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা পৃথিবীর অনেক দেশের থেকে মেধাবী বলে আমি বিশ্বাস করি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘শুধু এখানে মেধার বিকাশে সুযোগটা সৃষ্টি করে দেওয়ার দরকার। মেধা ও মনন চর্চার একটি সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া এবং সেটা করতে পারলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা যে, কত ভাল করতে পারে সেটা আমার জানা আছে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে ২৬৫ জনকে আমরা স্বর্ণপদক দিলাম। আমি সত্যই খুব আনন্দিত। আর ২০১৬ সালের বেলায় আমি লক্ষ্য করলাম মেয়েদের সংখ্যাটা বেশ বেড়ে গেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বলতেন একটি সমাজে নারী-পুরুষ সকলেরই সমান অধিকার থাকা উচিত, সবাইকেই সমান সুযোগ করে দিতে হবে। কাজেই আমরা সেটারই চেষ্টা করে যাচ্ছি।’



প্রধানমন্ত্রী এ সময় ছেলেদের পড়াশোনায় আরো মনযোগী হবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘শুধু লেখাপড়া নয়, খেলাধূলা এবং সংস্কৃতি চর্চা সবদিকেই প্রচেষ্টা থাকতে হবে। এজন্য সরকার প্রত্যেকটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম করে দেবে যেন সেখানে সারাবছর খেলাধুলা চলতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘সবাইতো চলে গেছে আমরা দুই বোনই বেঁচে আছি (তিনি ও শেখ রেহানা)। আমরা কখনই আমাদের সন্তানদের পড় পড় পড়- এভাবে বলি না, বরং বলি এটা তোমার পড়া এটা তোমাকে পড়তে হবে। নিজের গরজেই পড়তে হবে।’

দীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এই স্বাধীনতা যেন ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্যও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।

আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশে গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেট সুবিধা গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসেই আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। আমরা স্যাটেলাইট যুগেও চলে যাচ্ছি। অর্থাৎ আমাদের আকাশ থেকে একেবারে সাগরের তলদেশ (নেভীর জন্য সাবমেরিন) পর্যন্ত সব জায়গাতেই বাংলাদেশ বিচরণ করবে সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলে যাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই এই যে আমরা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করছি, সেনা-নৌ-বিমানবাহিনী থেকে শুরু করে প্রতিটি বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক করে গড়ে তুলছি, মেডিক্যাল থেকে শুরু করে বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি সেখানেও তো আমাদের ভবিষ্যতে শিক্ষক লাগবে, প্রযুক্তিবিদ লাগবে, ডিজিটাল বাংলাদেশের অনেক দক্ষ জনবল দরকার। সেজন্যই শিক্ষাটা আমাদের একান্তভাবে প্রয়োজন। এই যে বিপুল কর্মযজ্ঞ আমরা শুরু করেছি সেটা এগিয়ে নিয়ে যাবে আজকের প্রজন্ম।’

আজকের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই আগামীর কর্ণধার গড়ে উঠবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরাইতো আমাদের সোনার ছেলেমেয়ে, তোমরাই সোনার বাংলা গড়ে তুলবে। সেটাই আমরা আশা করি। কারণ, বাংলাদেশকে আমরা চাচ্ছি ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে। আর ২০৪১ সালে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। এই কাজটা করে দিতে হবে আজকের তোমরা যারা মেধাবী ছেলে-মেয়ে আছো তাদের।’

এ সময় জাতির পিতা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে স্বল্প আয়ের দেশকে যে পর্যায়ে রেখে যান সেখান থেকে এখন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে গ্রাজুয়েশন লাভ করতে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আর কেউ আগের মতো আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারবে না। কারণ, আমরা সেই জায়গাটায় পদার্পণের সক্ষমতা অর্জন করেছি। ইনশা আল্লাহ আগামী মার্চ মাসেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পাবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/এসএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ