ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

সবার অধিকার নিশ্চিতের তাগিদ

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৭, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সবার অধিকার নিশ্চিতের তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সংবিধান অনুযায়ী জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল।

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের দ্বিতীয় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তাগিদ দেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ক্রমেই যেন সংকুচিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন বিশ্বাসের মানুষ মনে করছেন, বাংলাদেশ তাদের সমান অধিকার দিচ্ছে না, তাদের মর্যাদার হানি হচ্ছে। কিন্ত প্রতিটি নাগরিক সমান অধিকারের অংশীদার। এটা সংবিধানে বলা আছে।

নারী অধিকার সম্পর্কে সুলতানা কামাল বলেন, ‘নারীরা অধিকারের আদায়ে আন্দোলন করলে তা রুখে দেওয়া খুবই কঠিন হয়ে যায়। নারীরা সচেতন হলে সেই সংগ্রাম, আন্দোলন অনেক বেশি বেগবান হয়। তিনি নারীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

সম্মেলন উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়া সাহা, সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি জয়ন্তী রায়।

বার্ষিক প্রতবেদনে বিগত তিন বছরে সংখ্যালঘু (ধর্মীয় ও জাতিগত) জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জরিপ তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১০০৪টি, ২০১৬ সালে ১৪৭১টি ও ২০১৫ সালে ২৬২টি মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটে। তবে সার্বিক দিক থেকে প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আগের তুলনায় সংখ্যা লঘুদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কিছুটা কমে এসেছে।

জরিপ পর্যালোচনা করে দেখে যায়, ২০১৬ সালের তুলনায় সংখ্যালঘু হত্যা বেড়েছে। ২০১৬ সালে ৭১টি হত্যার ঘটনা ঘটে। ২০১৭ সালে ঘটেছে ৮২টি।

বসতঘর/সম্পত্তি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা/ ভাঙচুর/ অগ্নসংযোগ/ লুটপাট/ ডাকাতির ঘটনা কমেছে। ২০১৬ সালে ৮৭৫টি ঘটনা ঘটে, ২০১৭ সালে ৩২৫টি।

গণধর্ষণ-ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা এই রকম। ২০১৬ সালে ১৫টি গণধর্ষণ, ১৭টি ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা ১৩টি। ২০১৭ সালে ১৫টি গণধর্ষণ, ১৮টি ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা ১১টি।

কমেছে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা। ২০১৬ সালে ২৫৯টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে, ২০১৭ সালে ২২৮টি। মন্দিরের হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাও কমেছে। ২০১৬ সালে ৭৭টি ২০১৭ সালে ২৮টি ঘটনা ঘটে।

বসতঘর/সম্পত্তি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা/ ভাঙচুর/ অগ্নিসংযোগ/ লুটপাট/ ডাকাতির ঘটনা কমেছে। ২০১৬ সালে ২২৩৮টি ঘটনা, ২০১৭ সালে ঘটে ৩২৫টি ঘটনা। এছাড়া জখম/ আহত/শারীরিক নির্যাতন/ হামলার শিকারের ঘটনাও কমেছে। ২০১৬ সালে ৮৭৫টি, ২০১৭ সালে ৪৪৩টি ঘটনা ঘটে।

২০১৭ সালে শ্মশান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি দখলের ঘটনা ঘটে ২৭টি। ২০১৬ সালে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। কমেছে গরুর মাংস খাওয়ানো ঘটনা। ২০১৬ সালে ৩টি ঘটলেও ২০১৭ সালে ঘটে ১টি ঘটনা।

বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সংখ্যালঘু নির্যাতনের এই পরিসংখ্যান বার্ষিক প্রতিবেদন আকারে প্রতিবছর বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদন তৈরিতে বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সর্বতোভাবে সহযোগিতা করে আসছেন।

সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল বলেন, গত তিন বছরে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের ওপর নানা ধরনের অত্যাচার করা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে পাঁচটি এমন ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে, গত বছর ১ হাজার ৪টি ঘটনা ঘটে। ঘটনাগুলোর নৃশংসতা অত্যন্ত বর্বরোচিত।

তিনি আরো বলেন, প্রতিটি ঘটনায় দেখা যায়, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, ঘটনাগুলোর কোনো রকমের কার্যকর বিচার এখনো হয়নি। যদি বিচার হতো, কোনো দীর্ঘসূত্রতা না থাকত, যদি সত্যিকার অর্থে অপরাধীদের চিহ্নিত করে যথাসময়ে শাস্তির আওতায় আনা হতো, তাহলে এই ঘটনাগুলো এত ব্যাপক হারে ছড়িয়ে যেতে পারত না।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জানুয়ারি ২০১৭/সাওন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়