ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘আলোচনার পর যে আইনটি হবে সেটি সবার গ্রহণযোগ্য হবে’

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৬, ২৩ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আলোচনার পর যে আইনটি হবে সেটি সবার গ্রহণযোগ্য হবে’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে বর্তমান আপত্তি নিয়ে সংসদীয় কমিটির সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হবে। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নিয়ে যে আইনটি হবে সেটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। আশা করি সেই আইনটায় কেউ ভীত হবে না।’

আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সোমবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আইনটি এখন যেখানে আছে, সেখানেই মানে সংসদীয় কমিটিতে এসব আলোচনা হতে পারে এবং সংসদীয় কমিটিতে এসব আলোচনা হলে আমার মনে হয় সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।

মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আপত্তিগুলো নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা হবে। এরপর আমরা যে আইনটি করতে পারব সেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সেই আইনটায় কেউ ভীত হবে না। এটাই হচ্ছে আমাদের আসল উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য এই আলোচনার মাধ্যমে সাধিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।

‘আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করি, সংবিধানে যে বাকস্বাধীনতার কথা বলা আছে, ফ্রিডম অব প্রেসের কথা বলা আছে, সেটায় আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বলেই এই আইনে যেখানে কোনো সন্দেহ থাকে তা দূর করার জন্য যে যে প্রচেষ্টা করা দরকার আমরা সেই সেই প্রচেষ্টা করব’- বলেন আনিসুল হক।

এর আগে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সাংবাদিক নেতারা প্রেস কাউন্সিলে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় এটা যৌক্তিক। যৌক্তিক নিশ্চয়ই। আমি যেটা মনে করি সেটা হচ্ছে, কিছু কিছু ধারার ব্যাপারে আমাদের বক্তব্যও যদি শোনা হয়, সংসদীয় কমিটিতে দুই পক্ষের পারস্পরিক বক্তব্য দেওয়ার সময় ও সুযোগ তখন থাকবে। এতে অনেক কিছুই পরিষ্কার হবে। যে প্রস্তাবনা এসেছে, সেগুলোর সংশোধন ও পরিমার্জন কিছু হবে। তাই আমি মনে করি সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি বলেন, গতকাল এই সিদ্ধান্ত হয়েছে, মে মাসের শেষের দিকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি অ্যাটকো, বিএফইউজে ও সম্পাদক পরিষদ- সকলকে একটা মিটিংয়ে ডাকবেন।

বৈঠকে বিএফইউজের নেতারা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আপত্তি তুলে ধরে আইনমন্ত্রীর কাছে লিখিত মতামত হস্তান্তর করেন।

বিএফইউজে লিখিত বক্তব্যে খসড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ডিজিটাল এজেন্সি গঠন, বিটিআরসিকে অনুরোধ করার জন্য এজেন্সি গঠন, ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন, অপরাধ ও দণ্ড অধ্যায়ের ২১ ধারা (মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রচারণা), ২৫ ধারা (আক্রমণাত্মক, মিথ্যা ও ভীতি প্রদর্শন), ২৮ ধারা (ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত), ২৯ ধারা (মানহানি), ৩১ ধারা (আইন-শৃঙ্খলার অবনতি) ও ৩২ ধারা (গুপ্তচরবৃত্তি) নিয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে।

বিএফইউজের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক, কোষাধ্যক্ষ মধুসূধন মণ্ডল, সদস্য সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা প্রমুখ।

বৈঠক শেষে বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলছিলাম, বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের উদ্বেগের কথা জানাচ্ছিলাম। (আইন) মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের বলা হয়েছিল কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা থাকলে তা যদি আমরা তাদের কাছে জমা দেই তাহলে তা সংসদীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে তারা বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন।’

‘সেই প্রেক্ষিতে আমরা লিখিত মতামত আইনমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছি। সেখানে বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে আমাদের ১০টি পর্যবেক্ষণ ও একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা আছে। আমরা গতকাল একই প্রস্তাবনা মাননীয় স্পিকারের কাছে উপস্থাপন করেছি। মাননীয় স্পিকার বলেছেন, আইনমন্ত্রী হচ্ছেন যোগ্য ব্যক্তি, তার সঙ্গে যেন আমরা কথা বলি- উল্লেখ করেন মনজুরুল আহসান বুলবুল।

বিএফইউজে সভাপতি বলেন, আজকে আমরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললাম। তিনি আমাদের বলেছেন, এই প্রস্তাবনাগুলো যখন লিখিতভাবে পাওয়া গেল আরো দু’একটি সংগঠন থেকে পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে এটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনার সময় যদি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়, সেই বিস্তারিত আলোচনা করে নিশ্চয়ই একটা ভালো সুফল পাওয়া যাবে।’

মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বৈঠকে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে আমরা মন্ত্রীকে আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। সেই ধারাগুলো সংশোধনের জন্য আমরা যেমন দাবি জানিয়েছি, এর পাশাপাশি আমরা বলেছি আইনটি সংসদে পাস হওয়ার পর এটি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে একটি প্রাতিষ্ঠানিক সেফটিনেট সাংবাদিকদের জন্য, গণমাধ্যমের জন্য থাকা উচিত।’

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তাবনা হচ্ছে- আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে যখন ব্যাপক অপপ্রয়োগের অভিযোগ উঠে তখন সরকারের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয় যে, ৫৭ ধারা যদি সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের জন্য প্রয়োগ করা হয় তাহলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। সেই ধারণা থেকে আমরা একটা প্রস্তাবনা দিয়েছি যে, আইন গণমাধ্যম কর্মী বা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে হলে প্রাথমিকভাবে প্রেস কাউন্সিলে যাবে। প্রেস কাউন্সিলে একটা ছোট কমিটি থাকবে- যে কমিটিতে সম্পাদক পরিষদ থাকবে, যে কমিটিতে সাংবাদিক ইউনিয়ন থাকবে, যে কমিটিতে এমপি মহোদয় ও সরকারের প্রতিনিধি থাকবেন। তারা প্রাথমিকভাবে যাচাই করে দেখবেন আইনটি সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যায় কি-না।’

বিএফইউজের সভাপতি বলেন, ‘অন্তত প্রেস কাউন্সিলকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হলে সংস্থাটিও শক্তিশালী হবে, আমাদেরও একজন পুলিশ কর্মকর্তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না। আমরা মনে করি, আমাদের প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রেস কাউন্সিল সেক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।’

সম্পাদক পরিষদের মতো আপনাদেরও সংসদীয় কমিটিতে ডাকা হবে কিনা- জানতে চাইলে বিএফইউজে সভাপতি বলেন, আমাদের ডাকা হবে। মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকোকে সেখানে ডাকা হবে।

মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া এখন জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ এপ্রিল ২০১৮/নঈমুদ্দীন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়