ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ঝুঁকি থাকবে, তবুও এগিয়ে যেতে হবে

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ৩ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঝুঁকি থাকবে, তবুও এগিয়ে যেতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাংবাদিকতা পেশায় রয়ে গেছে কিছু সমস্যা, রয়েছে বাধা, ভয়-ভীতি। সবকিছু মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছেন সাংবাদিকরা। ঝুঁকি থাকবে, তবুও সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রার জন্য সাংবাদিকদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন দেশের প্রবীণ সাংবাদিকরা।

বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের আলোচনায় প্রবীণ সংবাদিকরা কিছু দাবি ও কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সমকাল পত্রিকার সম্পাদক গোলাম সরওয়ার, প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল প্রমুখ।

গোলাম সরওয়ার ৫৭ ধারার সমালোচনা করে বলেন, ৫৭ ধারার সবচেয়ে খারাপ দিক হলো, এ ধারায় কাউকে আটক করা হলে জামিন পাওয়া যাবে না। এছাড়া সাংবাদিক হত্যা অথবা সাংবাদিক নির্যাতনে দ্রুত বিচার আইনে বিচার করতে হবে বলে দাবি তোলেন তিনি।

দেশে আদালতের রায়ের ওপর সমালোচনা করে খবর প্রকাশ করা যাবে না- এটা বিশাল একটি বাধা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যসব দেশে আদালতের রায়ের পরে সেই রায় যৌক্তিক না হলে গণমাধ্যমে লেখালেখি হয়, কিন্তু এ দেশে তা করা যায় না, করলে আদালত অবমাননা হয়। কিন্তু এটা ভালো চর্চা নয়। আদালত আবমাননার আইনটি নতুন করে লেখার দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন, সাংবাদিকতায় ঝুঁকি থাকবে, তা মোকাবেলা করেই সাংবাদিকদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

মতিউর রহমান বলেন, ১৯৬২ সালে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের প্রথম দিনে মিছিলের স্লোগানে অনেক দাবির মধ্যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চাওয়ার দাবিটিও ছিল। আর ২০১৭ সালে এসেও সে বিষয়ে আজকের আলোচনা। ১৯৭০ সালে তিনি সাপ্তাহিক একতা পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের কারণে একতা পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। ’৭২ সালে একতা আবার চালু হয়। ১৯৭৫ সালে সে সময়ে তখনকার রাজনীতির কারণে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার ফলে একতা বন্ধ হয়ে যায়। ’৭৮ সালে একতা আবার চালু হয়। ’৮৬ সালে এরশাদের নির্বাচনের পরের দিন বন্ধ হয়ে যায়। ছয় মাস পরে সংবাদপত্রটি আবার চালু করা হয়। ’৯২-৯৩ সালে বিএনপি সরকারের আমলে আমাদের ভোরের কাগজের সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০০ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রথম আলোয় সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৭-০৮ সালেও সংবাদপত্রের ওপর ভয়-ভীতি ও চাপ ছিল।

তিনি বলেন, ‘আজকে ২০১৭। আমরা কি সবাই জোরগলায় বলতে পারব যে, আমাদের সেসব সমস্যা পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। আমি বলতে চাই, সমস্যাগুলো থেকে আমরা এখনো মুক্তি পাইনি। আমাদের জন্য সমস্যা আছে, চাপ আছে, কিছুটা ভয়ভীতিও আছে।’

ইকবাল সোবহান বলেন, গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল এবং মুক্ত রাখার জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে আইন হবে তা যেন গণমাধ্যম বিকাশে সহায়ক হয়। সাংবাদিকতাকে যদি আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে এগিয়ে রাখতে চাই তাহলে আমাদের দরকার একটি শক্তিশালী, নিরপেক্ষ ও সাহসী এডিটরিয়াল ইনস্টিটিউশন। এছাড়া দরকার একটি ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক ইউনিয়ন।

মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, পত্রিকার মালিকরা হঠাৎ করেই বিনা নোটিশে বয়স্ক সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করে, যা খুবই অমানবিক। কারণ বয়স্কদের বেতন বেশি দিতে হয় বলে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু তাদের কোনো পেনশন সুবিধা নেই, ওয়েজবোর্ড দেওয়া হয় না। সাংবাদিকদের জন্য এই সুযোগ-সুবিধা কেন দেওয়া হবে না? যেসব সাংবাদিক তরুণ বয়সে পত্রিকার জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছে, প্রবীণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়, কিন্তু তাদের তো অবসর সুবিধা দিতে হবে।

বর্তমানে মালিকরা পত্রিকার ওপর প্রচুর প্রভাব বিস্তার করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রোফেশনাল সাংবাদিকরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। মালিকদের যদি গুণগত মান থাকে তাহলে পত্রিকাও গুণগত মানের হবে। কিন্তু এখন যারা সাংবাদিকতা বোঝেন না তাদেরকেও দেখা যায় সম্পাদকের স্থানে, মালিকের স্থানে। সাংবাদিকদের নিয়োগে যেমন সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় তেমনি কেউ কোনো গণমাধ্যমের মালিক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন কিনা তাও যাচাই করতে তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ রাখতে হবে। বিচারহীনতা থেকে বের না হতে পারলে, জবাবদিহিতা না থাকলে দেশে গণমাধ্যমের কোনো উন্নয়ন হবে না, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ মে ২০১৭/সাওন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়